বাসযোগ্য নগরী গড়তে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন পরিবেশবিদ ও নগর পরিকল্পনাবিদরা। তারা বলছেন, জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানিই দিতে পারে বাসযোগ্য শহরের নিশ্চয়তা।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) রাজধানীর বাংলামোটরে এক পলিসি ডায়ালগে বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘বাসযোগ্য শহরের জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির ভূমিকা’ শীর্ষক এ ডায়ালগের আয়োজন করে পাঁচটি সংগঠন।
সংগঠনগুলো হলো- বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি), বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ (বারসিক), সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি) এবং জেট নেট বিডি।
পলিসি ডায়ালগে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাপস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।
Advertisement
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে, যেখানে শিল্পায়ন ও নগরায়ণ দ্রুতগতিতে বাড়ছে, সেখানে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা উল্লেখযোগ্য। এই নির্ভরশীলতাই দেশের বর্তমান বায়ুমান পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে, যা ক্রমশ আরও তীব্র আকার ধারণ করছে।
তিনি বলেন, আইকিউ এয়ার ২০২৪ এর রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রধান শহর রাজধানী ঢাকা বায়ুদূষণের তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী, ঢাকার বায়ুমান সবসময়ই নিম্নমানের থাকে। সংস্থাটির মতে, বায়ুদূষণ প্রতি বছর প্রায় ৭০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটায় এবং একই সঙ্গে স্ট্রোক, হৃদরোগ, ফুসফুস ক্যানসার এবং শ্বাসতন্ত্রের রোগসহ বিভিন্ন গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়।
জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়িয়ে বসবাসযোগ্য শহর নিশ্চিত করতে হবে বলে মত দেন ক্যাপস চেয়ারম্যান।
ডায়ালগে গেস্ট অব অনারের বক্তব্যে স্টেট ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকী বলেন, প্রথম কথা হলো অবশ্যই সাধ্যমত জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে। এটি শুধু সরকার বা সরকারি সংস্থা বা শুধু নীতিমালার বিষয় নয়। এটি সচেতনতার বিষয়, প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব।
Advertisement
পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ুমান ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক জিয়াউল হক বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সৃষ্ট বায়ুদূষণ বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুতর সমস্যা, যা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তবে, সঠিক নীতি গ্রহণ ও কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।
সভাপতির বক্তব্যে বিআইপির প্রেসিডেন্ট পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য শক্তির প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি, পরিবহন ও শিল্পখাতে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করে আমরা একটি সুস্থ ও সবুজ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি। এটি শুধু বর্তমান প্রজন্মের জন্য নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করবে।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট, (ডব্লিউবিবিটি) এর পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিকল্প নেই। বাংলাদেশ বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, নদী দূষণ কমাতে জীবাশ্ম জালানির ব্যবহার কমিয়ে আনা এখন সময়ের দাবি।
এসময় সেন্টার ফর ল অ্যান্ড পলিসি অ্যাফেয়ার্সের সেক্রেটারি সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন ও বারসিক-এর সমন্বয়কারী মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
আরএএস/এমকেআর/জেআইএম