গণমাধ্যম

কাজের মাঝেই ঈদ খুঁজে নিতে হয় গণমাধ্যমকর্মীদের

কাজের মাঝেই ঈদ খুঁজে নিতে হয় গণমাধ্যমকর্মীদের

সবাই যখন ঈদের নামাজে ব্যস্ত, তখন গণমাধ্যমকর্মীরা বুম-কামেরা নিয়ে থাকেন সক্রিয়। পরিবারের সঙ্গে অন্যদের সেমাই-মিষ্টি খাওয়ার মুহূর্তে তাদের চলে সংবাদ তৈরি ও পরিবেশন। একইভাবে মানুষ যখন বিনোদনকেন্দ্রে তখনও গণমাধ্যমকর্মীরা সেটির সুন্দর উপস্থাপনা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এই ব্যস্ততার মাঝে কেমন কাটছে গণমাধ্যমকর্মীদের ঈদ?

Advertisement

জবাবে তারা বলছেন, ‘কাজের মাঝেই আমাদের ঈদের আনন্দ খুঁজে নিতে হয়। মানুষের ভালোলাগার খবর জাতির সামনে তুলে ধরতে পারাটাও কম আনন্দের না।’

ছুটি না পাওয়ায় সিনিয়র নিউজরুম এডিটর সাঈদ আল হাসান শিমুল ঈদ করেছেন ঢাকাতেই

একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি শাহনাজ শারমীন জাগো নিউজকে বলেন, ‘পরিবার ছাড়া ঈদ করতে করতে এখন এটি অনেকটা স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে এসেছে। পরিবারের সবাই জেনে গেছে এক ঈদ অফিস করবো, আরেক ঈদে তাদের সাথে থাকবো। এই সময়টা অফিস পরিবার হয়ে ওঠে। একটা জিনিস খুব মন খারাপের কারণ হয়। সবার জন্য যারা খবর সংগ্রহ করে, যারা সবার আনন্দ বেদনা হতাশার কথা বলে, ঈদের আগের দিন পর্যন্ত শ্রমিকদের বেতন আদায় না হওয়া নিয়ে যারা সংবাদ পরিবেশন করে, সেই গণমাধ্যমকর্মীদের পাওয়া-না পাওয়া নিয়ে কেউ কথা বলে না। তাদের ঘরে ঈদ আসে কি?’

Advertisement

পরিবারের সবাই জেনে গেছে এক ঈদ অফিস করবো, আরেক ঈদে তাদের সাথে থাকবো। এই সময়টা অফিস পরিবার হয়ে ওঠে। একটা জিনিস খুব মন খারাপের কারণ হয়। সবার জন্য যারা খবর সংগ্রহ করে, যারা সবার আনন্দ বেদনা হতাশার কথা বলে, ঈদের আগের দিন পর্যন্ত শ্রমিকদের বেতন আদায় না হওয়া নিয়ে যারা সংবাদ পরিবেশন করে, সেই গণমাধ্যমকর্মীদের পাওয়া-না পাওয়া নিয়ে কেউ কথা বলে না।

চ্যানেল টোয়েন্টিফোর টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক শফিকুল ইসলাম সবুজ জাগো নিউজকে বলেন, যারা নতুন গণমাধ্যমে আসেন বা ক্যারিয়ারে যারা নতুন, তাদের জন্য ঈদে কাজ করা একটু কষ্টদায়ক হয়। কারণ অভ্যস্ততার বিষয় আছে। ঈদে সবকিছু বন্ধ থাকে। তিনি যখন অফিস করেন, মনে এক ধরনের শূন্যতা তৈরি হয় যে, পিতা-মাতা আত্মীয় স্বজন ছাড়া ঈদ করছি, অফিস করছি। যারা দীর্ঘদিন ধরেই গণমাধ্যমে কাজ করেন তাদের অভিজ্ঞতা ভিন্ন। তারা অ্যাডজাস্ট হয়ে গেছেন কিংবা মানিয়ে নিয়েছেন। তারা মনে করেন এটাই তাদের নিয়তি। কারণ সেবাধর্মী যত পেশা; চিকিৎসক, ফায়ারকর্মী, সাংবাদিক, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, বিদ্যুৎকর্মী; তাদের কাজের ন্যাচারটাই এমন। দীর্ঘ সময় সাংবাদিকতায় থাকার ফলে মানসপট এভাবেই তৈরি হয়ে যায়।

আরও পড়ুন যেমন কাটে খবরের ফেরিওয়ালাদের ঈদ সরকারি ছুটির সঙ্গে মিল রেখে গণমাধ্যমের বিষয়ে গেজেট জারির আবেদন

তিনি বলেন, আমার অভিজ্ঞতা হলো- ভোরে ঘুম থেকে উঠে ঈদের মাঠে গেছি। যেহেতু টেলিভিশনে কাজ করি। আমাদের টানা ছবি নিতে হয়। ঘণ্টায় ঘণ্টায় লাইভ দিতে হয়। আমি আনন্দটা মিস করতে চাইনি। আমি আমার সঙ্গে ছেলে ও ছোটভাইকে নিয়ে গেছি। একসঙ্গে নতুন পাঞ্জাবি পরে ঈদগাহে গেছি। সেখানে একসঙ্গে নামাজ পড়েছি। নামাজের ফাঁকে ফাঁকে লাইভ দিয়েছি। একসঙ্গে ঈদআনন্দ মিছিলে অংশ নিয়েছি। সেখান থেকে তারা আমার থেকে বিদায় নিয়েছে, বাসায় চলে গেছে। আমি অফিসে চলে গেছি। রিপোর্ট তৈরি করেছি। পরে বাসায় চলে আসলাম। এভাবেই অভিজ্ঞরা মানিয়ে নেন।

এবার ঈদ ঢাকাতেই করছেন শাহনাজ শারমীন

Advertisement

যমুনা টেলিভিশনের রিপোর্টার আশিক মাহমুদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঈদ আমাদের আনন্দের উপলক্ষ বয়ে আনে। কিন্তু গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য সুযোগ আমাদের খুব একটা হয়না। প্রতিবছরই কাজের মধ্যেই আমাদের ঈদের আনন্দ খুঁজে নিতে হয়। তবে, মানুষের ভালোলাগার খবর জাতির সামনে তুলে ধরতে পারাটাও কম আনন্দের না।’

যারা নতুন গণমাধ্যমে আসেন বা ক্যারিয়ারে যারা নতুন, তাদের জন্য ঈদে কাজ করা একটু কষ্টদায়ক হয়। কারণ অভ্যস্ততার বিষয় আছে। ঈদে সবকিছু বন্ধ থাকে। তিনি যখন অফিস করেন, মনে এক ধরনের শূন্যতা তৈরি হয় যে, পিতা-মাতা আত্মীয় স্বজন ছাড়া ঈদ করছি, অফিসে করছি।

বাংলানিউজের সিনিয়র নিউজরুম এডিটর সাঈদ আল হাসান শিমুল জাগো নিউজকে বলেন, বিগত ঈদগুলোর চেয়ে আমার এবারের ঈদ বাড়তি আনন্দের। আর এই বাড়তি আনন্দ যোগ করেছে আমার কর্মস্থল। বেতন ও বোনাস পেয়েছি ১০ রমজানেই। চাঁদরাতে পেলাম আকর্ষণীয় এক উপহার, পাঞ্জাবি। সহকর্মীরাও পাঞ্জাবি উপহার পেয়েছেন। আর উপহারের পাঞ্জাবি পরে ঈদের দিন অফিসে এসেছি। কাজের ফাঁকে ফাঁকে ফটোসেশন হয়েছে। সিনিয়র-জুনিয়র ও অফিস স্টাফ সবাই কোলাকুলি করেছি। নারী সহকর্মীরা বাসা থেকে খাবার নিয়ে এসেছেন।

ঢাকায় ঈদে এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছেন আশিক মাহমুদ

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের স্টাফ রিপোর্টার শেখ আবু তালেব জাগো নিউজকে বলেন, অন্য দিনে অ্যাসাইনমেন্ট কাভার করতে যে সময়ে ঘর থেকে বের হই, আজকে আরেকটু আগে বের হতে হয়। খুব ভোরে উঠেই ঈদের নামাজের প্রস্তুতি নিয়ে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে যাই। আজকে খবরের চাপ একটু বেশি ছিল, প্রধান উপদেষ্টার আসার পর ময়দানে কেমন যেন ভিন্ন একটু বার্তা গেল। এই নিউজ লিখতে গিয়ে নামাজ আদায় করা হয়নি। পরে বায়তুল মোকাররমে গিয়ে ১০টার জামাতে অংশ নেই।

তিনি বলেন, দুই স্থানে সাধারণ মানুষের ঈদ ভাবনাগুলো নোট আকারে নিতে হয়। বায়তুল মোকাররমে শেষ জামাতের খবর সংগ্রহ করে অফিসের উদ্দেশ্য যাই। তারপর সংবাদগুলোর পূর্ণাঙ্গ বিবরণ দিয়ে লিখতে হয়। ঈদের দিনেও খবর লেখা অনেকের কাছেই অবাক করার মতো। আমার সঙ্গে ঈদ করতে ছোটো ভাই এসেছে ঢাকায়। তাকেও সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলাম।

সাংবাদিক শেখ আবু তালেবও এবার ঈদ করেছেন ঢাকায় তিনি আরও বলেন, এসবের মধ্যেই বন্ধু, শুভাকাঙ্ক্ষী, পরিচিতদের সঙ্গে মোবাইলের ক্ষুদে বার্তায় ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করি। কাজের চাপে কারো সঙ্গে ফোনে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

সরকারপ্রধানের জাতীয় ঈদগাহে আসা উপলক্ষে নিরাপত্তা নিয়ে অতীতে যেভাবে বাড়াবাড়ি করা হতো এবার তেমনটা হয়নি জানিয়ে শেখ আবু তালেব বলেন, এবার কোনো বাড়াবাড়ি হয়নি। যে যার মতো এসেছেন, চলে গেছেন। নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি ছিল না। মানুষ স্বাভাবিকভাবেই সবকিছু করতে পেরেছেন। আমরাও চাই ঈদের আয়োজনটা স্বতঃস্ফূর্ত হোক।

এসইউজে/এসএইচএস/এএসএম