আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়েছে হাম, দুজনের মৃত্যু

যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়েছে হাম, দুজনের মৃত্যু

যুক্তরাষ্ট্রে বেড়েছে হামের প্রাদুর্ভাব। এরই মধ্যে দেশটির অন্তত পাঁচটি অঙ্গরাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে এই সংক্রমণ। এতে টেক্সাসে আক্রান্তের হার সর্বোচ্চ, প্রায় ৪০০ জনের শরীরে হাম শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন দুজন।

Advertisement

গত শুক্রবার (২৮ মার্চ) এক বিবৃতির মাধ্যমে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি)। ২০২৪ সালে বছরজুড়ে যে সংখ্যক আক্রান্তের তথ্য পাওয়া গেছে, সেই তুলনায় চলতি বছরের প্রথম তিনমাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি বলে জানিয়েছে তারা।

আরও পড়ুন>> 

বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়ে পাশে থাকার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশ ও ড. ইউনূসকে ট্রাম্পের শুভেচ্ছা হোয়াইট হাউজে মুসলিমদের সঙ্গে ট্রাম্পের ইফতার

টেক্সাস ছাড়াও নিউ মেক্সিকো, কানসাস, ওহাইয়ো ও ওকলাহোমা অঙ্গরাজ্যেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

Advertisement

ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্তের হার বাড়ার পর থেকে এ পর্যন্ত হামে সংক্রমিত হয়ে দুজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে সিডিসি। মৃত দুই ব্যক্তি হামের টিকা গ্রহণ করা ছিলেন না বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। টেক্সাসে হামে আক্রান্ত হয়ে এক শিশু এবং নিউ মেক্সিকোতে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি মারা গেছেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অঙ্গরাজ্যে গত কয়েক বছরে টিকা নেওয়ার হার কমে যাওয়ায় আগেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছিল। বিশেষজ্ঞদের সেই আশঙ্কাই এখন বাস্তব প্রমাণিত হয়েছে।

হাম ভাইরাসজনিত একটি সংক্রামক রোগ। মূলত বাতাসের মাধ্যমে এটি ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তির নিশ্বাস, হাঁচি-কাশির মাধ্যমে তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিরা সংক্রমিত হয়ে থাকেন। সিডিসির তথ্যমতে, আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা প্রতি ১০ জনের মধ্যে নয়জনেরই এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।

টিকার সাফল্যের কারণে ২০০০ সালে নির্মূল হওয়ার ঘোষণা দিলেও যুক্তরাষ্ট্রে আবারও জেঁকে বসেছে হাম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, টেক্সাসের সংক্রমণের সঙ্গে নিউ মেক্সিকোর সংক্রমণের যোগসূত্র রয়েছে।

Advertisement

টেক্সাসের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, দুই মাস আগে অঙ্গরাজ্যটিতে সংক্রমণ শুরু হয়। শুক্রবার পর্যন্ত ৪০০ জনের শরীরে হাম শনাক্ত হয়েছে, এরমধ্যে ৪১ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিউ মেক্সিকোতে এ পর্যন্ত ৪৪ জন সংক্রমিত হয়েছে বলে জানা গেছে।

কানসাস অঙ্গরাজ্যের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এলাকাটিতে ২৩ জনের শরীরে হাম শনাক্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন। এদিকে, ওকলাহোমা ও ওহাইয়ো অঙ্গরাজ্যে যথাক্রমে নয় ও ১০ জন সংক্রমিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এই পাঁচটি অঙ্গরাজ্য ছাড়াও আলাস্কা, ক্যালিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা, কেন্টাকি, ম্যারিল্যান্ড, মিশিগান, মিনেসোটা, নিউ জার্সি, নিউ ইয়র্কসহ আরও বেশ কিছু অঙ্গরাজ্যে সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে বলে জানানো হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের জানায়, দেশটিতে সাধারণত বাইরে থেকে আসা কোনো সংক্রমিত ব্যক্তির মাধ্যম হাম ছড়িয়ে থাকে। করোনা মহামারির পরে ধর্মীয় বিশ্বাস বা ব্যক্তিগত বিশ্বাসের কারণে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের টিকা দেওয়া থেকে বিরত ছিলেন। ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে গেছে বলে মত দেন তারা।

হামের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। চিকিৎসকরা সাধারণত সংক্রমিতদের উপসর্গগুলোর জটিলতা কিছুটা কমিয়ে তাদের স্বস্তি দেওয়ার চেষ্টা করে থাকেন। তবে সংক্রমণ এড়াতে তারা টিকা গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

হাম থেকে বাঁচতে ১২ থেকে ১৫ মাস বয়সী শিশুদের হাম, মাম্পস ও রুবেলা ভাইরাসের জন্য এমএমআর টিকার প্রথম ডোজ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এরপর ৪ থেকে ৬ বছর বয়সের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার জন্য বলা হয়।

গ্লোবাল ভাইরাস নেটওয়ার্কের সদস্য স্কট উইভার জানান, সংক্রমণের উচ্চঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের টিকার বুস্টার ডোজ দেওয়ার কথা বিবেচনা করা উচিত। বিশেষত সংক্রমিত ব্যক্তির পরিবারের সদস্য কিংবা যাদের শ্বাসনালি আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে তাদের বুস্টার ডোজ দেওয়া উচিত বলে মত দেন তিনি।

সূত্র: এপি/ ইউএনবিকেএএ/