ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক সংকট ক্রমশ বাড়ছে। দুর্নীতির মামলায় আদালতে নতুন শুনানি, গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের প্রধানকে বরখাস্তের চেষ্টা নিয়ে জনরোষ এবং তার সরকার ও বিরোধীদের চাপ—এসব সমস্যা মোকাবিলায় তিনি আবারও যুদ্ধের পথ বেছে নিয়েছেন। গত মঙ্গলবার থেকে গাজায় ফের হামলা শুরু করেছে তার বাহিনী।
Advertisement
এর ফলে, আপাতত নেতানিয়াহুর এসব সংকট অনেকটা আড়ালে চলে গেছে। আদালতে তার শুনানি স্থগিত হয়েছে, শিন বেতের প্রধান বরখাস্তের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত বিক্ষোভ ম্লান হয়ে গেছে এবং যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে থাকা রাজনীতিকরা সন্তুষ্ট হয়েছেন।
আরও পড়ুন>>
গাজায় ইসরায়েলি হামলা: নিহত বেড়ে ৪০৪ ট্রাম্পের সঙ্গে পরামর্শ করেই গাজায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা, নেতানিয়াহু বললেন ‘কেবল শুরু’ গাজায় ইসরায়েলি হামলা: দেশে দেশে নিন্দার ঝড়বিপরীতে, নেতানিয়াহুর এই সিদ্ধান্ত গাজায় ভয়াবহ পরিণতি বয়ে এনেছে। মাত্র এক রাতের বিমান হামলায় চার শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং ধারণা করা হচ্ছে, সামনে আরও প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞ অপেক্ষা করছে।
Advertisement
সাবেক ইসরায়েলি কূটনীতিক অ্যালন পিংকাস আল-জাজিরাকে জানান, নেতানিয়াহুর নির্দেশে চালানো রাতের বিমান হামলাগুলো পুরোপুরি ‘টিকে থাকার রাজনৈতিক কৌশল’। তিনি বলেন, শিন বেতের প্রধান বরখাস্তের ঘটনা থেকে দৃষ্টি সরাতেই এই হামলা করা হয়েছে।
পিংকাস আরও বলেন, এই হামলাগুলোতে কোনো সামরিক তাৎপর্য নেই এবং রাজনৈতিক সমাপ্তির কোনো লক্ষ্যও নেই।
নেতানিয়াহুর সমালোচকরা দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করছেন, তিনি গাজায় চলমান যুদ্ধকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছেন। ২০২৪ সালের জুনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও ইঙ্গিত দেন, নেতানিয়াহু রাজনৈতিক স্বার্থে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছেন।
যুদ্ধের কারণে জিম্মিদের ঝুঁকিযুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া এবং দুই মাসের যুদ্ধবিরতি একতরফাভাবে বাতিল করায় নেতানিয়াহু তার সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি গোষ্ঠীর সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছেন, তারা হলেন গাজায় জিম্মি ইসরায়েলি নাগরিকদের পরিবার।
Advertisement
এই পরিবারগুলো বরাবরই নেতানিয়াহু সরকারকে অভিযুক্ত করে আসছে যে, তার প্রতিটি যুদ্ধকেন্দ্রিক সিদ্ধান্ত তাদের প্রিয়জনদের জীবন আরও ঝুঁকিতে ফেলছে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী গাজায় আটক থাকা ৫৯ জন ইসরায়েলিকে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যুদ্ধবিরতি বাতিলের কারণে সেই সম্ভাবনা ধূলিসাৎ হয়ে গেছে।
জিম্মিদের পরিবারের সংগঠন এক বিবৃতিতে জানায়, সরকার জিম্মিদের বাঁচানোর কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই হামলা শুরু করেছে, যা মূলত তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার শামিল।
আন্দোলনের প্রস্তুতি‘স্ট্যান্ডিং টুগেদার’ নামে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি নাগরিকদের নিয়ে গঠিত একটি প্রগতিশীল সংগঠন জানায়, গাজায় আবার হামলা শুরুর প্রতিবাদে তারা হাজারও মানুষকে রাস্তায় নামানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সংগঠনের সহ-পরিচালক অ্যালন লি গ্রিন বলেন, আমরা এমন এক যুদ্ধে অংশ নিতে চাই না, যা আমাদের জিম্মিদের হত্যা করবে।
ডানপন্থিদের উল্লাসযুদ্ধবিরতি চুক্তির বিরোধিতা করা ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থি রাজনীতিকরা এই হামলায় ব্যাপক সমর্থন দিচ্ছেন। যুদ্ধবিরতির বিরোধিতা করে গত জানুয়ারিতে পদত্যাগ করেছিলেন তৎকালীন জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গিভির। গত মঙ্গলবার ফের হামলা শুরুর পর সরকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ফিরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে, উগ্র-জাতীয়তাবাদী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচও হামলা নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, যুদ্ধ এখন সম্পূর্ণ নতুন রূপ নেবে। আমাদের অবশ্যই শক্তি, বিশ্বাস ও সংকল্প নিয়ে এগোতে হবে যতক্ষণ না চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।
এই যুদ্ধ এরই মধ্যে ৬০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। নেতানিয়াহুর নতুন সিদ্ধান্তে আরও প্রাণহানির আশঙ্কা বাড়ছে।
সূত্র: আল-জাজিরাকেএএ/