‘মাঝে চার-পাঁচদিন মানুষের খুব চাপ আছিল। গতকাল শুক্রবারও ভালো কাস্টমার আইছিল। আইজকা দেহেন একেবারে ফাঁকা। বেচাকেনা এক্কালে কুইমা গেছে। মার্কেটে ঈদের বেচাবিক্রি শ্যাষ। এহন হয়তো ফুটপাতে বিক্রি জমবো।’
Advertisement
কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর উত্তর-বাড্ডা এলাকার সবচেয়ে বড় মার্কেট সুবাস্তু নজর ভ্যালি শপিংমলের দোকানি শফিকুল ইসলাম। তার দোকানের নাম ‘জান্নাত ফ্যাশন’। পাঞ্জাবি, পাজামা, শার্ট, প্যান্ট, মেয়েদের থ্রি-পিস, ওড়না, শিশুদের ড্রেস বিক্রি করেন শফিকুল। তার সঙ্গে দোকানে রয়েছেন দুজন বিক্রয়কর্মী।
শনিবার (২৯ মার্চ) বিকেল ৫টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, শফিকুল ক্যাশ বাক্সের পাশে বসে ঝিমাচ্ছেন। আর দুই বিক্রয়কর্মী নিশান ও সবুজ গভীর মনোযোগ দিয়ে মোবাইলে রিলস-ভিডিও দেখছেন।
তারা জাগো নিউজকে জানান, সকাল ১০টা থেকে দোকান খোলা। বিকেল ৫টা পর্যন্ত হাতেগোনা কয়েকজন কাস্টমার এসেছিল। বিক্রি হয়েছে দুটি থ্রি-পিস ও শিশুদের এক সেট জামা।
Advertisement
শফিকুলের জান্নাত ফ্যাশনের পাশেই গেটাপ পাঞ্জাবি। সেখানেও অলস বসে আছে বিক্রয়কর্মী রিয়াদ। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘কয়েকদিন সকাল-দুপুর-বিকেল-রাত—সবসময় ভালো ক্রেতা আসছিল। বেচা-বিক্রিও ভালো হয়েছে। আজকে হঠাৎ একেবারে ডাউন। লোকজন কম। মনে হচ্ছে, আগেভাগে কেনাকাটা করে ছুটিতে সবাই দেশের বাড়ি চলে গেছেন।’
শুধু সুবাস্তু নজরভ্যালি শপিংমল নয়, যমুনা ফিউচার পার্কের বেশ কিছু দোকান, রাজধানীর বাড্ডার হল্যান্ড সেন্টার শপিং কমপ্লেক্স, বেপারি শপিং কমপ্লেক্স, লুৎফুন টাওয়ার শপিং সেন্টারসহ মেরুলবাড্ডা, মধ্যবাড্ডা, উত্তরবাড্ডা এবং বসুন্ধরা ও যমুনা এলাকার বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আউটলেট ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। তবে আড়ং, বাটাসহ কিছু ব্র্যান্ডের দোকানে চিরাচরিত ভিড় দেখা গেছে।
যমুনা ফিউচার পার্কের বাটার শোরুমের বিক্রয়কর্মী আলমাছ তালুকদার বলেন, ‘রমজানের মাঝামাঝি থেকে খুব ভিড় ছিল। গত সপ্তাহটা সবচেয়ে ভালো বিক্রি ছিল। এখন শেষ সময়ে অনেক আসছেন। তবে বিক্রি কম। অনেক জুতার সাইজ মিলছে না। ফলে পছন্দ হলেও সাইজ না থাকায় ক্রেতাদের ফিরে যেতে হচ্ছে। বিক্রি অনেকটা শেষ বলা যায়। তারপরও ক্রেতারা আসছেন, যা আছে- তার মধ্য থেকে পছন্দ হলে নিয়ে যাচ্ছেন।’
কিছুটা ভিন্নচিত্র আড়ংয়ে। সেখানে বরাবরের মতোই উপচে পড়া ভিড়। মানুষের চাপে পা ফেলা দায়! তবে বিক্রয়কর্মীরা জানান, আড়ংয়েও বিক্রির পরিমাণ কমে গেছে।
Advertisement
বিক্রয়কর্মী নাজনীন নেহা জাগো নিউজকে বলেন, ‘ক্রেতা আছে, দেখছেন তো কেমন ভিড়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পোশাক পছন্দ হলেও তা সাইজে মিলছে না। ফলে ক্রেতারা ফিরে যাচ্ছেন বেশি। আমাদের অনেক ড্রেসের সাইজ সোল্ড আউট (বিক্রি শেষ) হয়ে গেছে।’
মধ্যবাড্ডা বাজার গলির ঠিক উল্টো দিকে বেপারি শপিংমল। ৭ বছর আগে এ মার্কেট পুরোদমে চালু হলেও সবসময় বিক্রি কম থাকে। এবার রমজানের মাঝামাঝি থেকে ভালো ক্রেতা এসেছে এ মার্কেটে। শুক্রবার (২৮ মার্চ) পর্যন্ত ভালো বেচাবিক্রিও হয়েছে। দোকানি ও বিক্রেতারা খুব খুশি। তবে আজ থেকে আবারও এ মার্কেট ডাউন! এতে দুশ্চিন্তায় দোকানিরা।
‘নিউ ওয়ান মার্ক’ দোকানের মালিক মো. দবির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘অল্লাহর রহমতে এবার ভালো বেচাবিক্রি হয়েছে। ভাবছিলাম চাঁনরাত পর্যন্ত এমন চলবে। কিন্তু আজকে থেকে বিক্রি কমে গেছে। মার্কেটের কেনাকাটা মানুষ শেষ করে ফেলেছে। এখন মনে হয় আতর-টুপি, মেহেদি এগুলো কিনবে।’
উত্তরবাড্ডা এলাকায় নামি ব্র্যান্ড ‘ফিল’-এর বড়সড় এবং জমকালো শোরুম রয়েছে। সেখানে সন্ধ্যার পর গিয়ে দেখা যায়, হাতেগোনা ৩-৪ জন ক্রেতা। এ প্রতিবেদক শোরুমে ১০-১৫ মিনিট অবস্থানও করেন। এ সময়ে বেচাবিক্রি দূরের কথা। যারা দেখছিলেন, তারাও বেরিয়ে যান। প্রায় ৩৫-৪০ জন বিক্রয়কর্মী তখন নীরবে দাঁড়িয়ে। বাবুল নামে একজন বলেন, ‘ভাই, বিক্রি নেই। কমে গেছে। দুই-তিনদিন আগে এলে ভালো বেচাবিক্রি দেখতে পারতেন।’
জমজমাট ফুটপাত, হাঁকডাকে চলছে বিক্রিব্র্যান্ডগুলোর বিক্রয়কর্মী ও মার্কেটের বিভিন্ন দোকানিদের কথামতো বিকেলে ও সন্ধ্যায় ফুটপাতে ঘুরে ভালো বেচাবিক্রি হতে দেখা গেছে। উত্তরবাড্ডা থেকে রামপুরা বাজার পর্যন্ত ফুটপাত ঘুরে দেখা যায়, বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। সন্ধ্যার পর ভিড় বেড়ে গেছে। ফুটপাতে হাঁটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
উত্তরবাড্ডার ফুজি ট্রেড সেন্টারের নিচে ভ্যানে পাঞ্জাবি বিক্রি করছেন শিহাব ও আকিব। তারা দুই ভাই। প্রায় ৪৫০-৫০০ পাঞ্জাবি নিয়ে এসেছেন। একদর ৩০০ টাকা। তার দোকানে ভিড় লেগেই থাকছে। বিক্রিও ভালো। শিহাব বলেন, ‘এগুলো সব শোরুমেরই পোশাক। কোয়ালিটি নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় এগুলো বাদ পড়ে যায়। তখন আমরা কিনে আনি। কোনোটার হয়তো বোতাম ছেঁড়া, কোনোটার একটু দাগপড়া। কিন্তু কাপড় ও কোয়ালিটি ভালো। বিক্রিও হচ্ছে ভালো।’
সুবাস্তু নজর ভ্যালি শপিংমলের সামনে ভ্যানে শিশুদের হরেক রকমের ড্রেস বিক্রি করছেন রাজু নামে একজন দোকানি। বিক্রি কেমন জানতে চাইলে হাসতে হাসতে তিনি বলেন, ‘আল্লাহ দিলে ভালোই হচ্ছে। মার্কেটের চেয়ে খারাপ না।’ বিকেল থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কেমন বিক্রি হয়েছে প্রশ্ন করলে রাজু বলেন, ‘১৮০০-২০০০ টাকা বিক্রি করেছি। বিক্রি হইবো রাতে। আইজকা ১২টা পর্যন্ত আছি। কাল চাঁনরাত হলে একটা পর্যন্ত থাকমু।’
এএএইচ/এমএএইচ/জেআইএম