১৯৮তম ঈদুল ফিতরের জামাতের জন্য প্রস্তুত কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। মুসল্লিদের নিরাপত্তায় চার স্তরে কাজ করবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এবার আগের চেয়ে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মোতায়েন থাকবে ৫ প্লাটুন বিজিবি।
Advertisement
সকাল ১০টায় শুরু হবে ঈদুল ফিতরের জামাত। দীর্ঘ ১৫ বছর পর আবারও এই জামাতে ইমামতি করবেন কিশোরগঞ্জ শহরের বড় বাজার মসজিদের খতিব মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ। বিকল্প ইমাম হিসেবে থাকবেন হয়বতনগর এ. ইউ. কামিল মাদরাসার প্রভাষক মাওলানা জুবায়ের ইবনে আব্দুল হাই।
নিরাপত্তার স্বার্থে জামাতে টুপি ও জায়নামাজ এবং মোবাইল ছাড়া আর কিছুই সঙ্গে নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না।
শনিবার (২৯ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টায় শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের সার্বিক পরিস্থিতি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান, র্যাব-১৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি নাইমুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসান চৌধুরী।
Advertisement
জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান জানান, ঈদুল ফিতরের ১৯৮তম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ১০টায়। শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ। এবারের ঈদের জামাতে টুপি ও জায়নামাজ এবং মোবাইল ছাড়া আর কিছু সঙ্গে নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না।
নিরাপত্তার স্বার্থে মুসল্লিরা ছাতা নিয়ে মাঠে প্রবেশ করতে পারবেন না। ঈদগাহ মাঠে আগত মুসল্লিদের সুবিধার্থে ঈদের দিন কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ ও ভৈরব-কিশোরগঞ্জ রোডে শোলাকিয়া এক্সপ্রেস নামে দুটি স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসান চৌধুরী বলেন, ২০১৬ সাল থেকে আমরা সব সময় বাড়তি ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি। এবারও আগের চেয়ে বেশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে শোলাকিয়ায়। তাই আমরা কিছু বাড়তি আয়োজন করেছি।
তিনি আরও বলেন, এরমধ্যে ময়দানকে লক্ষ্য করে চার স্তরের বেশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ১ হাজার ১০০ পুলিশ সদস্য পোশাকে ও সাদা পোশাকে থাকবেন। বিশেষ নিরাপত্তার জন্য বিল্ডিংয়ের ছাদ স্পেশাল রুফটপের ব্যবস্থা থাকবে। প্রতিটি মানুষ যখন ঈদগাহ ময়দানে যাবেন পুলিশের চারটি স্থাপনা পেরিয়ে আসতে হবে। সেটি চেকপোস্ট হোক বা পিকেট। আবার কোথাও কোথাও পাঁচ থেকে ছয়টি স্থাপনা পেরিয়ে ময়দানে যেতে হবে। এখানে ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে ছয়টি। তার মধ্যে র্যাব ব্যবহার করবে দুটি আর চারটি পুলিশ ব্যবহার করবে। মাঠে চারটি ড্রোন ক্যামেরা থাকবে। এছাড়া পুরো মাঠ সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে।
Advertisement
পুলিশ সুপার জানান, ফায়ার সার্ভিস কাজ করবে। ছয়টি অ্যাম্বুলেন্সসহ মেডিকেল টিম থাকবে। পুলিশের কুইক রেসপন্স টিম থাকবে। সুইপিং করা হবে। বোম ডিসপোজাল টিম আসবে ঢাকা থেকে। এছাড়া মাঠের নিরাপত্তার জন্য পাঁচ প্লাটুন বিজিবি চাওয়া হয়েছে। আমরা কোনো হুমকি মনে করছি না।
ময়মনসিংহ র্যাব-১৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি নাইমুল ইসলাম জানান, স্নাইপার, ড্রোন ক্যামেরা, দুটি ওয়াচ টাওয়ার মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতে র্যাব সদস্য পোশাকে ও সাদা পোশাকে মোতায়েন থাকবে।
কিশোরগঞ্জ জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মাওলানা নাজমুল ইসলাম জানান, শোলাকিয়ায় ঈদুল ফিতরের নামাজ যাতে নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হয় তাই প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশ এবার সর্বোচ্চ মুসল্লি শোলাকিয়ার ঈদ জামাতে অংশগ্রহণ করবেন।
শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ও কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এরশাদ মিয়া বলেন, মাঠের রং করা থেকে শুরু করে মুসল্লিদের অজু-গোসলের সব ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য, এক নারী এবং এক জঙ্গিসহ চারজন নিহত হন। এ হামলায় পুলিশসহ ১৬ মুসল্লি আহত হন। কিন্তু তারপরও ভাটা পড়েনি এ ময়দানে ঈদের জামাতে মুসল্লিদের সমাগমে।
এসকে রাসেল/জেডএইচ/জেআইএম