দেশজুড়ে

ঈদযাত্রায় নতুন আতঙ্ক ছিনতাই-ডাকাতি

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে বিভিন্ন সময় ঘটে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা। এরমধ্যে বর্তমান প্রেক্ষাপট অর্থাৎ আগস্ট পরবর্তীতে রাত হলেই এখানকার মহাসড়কে দিয়ে চলাচলকারী যাত্রী ও চালকদের প্রায়শই অপরাধীদের কবলে পড়তে হচ্ছে। ফলে এবারের ঈদযাত্রা নিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। পটপরিবর্তনের ৭ মাসে এখানে বেশ কয়েকটি ছোট-বড় ছিনতাই আর ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।

Advertisement

বাংলাদেশের অন্যতম ব্যস্ততম মহাসড়ক এটি। প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে অন্তত ১৮-২০ হাজার বেশি যানবাহন যাতায়াত করে। তবে বছরের দুটি ঈদকে কেন্দ্র করে পরিবহনের চাপ প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যায়। আর এই সময়টায় ছিনতাইকারী ও ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মানুষের সর্বস্ব লুটে নেন। তাই এবারের ঈদযাত্রা নিয়ে যানবাহন চালকরা বেশ আতঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন।

পরিবহন বাস কাউন্টার কর্তৃপক্ষের দায়িত্বরতদের মতে, প্রশাসনের তৎপরতায় ঘরমুখো যাত্রীদের ঈদযাত্রা স্বস্তির হওয়া সম্ভব।

অপরদিকে জনতার জানমাল রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ঘাটতি রাখা হবে না বলে জানিয়েছেন কর্তব্যরত পুলিশের কর্মকর্তারা।

Advertisement

আরও পড়ুন- সোনারগাঁয়ে দুই ডাকাতকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ সড়কে ডাকাতি-ছিনতাই-দুর্ঘটনা রোধে জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান

৫ আগস্ট থেকে মহাসড়কের সাইনবোর্ড থেকে মেঘনা টোলপ্লাজার ২১ কিলোমিটার পর্যন্ত অংশে ঘটে যাওয়া কয়েকটি ছিনতাই আর ডাকাতির ঘটনায় মানুষের মনে ভীতির জায়গা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে কাঁচপুর থেকে মেঘনা টোলপ্লাজা অংশে এসব ভয়াবহ ঘটনা বেশি লক্ষণীয়। এ অংশকে অপরাধের হটস্পট হিসেবে গণ্য করেন পরিবহন চালকরা। মহাসড়কে অনিয়ন্ত্রিত ডাকাতি-ছিনতাই বেড়ে যাওয়ায় প্রশাসনও বিপাকে পড়েছে।

কাঁচপুর হাইওয়ে থানা পুলিশের দেওয়া তথ্যে, ২০২৪ সালের ১৪ নভেম্বর থেকে এ বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হাইওয়েতে ডাকাতি সংক্রান্ত মোট ৬টি মামলা রুজু হয়েছে। তাই এবারের ঈদযাত্রায় ডাকাতি ও ছিনতাই রোধে ইতোমধ্যে পুলিশের অতিরিক্ত ফোর্স কাজ করে যাচ্ছে।

ঈদের ছুটিতে মহাসড়কের সাইনবোর্ড বাসস্ট্যান্ডের উভয় লেনে, মৌচাক বাসস্ট্যান্ডে, চিটাগাংরোড, কাঁচপুর ব্রিজের সিদ্ধিরগঞ্জ ও সোনারগাঁ অংশে, তারাবো, বরাবো, মদনপুর ও মোগরাপাড়া অংশে পুলিশের নিরাপত্তা থাকবে। পুলিশকে সহায়তা করতে আনসারকেও রাখা হচ্ছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জে ৫ আগস্টের পর ঘটে যাওয়া কয়েকটি ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

Advertisement

২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর রাতে সাংগঠনিক কাজে ঢাকা থেকে বান্দরবানের লামায় যাওয়ার পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়া অংশে পৌঁছানোর পরই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের মাইক্রোবাস আটকে দেয় একদল ছিনতাইকারী। তখন সমন্বয়কদের ওপর আঘাত করে তাদের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন, মানিব্যাগসহ মূল্যবান জিনিস ছিনিয়ে নেয় অপরাধীরা।

আরও পড়ুন- ঈদযাত্রায় ভোগাবে নবীনগর-চন্দ্রা ও আব্দুল্লাহপুর-বাইপাইল মহাসড়ক ঈদে যাত্রীদের গাজীপুর পার করাই বড় চ্যালেঞ্জ

আবু হানি ও রাজিব ভুঁইয়া নামের দুই প্রবাসী ১৪ ফেব্রুয়ারি গুলিস্তান থেকে মার্কেট করে কুমিল্লা যাওয়ার পথে মহাসড়কের বন্দরে কেওঢালা এলাকায় ডাকাতদের কবলে পড়েন। তাদের অর্থসহ সব কিছু নিয়ে যাওয়া হয়।

এরপর ২৬ ফেব্রুয়ারি ভোরে মহাসড়কের সোনারগাঁ পিরোজপুর ইউনিয়নের আষাড়িয়ারচর এলাকার সাধু পেপার মিলের সামনে সিরাজুল ইসলাম নামের এক কুয়েত ফেরত প্রবাসী ডাকাতির শিকার হন। সেই রাতে ভুক্তভোগীকে বহনকারী গাড়িতে হামলা চালিয়ে পাসপোর্টসহ প্রায় ৫ লাখ টাকা মূল্যের মালামাল লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

একই রাতে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থেকে নিজের অসুস্থ বোনকে নিয়ে মদনপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে আসা এক নারী ও তার দেবর ছিনতাইয়ের শিকার হন। সেরাতে হাসপাতালের কাজ শেষে নিজের খালাতো ভাইয়ের বাসায় যাওয়ার পথে সোনারগাঁয়ের পৌর এলাকার দৈলেরবাগে একদল ছিনতাইকারী ওই নারী ও তার দেবরকে আটকে তাদের সঙ্গে থাকা নগদ অর্থ ও স্বর্ণের চেইন নিয়ে যায়। এবং ভুক্তভোগী নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণও করা হয় বলে অভিযোগ তার।

সবশেষ গত ১৫ মার্চ দুপুরে মহাসড়কের সোনারগাঁয়ের দড়িকান্দি ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ‘দিবা এন্টারপ্রাইজ’ নামক একটি বেসরকারি কোম্পানির ম্যানেজারের মাইক্রোবাসের গতিরোধ করে ফিল্মি স্টাইলে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা ডাকাতি করা হয়। ভুক্তভোগীদের অস্ত্র ঠেকিয়ে তাদের সঙ্গে দুটি ব্যাগ ভরা টাকা নিয়ে যায় ডাকাত সদস্যরা।

সাইনবোর্ড, শিমরাইল মোড় ও কাঁচপুর বাসস্ট্যান্ডের টিকিট কাউন্টারের কয়েকজন কর্মকর্তা বলছেন, এখন পর্যন্ত যাত্রীর চাপ পড়েনি, ২৫ রোজার পর থেকে দম ফেলার সময় পাবে না বলে মনে করছেন তারা। যাত্রী এবং চালকদের নিরাপত্তায় প্রশাসনকে ভালো ভূমিকা রাখার আহ্বান তাদের।

এ বিষয়ে শিমরাইল হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ আবু নাঈম বলেন, ইতোমধ্যে সব স্থানে আমাদের অতিরিক্ত টিম কাজ করছে। আমরা সতর্ক আছি। পটপরিবর্তন পর এখন পর্যন্ত আমার অংশে ডাকাতি কিংবা ছিনতাই মামলা রুজু হয়নি।

কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াহিদ মোরশেদ জানান, টহল টিম কয়েকটি বাড়িয়ে দিয়েছি। আমরা দিবারাত্রি ডিউটি করছি। মানুষের কোনো ভোগান্তি হবে না।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহিনূর আলম বলেন, আমাদের একটি টিম ২৪ ঘণ্টার জন্যে চিটাগাংরোডে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি আরেকটি টিমও দেওয়া হয়। বর্তমানে এক টিম সিএনজি এবং আরেকটি পুলিশের গাড়িতে ডিউটি করছে।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ- সার্কেল) আসিফ ইমাম জাগো নিউজকে বলেন, এবারের ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় এসপি স্যারের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। মহাসড়কে ডাকাতি-ছিনতাই রোধে আমরা বাড়তি সিসি টিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা করেছি। পাশাপাশি এরইমধ্যে আমাদের টহল টিম বাড়ি দিয়েছি। মহাসড়কজুড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে।

এফএ/এএসএম