জাতীয়

আজও ফাঁকা ঢাকা: যাত্রীরা খুশি, মন খারাপ পরিবহন শ্রমিকদের

মুসলিমদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে টানা ৯ দিনের ছুটির ফাঁদে পড়েছে দেশ। সরকারি ছুটি অনুযায়ী, আগামী শনিবার (৫ এপ্রিল) পর্যন্ত ছুটি উপভোগ করবেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

Advertisement

এই ছুটির মধ্যেই কিছু মানুষ ফিরতে শুরু করেছেন মেগা সিটি ঢাকায়। তবে সেটি সংখ্যায় খুবই সামান্য। ঢাকাবাসীও তেমন ঘর থেকে বের হননি। ফলে আজ (বুধবার) সকালেও ঢাকা কার্যত ফাঁকাই ছিল। রাজধানীর সড়কে বাড়তে শুরু করেছে গণপরিবহন ও সাধারণ মানুষের চলাচল। তবে সেটি যানজটের পর্যায়ে পৌঁছায়নি। এর ফলে দ্রুত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পেরে উচ্ছ্বসিত নগরবাসী। কিন্তু মন খারাপ পরিবহন শ্রমিকদের।

যাত্রীরা বলছেন, তারা ১ থেকে দেড় ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে পারছেন ১৫ মিনিটের মধ্যেই। এমন ঢাকা সব সময় থাকলে ভালোই হতো। অন্যদিকে পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, যে পরিমাণ যাত্রী পাচ্ছেন তাতে তেলের খরচই উঠবে না।

বুধবার (২ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর বেশ কয়েকটি সড়ক ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

Advertisement

সরেজমিনে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, শ্যামলী, কলেজগেট, আসাদ গেট, ধানমন্ডি, কারওয়ান বাজার ও বাংলামোটর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গত দুই দিনের তুলনায় রাজধানীর সড়কে বৃদ্ধি পেয়েছে সাধারণ মানুষের চলাচল ও যানবাহনের সংখ্যা। তবে অধিকাংশ গণপরিবহনে থাকছে আসন ফাঁকা। কর্মদিবসের ঢাকার মতো নেই যানজট। সেই সঙ্গে গণপরিবহনে গেটে যাত্রী ঝোলার চিত্রও দেখা মেলেনি।

আরও পড়ুন জাঙ্গালিয়ায় বাস-মাইক্রো সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ১০ ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে ঈদে গ্রামে যাওয়া মানুষ

এছাড়াও বাস স্টপেজগুলোতে এসে যাত্রীর অপেক্ষায় থাকা যানবাহনের শ্রমিকদের যাত্রী খোঁজার চিত্র ছিল চোখে পড়ার মতো। যাত্রীর অভাবে গণপরিবহনগুলো রাজধানীর বিভিন্ন স্টপেজে এসে কিছু সময়ের জন্য অপেক্ষায় থাকতেও দেখা যায়। এছাড়া সড়কের কোথাও যানজটের চিত্র দেখা মেলেনি।

রাজধানীর কল্যাণপুরে কথা হয় বাসের যাত্রী মো. রাশেদের সঙ্গে। ব্যক্তিগত প্রয়োজনে মিরপুর-১০ নম্বর থেকে কল্যাণপুরে এসেছেন তিনি। তিনি বলেন, রাস্তা ফাঁকা। খুব কম সময়ে চলে আসতে পেরেছি। কোথাও যানজটে পড়তে হয়নি।

রাশেদ বলেন, সাধারণ দিনে যে কতটা ধকল সহ্য করতে হয়, সেটা ঈদের ছুটির এই কিছুদিন রাস্তায় চলাচল করলে বোঝা যাচ্ছে।

Advertisement

অন্য এক যাত্রী মিজানুর রহমান বলেন, কলাবাগান থেকে এখানে এসেছি। সর্বোচ্চ ১৫ মিনিট সময় লেগেছে আসতে। কোনো যানজটে পড়তে হয়নি। সাধারণত যদি অফিস খোলা থাকতো বা ছুটির দিন না হতো তাহলে এই রাস্তাটুকু আসতেই সর্বনিম্ন ১ থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লাগতো। সব সময় যদি ঢাকার সড়ক এমন ফাঁকা থাকতো তাহলে ঢাকাবাসীর জন্য নির্বিঘ্নে চলাচল সহজ হতো। কত সময় বেঁচে যেত মানুষের।

রাজধানীর শ্যামলী বাস পয়েন্টে কথা হয় পল্টনগামী যাত্রী জহিরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে রাস্তাঘাট ফাঁকা। কোনো যানজট নেই। এ ঢাকায় চলাচল করতেও ভালো লাগে। আগে শ্যামলী থেকে পল্টন যেতে হলে ২ ঘণ্টা সময় হাতে নিয়ে বের হতে হয়েছে। আর আজ মাত্র ৪০ মিনিট সময় হাতে নিয়ে বের হয়েছি।

এদিকে রাজধানীর কল্যাণপুরে কথা হয় পরিস্থান পরিহনের চালকের সহকারী সাইফুলের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাস্তায় যাত্রী নেই বললেই চলে। গাড়ি ফাঁকা। তবে গত দুই দিনের তুলনায় যাত্রীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে।

কোথাও যানজটে পড়েছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাস্তায় গাড়িই নেই। যানজট আসবে কোই থেকে?

গুলিস্তান ধামরাই পরিবহনের চালকের সহকারী খাইরুল বলেন, রাস্তায় কোনো যাত্রী নেই ভাই। তেল খরচও উঠবে না। সাভার থেকে কল্যাণপুর এসেছি মাত্র ২০-২৫ জন যাত্রী নিয়ে। এই যাত্রীতে গাড়ির খরচ উঠবে না।

কাঙ্ক্ষিত যাত্রী না পেয়ে এভাবেই নিজেদের মন খারাপের কথা জানাচ্ছিলেন পরিবহন শ্রমিকরা।

রইচ পরিবহনের চালকের সহকারী ইমদাদুল বলেন, ঈদের দুই দিন আগে থেকে আজ পর্যন্ত তেমন কোনো যাত্রী নেই। গাড়ি নিয়ে বের হলেই ছিট ফাঁকা পড়ে থাকছে। কোনো ট্রিপে গাড়ি ফুল যাত্রী পাইনি।

তিনি বলেন, একদিন রাস্তায় গাড়ি নামালেই মালিককে কতগুলো টাকা দেওয়া লাগে। তারপর রোড খরচ, তেল খরচ, স্টাফদের খরচ। কিন্তু যাত্রী নেই। এমন যাত্রী হলে মালিককে কি দেবো আর তেলের খরচ তুলবো কীভাবে? নিজের পরিবারের খরচ তুলবো কীভাবে?

তিনি বলেন, গাড়িতে দেখেন কতজন যাত্রী আছে। এই যাত্রী নিয়ে গাড়ি চালানো যায়? যাত্রীর অভাবে মালিক সব গাড়িও বের করেনি।

এদিকে প্রথমে ঈদ উপলক্ষে পাঁচদিন ছুটি ঘোষণা করেছিল সরকার। পরে সেখানে নির্বাহী আদেশে ৩ এপ্রিলও ছুটি ঘোষণা করা হয়। এর ফলে এবার ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা নয়দিন ছুটি পাচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

কেআর/এমএইচআর/এএসএম