দেশজুড়ে

হাওরের বুকে চিরে সড়ক নির্মাণ, কৃষি-কৃষকের সর্বনাশ

ভাটির জেলা হিসেবে পরিচিত সুনামগঞ্জ। এখানকার অর্থনীতি মূলত ধানকেন্দ্রিক। চলতি বছর ১২ উপজেলার ১৩৭টি হাওরে প্রায় দুই লাখ ২৩ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষাবাদ করেছেন জেলার ১০ লাখেরও বেশি কৃষক। প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার ধান উৎপাদনের কথা রয়েছে। হাওরজুড়ে যখন বোরো ধানের সবুজের সমারোহ, তখন সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার সাংহাই হাওরের কৃষকদের চোখেমুখে বেদনার চাপ।

Advertisement

শ্রমে-ঘামে ফলানো কষ্টের ফসল গোলায় তোলার আগেই হাওরের বুক চিরে চলছে সড়ক নির্মাণের কর্মযজ্ঞ। চার কিলোমিটার সড়কের জন্য জমির ক্ষতিপূরণ পাওয়া তো দূরে থাক, ধান যে নষ্ট হচ্ছে সেটিও কৃষকদের বলার প্রয়োজন মনে করছেন না সংশ্লিষ্টরা।

শুধু তাই নয়, হাওরের বুক চিরে সড়ক নির্মাণে বর্ষা মৌসুমে স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ যেমন বাধাগ্রস্ত হবে, তেমনি উজানে দেখা দেবে চরম জলাবদ্ধতা। সেইসঙ্গে হাওরের জীববৈচিত্র্য হুমকির পাশাপাশি কমবে মাছের উৎপাদনও। যা দেখেও না দেখার ভান করছে উপজেলা প্রশাসন।

শান্তিগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অথার্য়নে এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ প্রকল্পের আওতায় হাওরে এই সড়ক নিমাণের কাজ করছে ঢাকার জেবি ইনোভেশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় চার কোটি টাকা। গত বছরের মার্চে এই হাওরে সড়কের কাজ শুরুর পরই পানি চলে আসায় কাজ বন্ধ হয়ে যায়। আবারও এক বছর পর মার্চের শুরুতেই হাওরে সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। দুটি ভেকু মেশিন দিয়ে অবাধে কেটে নেওয়া হচ্ছে ফসলি জমি।

Advertisement

হাওরের বুকে এমন সড়ক নির্মাণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কৃষকরা। তারা বলছেন, অহেতুক এই সড়ক নির্মাণে তাদের সর্বনাশ ছাড়া আর কোনো উপকারে আসবে না।

সাংহাই হাওরের কৃষক হাসান আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘হাওরের মাঝখান দিয়ে ধান নষ্ট করে যেভাবে অপরিকল্পিত সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে, সেটা সত্যিই দুঃখজনক। আমরা যারা এই হাওরের কৃষক, সবাই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবো।’

হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক তারিফ মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার চার একর জমি এরইমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। হাওরের মাঝ দিয়ে এমন সড়ক হাওরের জন্য ক্ষতিকর। জমিটুকু হারিয়ে আমি পথে বসে গেছি।’

কথা হয় হাওর নেতা ওবায়দুল হক মিলনের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, হাওরে এরকম সড়ক হলে হাওরের জীববৈচিত্র্য, কৃষি ও কৃষকের সর্বনাশ হয়ে যাবে। এই দিকে সরকারের নজর দেওয়া উচিত।’ তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মুরাদ আহমদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘যাদের ধান নষ্ট করে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। তবে যে জমিগুলো সড়ক নির্মাণের জন্য নেওয়া হচ্ছে, সেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে কি না সঠিক বলতে পারবো না।’

Advertisement

শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুকান্ত সাহা জাগো নিউজকে বলেন, ‘হাওরের মাঝপথ দিয়ে এমন সড়ক হওয়া উচিত না। কারণ এতে হাওরের জীববৈচিত্র্য নষ্ট হবে। তবে কোনো কৃষকের জমি যদি না বলে কেটে নেওয়া হয় আর কেউ অভিযোগ করেন, তাহলে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, হাওরের প্রকৃতি, পরিবেশ এবং কৃষকদের ক্ষতি করে কোনো কাজ করা ঠিক হবে না। এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে।

লিপসন আহমেদ/এসআর/এমএস