চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপ ফেরিঘাটে ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষের চাপ বেড়েছে। বাড়তি চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে ফেরি কর্তৃপক্ষ। অতিরিক্ত যাত্রী ও যানবাহন কারণে শুক্রবার (২৮ মার্চ) সকালে নির্ধারিত সময়ের প্রায় দেড় ঘণ্টা পর দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের উদ্দেশে ছেড়ে যায় ফেরি কপোতাক্ষ।
Advertisement
যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফেরিতে করে সন্দ্বীপে যেতে রাত থেকে ঘাটে ভিড়তে থাকে যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী বিভিন্ন যানবাহন। ঘাটে যানবাহনের দীর্ঘ সারি তৈরি হয়। সকাল সাড়ে ছয়টায় ফেরি ছাড়ার কথা। এজন্য সকাল ৬টার দিকে ফেরিতে গাড়ি ওঠানো শুরু হয়। তবে প্রতিযোগিতা করে গাড়ি নিয়ে ফেরিতে উঠতে গিয়ে চালকদের মধ্যে হট্টগোল তৈরি হয়। এ পরিস্থিতিতে নির্ধারিত সময়ের প্রায় দেড় ঘণ্টা পর ছাড়তে হয় ফেরিটি। ফেরিতে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়ের কারণে পা ফেলার জায়গা ছিল না।
ফেরিঘাটে যাত্রী-যানবাহনের চাপ/ছবিঃ জাগো নিউজ
এদিকে সন্দ্বীপমুখী যাত্রীদের চাপ রয়েছে সীতাকুণ্ডের কুমিরা নৌঘাটেও। টিকিট কাটার পর স্পিডবোটে উঠতে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে যাত্রীদের।
Advertisement
সন্দ্বীপের যাত্রী লক্ষণ চন্দ্র নাথ বলেন, বাড়ি যেতে ৭ ঘণ্টা ধরে ঘাটে অপেক্ষা করছি। দুপুর ২টা ২০ মিনিটে ফেরিতে উঠেছি। সকালে একটি টিপ নিয়ে সন্দ্বীপ থেকে নিয়ে দুপুর ১২টায় বাঁশবাড়িয়া ঘাটে পৌঁছাই। কিন্তু জোয়ারের কারণে ফেরিতে ওঠার র্যাম্প স্থান বিচ্যুত হওয়ার কারণে ফেরিতে গাড়ি উঠতে না পারায় ছাড়তে দেরি হয়েছে।
সকালে ফেরি করে সন্দ্বীপ যাওয়া ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার সকাল ৬টায় বাঁশবাড়িয়া ঘাটে গিয়ে দেখি, মানুষের প্রচণ্ড ভিড়। চলতেও কষ্ট হচ্ছে। অনেক যাত্রীবাহী বাস ফেরিতে জায়গা পায়নি। দ্বিতীয় ট্রিপেও কিছু বাস যেতে পারবে না দেখে যাত্রীরা টিকিট কেটে ফেরিতে উঠে যান।
বাঁশবাড়িয়া ফেরিঘাটে অপেক্ষা করা নজরুল ইসলাম বলেন, সন্দ্বীপের এনাম নাহারে যাওয়ার জন্য যাত্রীবাহী বাসে উঠেছিলেন তিনি। ঘাটে পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় তাদের বাসটি ফেরিতে উঠতে পারেনি। এ অবস্থায় পরিবারসহ টিকিট কেটে ফেরিতে উঠে গেছেন। ফেরির টিকিটের জন্য বাড়তি কিছু খরচ হলেও দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পাওয়ায় তিনি খুশি।
আরেক যাত্রী নুরুল আনোয়ার দুলাল জানান, ফেরিতে একজনের ভাড়া ৩০০ টাকা নির্ধারণ করেছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আজ টিকেট নেওয়া হয়েছে ৩২০ টাকা করে। অতিরিক্ত নেওয়া হচ্ছে ২০ টাকা।
Advertisement
ফেরির মাস্টার শামসুল আলম বলেন, ফেরিতে ওঠার র্যাম্প স্থান বিচ্যুত হওয়ার কারণে গাড়ি উঠতে কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। এছাড়া বিভিন্ন গাড়ির চালকদের মধ্যে ঝামেলার কারণে ফেরিতে গাড়ি উঠতে দেরি হয়েছে। তাই দেড় ঘণ্টা দেরিতে ফেরি ছাড়তে হয়েছে। প্রথম ট্রিপে চারটি বাস, দুটি ট্রাক, ২৪টি প্রাইভেট কার, ৩৬টি মোটরসাইকেল ও দেড় শতাধিক যাত্রী নিয়ে বাঁশবাড়িয়া ঘাট থেকে ফেরি ছেড়েছে।
দ্বিতীয় ট্রিপে পাঁচটি বাস, দুটি ট্রাক, ২২টি প্রাইভেটকার, ৩৮টি মোটরসাইকেল ও প্রায় দুই শতাধিক যাত্রী নিয়ে যাত্রী শুরু করেছি।
ফেরিঘাটে যাত্রী-যানবাহনের চাপ/ছবিঃ জাগো নিউজ
অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেটা আমি বলতে পারবো। যারা কাউন্টারে দায়িত্বে আছেন তারা ভালো বলতে পারবেন।
কুমিরা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক ওয়ালিউদ্দিন আকবর বলেন, ঈদে ঘরমুখো মানুষ যাতে নৌঘাটে ঝামেলায় পড়তে না হয়, সেজন্য সীতাকুণ্ডের কুমিরা ও বাঁশবাড়িয়া ঘাটে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তবে সময় মতো ফেরি না ছাড়তে পারায় গাড়ি ও মানুষের চাপ বাড়ছে।
বিআইডব্লিউটিএর চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, চট্টগ্রাম থেকে সন্দ্বীপে যেতে বা সেখান থেকে আসতে একবারে এক ঘণ্টা ১০ মিনিটের মত সময় লাগছে। জোয়ার-ভাটা হিসেব করে প্রতিদিন যাওয়া-আসা মিলিয়ে মোট চারবার ফেরি চলাচলের কথা রয়েছে। কিন্তু জোয়ারের পানিতে ফেরিতে গাড়ি উঠার র্যাম্প বিচ্যুত হওয়ায় ফেরি ছাড়তে দেরি হচ্ছে।
এম. মাঈন উদ্দিন/আরএইচ/জিকেএস