জাতীয়

ঈদে নিরাপত্তা শঙ্কায় বেড়েছে তালা-সিন্দুক বিক্রি

ঈদে নিরাপত্তা শঙ্কায় বেড়েছে তালা-সিন্দুক বিক্রি

ঈদুল ফিতর দোরগোড়ায়। এরই মধ্যে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঢাকা ছেড়েছেন বহু মানুষ। চলমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে সবাই কমবেশি এবার একটু বেশি নিরাপত্তা শঙ্কায়। ঘরের মূল্যবান জিনিস সুরক্ষিত রাখতে সিন্দুক, ডিজিটাল লকার ও তালার চাহিদা বেড়েছে। বিক্রি বাড়ায় দামও বাড়িয়েছেন বিক্রেতারা।

Advertisement

শনিবার (২৯ মার্চ) রাজধানীর বনানী, বাড্ডা, কুড়িল, মিরপুর, পল্লবীসহ কয়েকটি এলাকার বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা যায়, সেফটি লকার, তালাসহ নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন পণ্য কিনতে ভিড় করছেন ক্রেতারা।

ব্যবসায়ীরা জানান, চলমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে তালা, লকার ইত্যাদি বিক্রি বেড়েছে। এবার ২৬ মার্চ, শবে কদরসহ আগে থেকেই লম্বা ছুটি পাওয়ায় ঢাকা ছেড়েছেন অধিকাংশ মানুষ। এখনো রাজধানী ছাড়ছেন অনেকে। তাই গত কয়েক দিন ধরে ঘরের নিরাপত্তা সংক্রান্ত পণ্যের চাহিদা ও বিক্রি বেড়েছে।

ক্রেতাদের অভিযোগ, এ সুযোগে বেশি দাম হাঁকাচ্ছেন বিক্রেতারা। তালা, সেফটি লকার, ডিজিটাল লকার, সিন্দুক, ভল্ট ইত্যাদির দাম বেড়েছে কয়েক গুণ।

Advertisement

আমাদের কাছে তিন হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকা দামের লকার রয়েছে। গত কয়েকদিন বেচাকেনা ভালোই চলছে। গত বছরের তুলনায় এবার লকারের চাহিদা একটু বেশি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে এটা হতে পারে।–ব্যবসায়ী লিটন

রাজধানীবাসী নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় থাকলেও সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বারবার আশ্বস্ত করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) গতকাল (২৮ মার্চ) বলেন, এবার ঈদে সবাই ছুটি ভোগ করছে কিন্তু পুলিশ, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা ছুটি কাটাচ্ছে না। তারা কিন্তু নিশ্ছিদ্রভাবে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য ঢাকায় কাজ করছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন ভালো থাকে এজন্য তারা কাজ করে যাচ্ছেন। আপনারা যেন ভালোভাবে যেতে পারেন। আপনাদের বাসাবাড়ি ভালো থাকে। এজন্য তারা সব ধরনের কাজ করে যাচ্ছে।

ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জাগো নিউজকে বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের জোর তৎপরতায় রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। ব্যাপক পেট্রোল বাড়িয়েছি। বর্তমানে দিনে ২৫০ এবং রাতে ২৫০ পেট্রোল দায়িত্ব পালন করছে। প্রতিদিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ব্লকরেড হচ্ছে। পুলিশি তৎপরতায় ছিনতাই ও চাঁদাবাজির মতো ঘটনা অনেকাংশে কমেছে। সবার সহযোগিতা নিয়ে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আসন্ন ঈদেও আশা করছি পুলিশের তৎপরতায় অপরাধ অনেকাংশে কম থাকবে।

সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের পরও যেন শঙ্কা কাটছে না ঢাকাবাসীর। ডিজিটাল লকার হাউজ বনানী শোরুমে গিয়ে দেখা যায় সেখানে বিভিন্ন দাম ও ধরনের লকার রয়েছে। বাসাবাড়ি, করপোরেট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ব্যবহার উপযোগীসহ সব ধরনের লকার মিলছে। বিক্রেতা মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ইদানীং সেফটি লকারের চাহিদা কিছুটা বেড়েছে। ঈদে আমাদের একটু বেশি সেল হয়। তবে এবছর কিছুটা আলাদা। কারণ, এবার অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বেড়েছে কয়েক গুণ। দিন-দুপুরে বাসাবাড়ি, অফিসে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি হচ্ছে। তাই এবার তুলনামূলক বিক্রি বেশি।’

Advertisement

আরও পড়ুনফাঁকা ঢাকায় অপরাধ করলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে নাসড়কে সিসি ক্যামেরা, থাকছে হাজারের বেশি চেকপোস্ট-টহল টিমফাঁকা ঢাকায় নাশকতার হুমকি নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

চাহিদা বাড়ায় দাম বেড়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা গোদরেজ লকার আমদানি করি। ফলে আমদানি খরচ বাড়লে কিছুটা দাম বাড়বে। এছাড়া অনৈতিকভাবে দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই।’

মিরপুর-১৩ জেসমিন এন্টারপ্রাইজে বিভিন্ন দাম ও মানের তালা, সেফটি লকার, সিন্দুক পাওয়া যায়। দোকানের ম্যানেজার লিটন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের দোকানে সব ধরনের সিন্দুক পাওয়া যায়। এছাড়া আমরা চাহিদা অনুযায়ী সিন্দুক বানিয়ে দিতে পারি। গোদরেজ, জিম্যাক, এক্সট্রো ইত্যাদি ব্র্যান্ডের লকার আমরা আমদানি করি।’

আমার দোকানে আমি সব সময় মোবাজ তালা ব্যবহার করি। কিন্তু সব সময় যে দামে কিনি এখন তার চেয়ে ৫শ টাকা বেশি চাচ্ছে। হয়তো চাহিদা বেশি তাই দাম বেড়েছে।–ক্রেতা সবুজ

‘আমাদের কাছে তিন হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকা দামের লকার রয়েছে। গত কয়েকদিন বেচাকেনা ভালোই চলছে। গত বছরের তুলনায় এবার লকারের চাহিদা একটু বেশি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে এটা হতে পারে।’ লিটন বলেন।

দোকানটিতে লকার কিনতে আসা আসমা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখন তো চুরি-ছিনতাই বেড়েছে। ঈদে নিশ্চিন্তে বাড়ি যাওয়ার জন্য একটা ভালো মানের লকার কিনতে এসেছি। কিন্তু দাম বেশি চাচ্ছে।’

‘সাধারণ ফিঙ্গার প্রিন্ট দেড় ফুট বাই দেড় ফুট লকারের দাম চাচ্ছে ১০ হাজার টাকা, যা অন্য সময়ে পাঁচ হাজার টাকায় পাওয়া যেত। আবার আরেকটু বড় লকারের দাম আরও বেশি।’ বলেন তিনি।

আফজাল নামে আরেকজন ক্রেতা বলেন, ‘টাকা-পয়সা রাখার জন্য অনেকে ব্যাংকের লকার ব্যবহার করেন। তবে সেখানে নানা কাগজপত্রের ঝামেলায় অনেকে নিতে চান না। সেজন্য একটা ভালো মানের লকার কিনে বাড়ি রেখে দেন।’

বেড়েছে তালার চাহিদাও

সেফটি লকারের পাশাপাশি তালার চাহিদাও বেড়েছে। ভালোমানের স্টিলের তালার চাহিদা বেড়েছে প্রচুর।

ভারতীয় মোবাজ তালার সুখ্যাতি রয়েছে বেশ। সব ধরনের দোকানের সাটারের তালা হিসেবে এক নামে সবাই মোবাজ তালার কথা বলেন। সেই মোবাজ তালার দাম বেড়ে হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ।

মিরপুর মাজার রোড সংলগ্ন একটি দোকানে গিয়ে দেখা যায়, ছোট মোবাজ তালার দাম চাওয়া হচ্ছে ৬৫০ টাকা, যা কিছুদিন আগে ছিল ৪শ টাকা। মাঝারি তালার দাম এক হাজার টাকা এবং বড় সাইজের তালার দাম ১৫শ টাকা।

সবুজ নামে একজন মুদি দোকানদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার দোকানে আমি সব সময় মোবাজ তালা ব্যবহার করি। কিন্তু সব সময় যে দামে কিনি এখন তার চেয়ে ৫শ টাকা বেশি চাচ্ছে। হয়তো চাহিদা বেশি তাই দাম বেড়েছে।’

মোবাজ ছাড়াও অন্য চায়না তালার দামও কিছুটা বাড়তি, তবে সেগুলো কতটা নিরাপত্তা দেবে সেটাও প্রশ্নসাপেক্ষ।

এসআরএস/এএসএ/জেআইএম