অর্থনীতি

এবার 'জাকাতের কাপড়' বিক্রিতে ভাটা

এবার 'জাকাতের কাপড়' বিক্রিতে ভাটা

সম্পদের শুদ্ধতা আনতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা জাকাত দিয়ে থাকেন। বছরের যেকোনো সময় এই জাকাত দেওয়া গেলেও অতিরিক্ত সওয়াবের আশায় বড় একটি অংশই বেছে নেন পবিত্র রমজান মাসকে। সম্পদের জাকাত হিসেবে গরিবদের মাঝে বিতরণ করা হয় নগদ অর্থের পাশাপাশি পরিধেয় বস্ত্র। ফলে প্রতিবছর রমজান এলেই বেড়ে যায় জাকাতের কাপড় হিসেবে নিম্ন মানের ও কম দামের কাপড়ের বিক্রি। তবে এবার সেই 'জাকাতের কাপড়' বিক্রিতে ভাটা দেখা দিয়েছে।

Advertisement

২৫ রমজান চলে এলেও জাকাতের কাপড় খুব একটা বিক্রি হয়নি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, মানুষ এখন জাকাত হিসেবে কাপড়ের থেকে নগদ অর্থ বেশি দিচ্ছে। ফলে জাকাতের কাপড় বিক্রি কমে গেছে। এ কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান জাকাতের কাপড়ের মজুতও কমিয়ে দিয়েছে।

রাজধানীতে জাকাতের কাপড় হিসেবে পোশাক যে কয়টি মার্কেটে পাইকারি বিক্রি হয়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট মোড়ে অবস্থিত পীর ইয়ামেনী মার্কেট। এই মার্কেটটির নিচতলায় শতাধিক প্রতিষ্ঠান জাকাতের শাড়ি-লুঙ্গি পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করেন। একসময় মার্কেটটির নিচতলার প্রায় প্রতিটি দোকানের সামনে প্ল্যাকার্ড লেখা থাকতো 'এখানে জাকাতের শাড়ি, লুঙ্গি বিক্রি করা হয়'। কিন্তু এবার হাতে গোনা কয়েকটি দোকানের সামনে এই প্ল্যাকার্ড দেখা গেছে।

কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কয়েক বছর ধরে জাকাতের কাপড় বিক্রি বেশ কমে গেছে। তাছাড়া এই প্ল্যাকার্ড থাকলে কিছু কিছু ক্রেতা দোকানে আসতে চান না। তারা মনে করে এখানে শুধু জাকাতের কাপড় বিক্রি হয়। কিন্তু জাকাতের কাপড় বিক্রির পাশাপাশি প্রতিটি দোকানেই সাধারণের ব্যবহারের পোশাকও বিক্রি হয়। এজন্য প্ল্যাকার্ড তুলে দেওয়া হয়েছে। দোকানে এসে যে কেউ নিজের ব্যবহারের জন্য এবং জাকাত দেওয়ার জন্য কাপড় কিনতে পারবেন।

Advertisement

আরও পড়ুন

জাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে যাদের অগ্রাধিকার দেবেন শিশু সম্পদশালী হলে তার পক্ষ থেকে জাকাত আদায় করতে হবে?

মার্কেটটির একজন ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, আমরা আগে দোকানের সামনে লিখে রাখতাম ‘এখানে জাকাতের শাড়ি লুঙ্গি বিক্রি হয়’। এবার এটা লিখিনি। কারণ কয়েক বছর ধরে জাকাতের কাপড় বিক্রি কমে গেছে। তাই সাধারণ ব্যবসার মতো দোকান পরিচালনা করছি। তবে কেউ চাইলে আমাদের কাছ থেকে জাকাতের কাপড় কিনতে পারেন। কম দাম থেকে বেশি দাম, সব ধরনের জাকাতের কাপড় আমাদের কাছে আছে।

জাকাতের কাপড় বিক্রি কমে যাওয়ার কারণ কী? জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাকাতে মানুষ এখন কাপড়ের থেকে নগদ টাকা বেশি দিচ্ছে। নগদ টাকা দিলে মানুষ বেশি খুশি হয়। কাপড় দিলে অনেক সময় পছন্দ হয় না। আবার নিকটাত্মীয়দের কম দামের কাপড় দেওয়া যায় না। এসব কারণেই হয়তো জাকাতের কাপড় বিক্রি কমে গেছে।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিক্রি কম হলেও এবার জাকাতের কাপড়ের দাম একটু বেশি। গত বছরের তুলনায় এবার একটি শাড়ির দাম ২০-৪০ টাকা বেড়েছে। লুঙ্গির দাম ২০-৩০ টাকা বেড়েছে। থ্রি-পিসের দাম ২০-৫০ টাকা বেড়েছে।

Advertisement

জাকাতের যে শাড়ি বিক্রি হচ্ছে, মান অনুযায়ী তার দাম ৩৭০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা। লুঙ্গি বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ৫৫০ টাকার মধ্যে। থ্রি-পিস বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৯০০ টাকা।

পীর ইয়ামেনী মার্কেটের একটি দোকানের সামনে প্ল্যাকার্ডে লেখা দেখা যায়, ‘জাকাতের শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রি-পিস পাওয়া যায়’। পুরো মার্কেট ঘুরে এই একটি দোকানেই জাকাতের শাড়ি, লুঙ্গি ও থ্রি-পিস পাওয়া সংক্রান্ত প্ল্যাকার্ড লেখা খুঁজে পাওয়া যায়। এর বাইরে মাত্র ৩টি দোকানে জাকাতের কাপড় বিক্রি সংক্রান্ত প্ল্যাকার্ড দেখা গেছে। সেগুলোতে শুধু শাড়ি ও লুঙ্গির কথা উল্লেখ আছে। অথচ গত বছরও এখানকার প্রায় প্রতিটি দোকানে এ ধরনের প্ল্যাকার্ড ছিল।

মার্কেটটির একজন ব্যবসায়ী মিনহাজ বলেন, জাকাতের কাপড় বিক্রি না থাকায় এখন আমরা দোকানের সামনে আর এ ধরনের লেখা লেখি না। তাছাড়া যারা জাকাতের কাপড় কেনেন তারা জানেন, এখানে জাকাতের কাপড় পাওয়া যায়। লেখা না থাকলেও আগে যারা জাকাতের কাপড় বিক্রি করতেন, এখনো তারা সবাই বিক্রি করেন। কম দামের যে কোনো কাপড় কিনে জাকাত দেওয়া হয়। এটা যার যার ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে।

জাকাতের জন্য তো স্পেশাল কোনো কাপড় নেই। মানুষ জাকাত হিসেবে কম দামের কাপড় দেয়। তাই আমরা কম দামের কাপড়কে জাকাতের কাপড় হিসেবে বিক্রি করি। কিন্তু কেউ চাইলে তো বেশি দামেরটাও জাকাত হিসেবে দিতে পারেন।

 

তিনি বলেন, জাকাতের কাপড় বিক্রি ভালো না হওয়ার কারণে আমরা সাধারণ ব্যবসার মতো ব্যবসা করছি। যারা জাকাতের কাপড় কিনতে চান তারা আমাদের কাছ থেকে পছন্দ অনুযায়ী যত খুশি কিনতে পারেন। যারা বেশি নেন তাদের কাছ থেকে আমরা যে দাম রাখি, যারা অল্প কেনেন তাদের কাছ থেকেও একই দাম রাখি।

জাকাতের শাড়ি, লুঙ্গি ও থ্রি-পিস বিক্রি করা একটি দোকানের বিক্রয়কর্মী মো. হাসান বলেন, গত বছর যে বিক্রি হয়েছে, এবার তার অর্ধেকও হয়নি। ঈদের আর এক সপ্তাহ বাকি। অথচ দেখেন আমাদের মার্কেটে তেমন বিক্রি নেই।

বিক্রি কম হওয়ার কারণ কি? এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, অনেকের ধারণা এখানে শুধু জাকাতের কাপড় বিক্রি হয়। কিন্তু আমরা জাকাতের কাপড়ের পাশাপাশি অন্যান্য কাপড়ও বিক্রি করি। তাছাড়া জাকাতের জন্য তো স্পেশাল কোনো কাপড় নেই। মানুষ জাকাত হিসেবে কম দামের কাপড় দেয়। তাই আমরা কম দামের কাপড়কে জাকাতের কাপড় হিসেবে বিক্রি করি। কিন্তু কেউ চাইলে তো বেশি দামেরটাও জাকাত হিসেবে দিতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, কম দামের কাপড় জাকাত হিসেবে দিলে অনেক সময় বদনাম হয়। এ কারণে অনেকেই এখন জাকাত হিসেবে কাপড়ের বদলে নগদ টাকা দেন। এতে যিনি জাকাত পান তিনিও খুশি হন। আমাদের ধারণা, এ কারণে অনেকেই জাকাত হিসেবে কাপড়ের বদলে নগদ টাকা দিচ্ছেন। এ কারণে জাকাতের কাপড় বিক্রি কমে গেছে।

এমএএস/এমএইচআর/এমএস