লাইফস্টাইল

সিপিআর কী, কীভাবে সিপিআর প্রয়োগ করবেন?

সিপিআর কী, কীভাবে সিপিআর প্রয়োগ করবেন?

সিপিআর বা কার্ডিও পালমোনারি রিসাসিটেশন। কৃত্রিম শ্বাস দেওয়ার প্রক্রিয়াকে সিপিআর বলে। এটি একটি জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসা কৌশল। মাঝে মাঝেই হয়তো শুনে থাকবেন হার্ট অ্যাটাক করলে বা পানিতে ডুবে যাওয়া ব্যক্তিকে সিপিআর দেওয়া হয়। এতে হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের কাজ কৃত্রিম শ্বাস দিয়ে সচল রাখার চেষ্টা করা হয়।

Advertisement

শুধু হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রেই নয়, পানিতে ডুবে যাওয়া কিংবা ইলেক্ট্রিক শকের মতো বিভিন্ন কারণে শ্বাস বা হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে গেলেও জরুরিভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে সিপিআর দেয়া হয়। এটি বিশেষজ্ঞদের দ্বারা স্বীকৃত এবং বিশ্বব্যাপী বহুল প্রচলিত।

৭০-৮০ শতাংশ হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া বা চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে এড়ানো যায় না অনেক প্রাণহানি। কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে হৃদস্পন্দন ও রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ব্যক্তি ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে অচেতন হয়ে যায়।

৩০-৬০ সেকেন্ডের মধ্যে রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অক্সিজেনের অভাবে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে মৃত্যু ঘটে। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যথাযথ চিকিৎসা শুরু করার পূর্ব পর্যন্ত সিপিআর ব্যক্তির রক্ত চলাচল ও শ্বাস-প্রশ্বাস চালু রাখতে সাহায্য করে।

Advertisement

কেউ হার্ট অ্যাটাক করলে বা পানিতে ডোবা, ইলেকট্রিক শক পাওয়া রোগীকে সঙ্গে সঙ্গে সিপিআর দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। ব্যক্তির বুকের মাঝখানে জোরে ও দ্রুত ধাক্কা দিন। প্রতি মিনিটে প্রায় ১০০-১২০ কম্প্রেশন হতে হবে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখুন।

আসুন কীভাবে সিপিআর দিতে পারবেন তার সঠিক পদ্ধতি জেনে নেওয়া যাক। যা আপনার যে কোনো সময় যে কোনো বিপদে কাজে লাগতে পারে। আপনার এই কাজের জন্য বেঁচে যেতে পারে একটি প্রাণ। প্রথমে আশপাশের কারো সাহায্য চান। দুজন হলে সবচেয়ে ভালো হয়।

>> প্রথমেই আক্রান্ত ব্যক্তির আশপাশের অবস্থা দেখে নিতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তি কোনো বিপদসংকুল পরিবেশে থাকলে তা দূর করা। যেমন বৈদ্যুতিক তার বা কোনো বিষাক্ত কিছু আশপাশে থাকলে তা সরিয়ে নেওয়া।

>> এরপর দেখতে হবে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্ঞান আছে কিনা। জ্ঞান থাকলে তাকে স্বাভাবিকভাবে চিৎ করে শুইয়ে দিতে হবে। যাতে তিনি ধীরস্থিরভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারেন।

Advertisement

>> জ্ঞান না থাকলে তার শ্বাস নেওয়ার পথ যেমন- নাক, মুখ ও গলার ভেতরের অংশ পরিষ্কার আছে কি না দেখতে হবে। তার মাথা পেছনের দিকে টেনে, থুঁতনি ওপরের দিকে তুলে শ্বাসনালি খুলে দিতে হবে। যদি কফ-রক্ত বা অন্য কোনো কিছু এপথে আটকে থাকে, তবে তা সরিয়ে শ্বাস নেওয়ার পথ করে দিতে হবে এবং সিপিআর প্রয়োগ শুরু করতে হবে।

>> ব্যক্তির এক পাশে এসে বুক বরাবর বসে এক হাতের তালুকে বুকের মাঝ বরাবর স্থাপন করতে হবে। তার উপর অপর হাত স্থাপন করে উপরের হাতের আঙুল দিয়ে নিচের হাতকে আঁকড়ে ধরতে হবে। হাতের কনুই ভাঁজ না করে সোজাভাবে বুকের ওপর চাপ দিতে হবে।

>> এমন গতিতে চাপ প্রয়োগ করতে হবে যেন প্রতি মিনিটে ১০০-১২০টি চাপ প্রয়োগ করা যায়। এভাবে প্রতি ৩০টি চাপ প্রয়োগের পর আক্রান্তের মুখে মুখ রেখে দু’বার ফুঁ দিতে হবে। এমনভাবে চাপ প্রয়োগ করতে হবে যেন বুকের পাঁজর ২ থেকে ২.৫ ইঞ্চি নিচে নামে। যাতে চাপ হৃৎপিণ্ডের ওপর চাপ পড়ে।

>> হাসপাতালে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত বা জ্ঞান ফিরে আসা অথবা স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস চালু হওয়া পর্যন্ত একইভাবে সিপিআর চালিয়ে যেতে হবে। জ্ঞান ফিরলে বা শ্বাস-প্রশ্বাস চালু হলে তাকে একপাশে কাত করে শুইয়ে দিতে হবে। এরপর হাসপাতালে নিয়ে পরবর্তী চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

আরও পড়ুন ইফতারে রাখুন বাহারি সব পুষ্টিকর খাবার  রোজায় শরীরচর্চা কখন করবেন? 

কেএসকে/জিকেএস