রাজনীতি

ঈদ কেন্দ্র করে নির্বাচনী প্রস্তুতি সারছেন এনসিপি নেতারা

ঈদ কেন্দ্র করে নির্বাচনী প্রস্তুতি সারছেন এনসিপি নেতারা

জুলাই আন্দোলনের চেতনাপ্রসূত নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তারুণ্যনির্ভর এ দল গঠনের পরপরই শুরু হয় রোজা। রমজানজুড়ে দলটির নেতাকর্মীরা ইফতার মাহফিলকেন্দ্রিক তৎপরতায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। পাশাপাশি ঈদ কেন্দ্র করে নিজ নিজ এলাকায় নির্বাচনী জনসংযোগে ব্যস্ত।

Advertisement

দলটির অধিকাংশ নেতা নিজ নিজ এলাকায় ঈদ উদযাপন করতে এরই মধ্যে বাড়ি পৌঁছেছেন। ঈদে এলাকাবাসীও যে যেখানেই কর্মসূত্রে থাকেন না কেন নিজ বাড়িতে ফেরার চেষ্টা করেন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে নির্বাচনী প্রচারণার সূচনা ও জনসংযোগ সারছেন এনসিপি নেতারা। এরই মধ্যে কিছু নেতার শোডাউন নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়েছে। কারও কারও পথসভায় হামলার ঘটনাও ঘটেছে। এসব বিষয় মাথায় রেখে দলের ইমেজ ঠিক রাখতে কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। যদিও এই গণসংযোগ একান্ত ব্যক্তিগত বলছেন নেতারা।

এনপিসি সূত্র জানায়, প্রত্যেক নেতার সংসদীয় আসনে জনসংযোগ বাড়ানো, শ্রমিক, দিনমজুরদের মনের কথা শোনা, তারুণ্যকে টার্গেট করে ভোটব্যাংক বাড়ানো, এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে হেঁটে কর্মসূচি পালন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেখা করা, কথা বলার মতো কার্যক্রম চালাতে বলা হয়েছে দলের পক্ষ থেকে।

আমাদের প্রত্যেকে নিজ নিজ এলাকায় জনসংযোগ করছেন। আমরা মানুষের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করছি। সাধারণ মানুষ কী চায় সেসব জানতে চাচ্ছি। এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটিতে যারা ছিল তাদের নিয়ে ইফতার এবং জনসংযোগ করছি।-এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আতিক মুজাহিদ

Advertisement

সূত্র জানায়, দলীয় নির্দেশনায় এমনভাবে জনসংযোগ কার্যক্রম চালাতে বলা হয়েছে যাতে আর্থিক উৎস নিয়ে বিতর্ক তৈরি না হয়। যতটা সম্ভব কম অর্থ খরচ করে সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এসব কর্মসূচি পালন করতে বলা হয়েছে। কেননা দল গঠনের পর এটিই মোক্ষম সময় জনসংযোগ কার্যক্রমকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নেওয়ার। এছাড়া কর্মসূচিগুলো এমনভাবে পালন করতে বলা হয়েছে যাতে সাধারণ মানুষ দলটির প্রতি আকৃষ্ট হয়।

কে কোন আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী

দলটির একাধিক সূত্র জানায়, জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ঢাকা-১১ (রামপুরা-বনশ্রী) আসন থেকে নির্বাচন করবেন।

আরও পড়ুন দলীয় নেতাদের ফেসবুক পোস্ট ঘিরে এনসিপিতে ‘অস্বস্তি’ ঈদের পরেই আসছে এনসিপির ‘রাজনৈতিক এজেন্ডা’ বিশাল গাড়িবহর নিয়ে পঞ্চগড়ে সারজিস আলমের শোডাউন শতাধিক ভ্যানবহর নিয়ে এলাকায় ঢুকলেন আখতার হোসেন

এছাড়া সদস্য সচিব আখতার হোসেন রংপুর-৪, যুগ্ম সদস্য সচিব আকরাম হুসেইন ঢাকা-১৩, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম পঞ্চগড়-১, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ কুমিল্লা-৪, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ভোলা-১, মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী চাঁদপুর-৫, সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ নোয়াখালী-৬, যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম কুষ্টিয়া-১, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা ঢাকা-১৭, যুগ্ম সদস্য সচিব মোল্ল্যা ফারুক এহসান চুয়াডাঙ্গা-১, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব ঢাকা-১৪, যুগ্ম সমন্বয়কারী আরিফুর রহমান তুহিন ঝালকাঠি-১, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক এস এম শাহরিয়ার ঢাকা-৫, যুগ্ম আহ্বায়ক অনিক রায় সুনামগঞ্জ-২, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ডা. মাহমুদা মিতু বরিশাল-৫, যুগ্ম আহ্বায়ক মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন পটুয়াখালী-২, যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ উদ্দীন মাহাদী ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২, যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আতিক মুজাহিদ কুড়িগ্রাম-২ আসন থেকে নির্বাচন করবেন।

দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী এরই মধ্যে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করছেন। ঈদের আগে এসব নেতার অনেকে জনসংযোগ শুরু করেছেন। বেশ কয়েকজন নেতা ব্যস্ত সময় পার করছেন এলাকায়। দিন-রাত এক করে জনসংযোগে ব্যস্ত তারা। কেউ কেউ ইফতার মাহফিল ও গ্রামে গ্রামে ঘুরে জনসংযোগ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

Advertisement

সারজিস আলমের গাড়িবহর ও সরকারি দপ্তরে মিটিং নিয়ে সমালোচনা

এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের নিজ জেলা পঞ্চগড়ে শোডাউন ও জনসংযোগ রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। শতাধিক গাড়িবহরের আর্থিক উৎস নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। সারজিস আলমকে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে নিজ দলের নেতাদের কাছেও।

গত ২৫ মার্চ এক অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বলেন, ‘যারা ১০০ গাড়ি নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় যায়, তারা কী করবে, সেটা আমরা ভালো বুঝি।’

যারা নিজ নিজ এলাকায় জনসংযোগ করছেন এটা তাদের ব্যক্তিগত। তারা সাধারণ মানুষের কথা শুনছেন, নিজেকে ভালোভাবে এলাকায় পরিচিত করে তুলছেন। ঈদের পরে আমাদের সদস্য ফরম পূরণ শুরু হবে। তখন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আমাদের সঙ্গে সাংগঠনিকভাবে যুক্ত হবেন।- জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন

এরপর সারজিস আলম আটোয়ারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে উপজেলার অন্য সরকারি দপ্তরের প্রধানদের ডেকে সম্মেলনকক্ষে একটি বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে বের হওয়ার পর আটোয়ারী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মতিউর রহমানের সঙ্গে সারজিসের বাগবিতণ্ডা হয়। অফিস চলাকালীন মিটিং করা নিয়ে তাদের মধ্যে বচসা হয় বলে জানা যায়। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে তিনি আরেক দফা সমালোচনার মুখে পড়েন।

আব্দুল হান্নান মাসউদের ওপর হামলা

গত ২৪ মার্চ রাতে নোয়াখালীর জাহাজমারা এলাকায় জনসংযোগের সময় এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদের ওপর হামলা হয়। বিএনপি নেতাকর্মীরা এ হামলা করেছেন বলে আব্দুল হান্নান মাসউদ অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় বাংলামোটরে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ করেন দলটির নেতাকর্মীরা।

শতাধিক ভ্যানবহরে আখতার হোসেনের গণসংযোগ

সারজিস আলমের গাড়িবহর নিয়ে সমালোচনার পর ২৭ মার্চ রংপুরের সাতমাথা থেকে শতাধিক ব্যাটারিচালিত ভ্যান নিয়ে পীরগাছা ও কাউনিয়ার বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন আখতার হোসেন। সন্ধ্যায় কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর বাজারের কারবালা মাঠে আয়োজিত ইফতার ও দোয়া মাহফিলে যোগ দেন। এসময় এনসিপির রংপুরের সংগঠক আলমগীর নয়ন, আরিফুলসহ জেলা, মহানগর ও বিভাগীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয় নির্বাচন ও এনসিপির জনসংযোগ বিষয়ে দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আতিক মুজাহিদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেকে নিজ নিজ এলাকায় জনসংযোগ করছেন। আমরা মানুষের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করছি। সাধারণ মানুষ কী চায় সেসব জানতে চাচ্ছি। এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটিতে যারা ছিল তাদের নিয়ে ইফতার এবং জনসংযোগ করছি।’

ড. আতিক বলেন, ‘আমরা ঈদের পরে দলের সাংগঠনিক কাঠামো পুরোদমে শুরু করবো। জেলা-উপজেলায় কমিটি দেওয়া হবে। সেসব বিষয়েও কাজ হচ্ছে।’

জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘যারা নিজ নিজ এলাকায় জনসংযোগ করছেন এটা তাদের ব্যক্তিগত। তারা সাধারণ মানুষের কথা শুনছেন, নিজেকে ভালোভাবে এলাকায় পরিচিত করে তুলছেন। ঈদের পরে আমাদের সদস্য ফরম পূরণ শুরু হবে। তখন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আমাদের সঙ্গে সাংগঠনিকভাবে যুক্ত হবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনের সময় কে কোন আসন থেকে নির্বাচন করবেন সেটি দলীয় সিদ্ধান্তের বিষয়। এটি এমন নয় যে, যেখানে চাইছেন তাকে সেখানে মনোনয়ন দেওয়া হবে। এটি নির্বাচনের সময় সিদ্ধান্ত হবে। তবে নেতারা এখনকার প্রচারণা ব্যক্তিগতভাবেই করছেন।’

এনএস/এএসএ/এএসএম