ঘনিয়ে এসে ঈদ। তাইতো শেষ সময়ে কেনাকাটার জন্য বিভিন্ন শপিংমলে ভিড় করেছেন ক্রেতারা। রাজধানীতে অবস্থিত বড় বড় শপিংমলের মধ্যে অন্যতম যমুনা ফিউচার পার্ক। ২০১৩ সালে চালু হওয়া ৪১০০০০০ বর্গফুটের এই শপিংমলে রয়েছে সব ধরণের পণ্য। এমনকি এটি দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ শপিং মল হিসাবে পরিচিত।
Advertisement
বিশাল এই শপিংমলে রয়েছে দেশি-বিদেশি সব ব্র্যান্ডের শোরুম। সব পণ্য একসাথে পাওয়া যায় বলে ভোগান্তি কমাতে অনেকেই চলে আসেন এখানে। শুধু রাজধানীবাসীই নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন ক্রেতারা। এক শোরুম থেকে আরেক শোরুম ঘুরে কিনছেন পছন্দের পোশাক। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত সুবিশাল এই শপিংমলে ভিড় থাকলেও রোজা রেখে ক্রেতারা স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করতে পারছেন।
এছাড়া এক জায়গায় পোশাক ছাড়াও গয়না, কসমেটিকস, ক্রোকারিজ, জুতা, পারফিউমসহ সব ধরনের পণ্য থাকায় ঈদ ঘিরে যমুনা ফিউচার পার্কে ঈদের কেনাকাটা বেশ জমজমাট।
এই শপিংমলে সবচেয়ে বেশি ভিড় লক্ষ্য করা গেছে পোশাকের দোকানগুলোতে। পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন অনেকে। এক শোরুম থেকে আরেক শোরুম ঘুরে কিনছেন হাল ফ্যাশনের পোশাক। বিশেষ করে ব্র্যান্ডের বিভিন্ন শোরুমে ভিড় করছেন ক্রেতারা।
Advertisement
প্রিয়জনের জন্য উপহার কিনতে এসেছেন জাহিদ নামের এক ক্রেতা। তিনি বলেন, ঢাকায় একটা কাজে এসেছি। শুনেছি এখানে নতুন নতুন ডিজাইনের সব পোশাক পাওয়া যায়। তাই ভাবলাম যেহেতু এসেছি পরিবারের জন্য কেনাকাটা করে ফেলি। এক সাথে দুটো কাজই হয়ে যাবে।
যমুনা ফিউচার পার্কে থাকা ইনফিনিটি, কে-ক্র্যাফট, অঞ্জন’স, আড়ং, জিন্স অ্যান্ড কোম্পানি, টুয়েলভ, রেড, জেন্টল পার্ক, টিন’স ক্লাব, প্লাস পয়েন্ট, কান্ট্রি বয়, রেঞ্জ, লা রিভ, আর্টিসান, টপ টেন পোশাকের ব্র্যান্ড ও শপগুলোয় প্রচুর ক্রেতাসমাগম দেখা যায়। সবাই যার যার পছন্দের পণ্য কিনতেই ভিড় করেছেন পছন্দের শপে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদের আর বেশি সময় বাকি নেই। দুয়েকদিন পরই পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ করতে গ্রামে যাবেন অনেকে। তাই এখন ভিড় বেড়েছে। প্রথমদিকে ক্রেতা তুলনামূলক কম থাকলেও এখন বেড়েছে। বেচাকেনাও ভালো হচ্ছে। তবে অন্য দিনের চেয়ে ছুটির দিন ভিড় অনেক বেশি হয়।
মাহিন নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, সাধারণত ইফতারের আগেই ব্যস্ততা বাড়ে বেচাকেনায়। সন্ধ্যায় অনেকে শপিংমলের ফুডকোর্টে ইফতার সেরে আবার কেনাকাটায় মেতে ওঠেন। ইফতারের পর ফের ক্রেতার ঢল নামে। অনেক রাত পর্যন্ত চলে কেনাকাটা।
Advertisement
আনিকা নামের এক তরুণী শপিং করে এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো মজার এক গল্প। আনিকা বলেন, আমার শপিং শেষ। মা-বাবা ও ছোট ভাইয়ের জন্য উপহার নিয়েছি। এখন বের হওয়ার রাস্তা খোঁজে পাচ্ছি না। এই শপিংমল এত বড় যে ভেতরে আসলে বের হওয়ার রাস্তা খোঁজে পেতে বেগ পেতে হয়। মনে হয় এটা একটা গোলকধাঁধা। কোনো কূল কিনারা পাই না।
আরও পড়ুন: ঈদেও নিষ্প্রাণ হল্যান্ড সেন্টার সাধ আর সাধ্যের মিলনমেলা মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট রাজধানীর বাড্ডায় ঈদের কেনাকাটাক্রেতাদের সার্বিক নিরাপত্তায় শপিংমলে নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। এ বিষয়ে শপিংমলটির জেনারেল ম্যানেজার (মল অপারেশন) এস এম নূর-ই সাইফুল্লাহ বলেন, ঈদকে সামনে রেখে এবং দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আমরা এবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছি। আমাদের এখানে ২৫০ জন নিরাপত্তাকর্মী সার্বক্ষণিক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আবার তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন কি না সেটি নিশ্চিত করতে আমাদের ১০ জনের বিশেষ টিম রয়েছে, যারা কন্ট্রোল রুম থেকে তত্ত্বাবধান করছেন। প্রায় ১২০০ সিসি ক্যামেরা রয়েছে পুরো শপিংমলে। এছাড়া যে কোনো চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ইত্যাদি রোধ করতে আমাদের ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম সার্বক্ষণিক প্রস্তুত।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন শপিংমলের পাশাপাশি যমুনা ফিউচার পার্ক বিনোদনের একটি জায়গাও বটে। তাই শপিংমলের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে পারি না। আমাদের এখানে দুইটি দেশের দূতাবাস (ভিসা সেন্টার) রয়েছে। তাই আমরা চেষ্টা করেছি নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে কীভাবে সাধারণ জনগণকে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়া যায়।
এদিকে যমুনা ফিউচার পার্কে ঈদ কেনাকাটায় আকর্ষণীয় ক্যাম্পেইনের আয়োজন করেছে যমুনা গ্রুপ। ঈদ ঘিরে যমুনা ফিউচার পার্কে কেনাকাটা করে কোটি টাকার উপহার জেতার সুযোগ রয়েছে। এ অফারের আওতায় শপিংমলের যে কোনো শোরুম থেকে সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকার কেনাকাটা করলেই থাকছে টিভি, ফ্রিজ, ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক পণ্যসহ নানান ধরনের আকর্ষণীয় উপহার জেতার সুযোগ। চাঁদরাত পর্যন্ত চলবে ক্যাম্পেইন।
ক্রেতারা যেন সহজে উপহার পেতে পারেন, সেজন্য শপিংমলের সেন্টার কোর্টে গিফটের পৃথক বুথ করা হয়েছে। পণ্য ক্রয়ের রসিদ নিয়ে সেখানে থাকা কিউআর কোড দিয়ে তথ্য দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতা উপহার জিতলে বুথ থেকে সংগ্রহ করতে পারছেন। এতে ক্রেতাদের ঈদ আনন্দে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা।
জেএস/এএসএম