মালয়েশিয়ার চলচ্চিত্র শিল্পকে বিশ্বমঞ্চে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশি চলচ্চিত্র নির্মাতা ও উদ্যোক্তা জাফর ফিরোজ। সম্প্রতি তিনি কুয়ালালামপুর ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।
Advertisement
কুয়ালালামপুর ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডস এরই মধ্যে বিশ্বের ১৫৩টি দেশের সাত হাজারেরও বেশি চলচ্চিত্রকে এক মঞ্চে এনেছে, যা মালয়েশিয়াকে বৈশ্বিক চলচ্চিত্র কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার পথে এগিয়ে নিচ্ছে। এটি শুধু একটি চলচ্চিত্র উৎসব নয় বরং ফিল্ম মার্কেট, প্রতিভা ব্যবস্থাপনা এবং প্রশিক্ষণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
জাফর ফিরোজের নেতৃত্বে কুয়ালালামপুর ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডস নতুন দুটি প্রধান উদ্যোগ গ্রহণ করেছে—আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ, মাস্টারক্লাস ও প্যানেল ডিসকাশন আয়োজন করছে, যা নতুন ও অভিজ্ঞ নির্মাতাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষামূলক প্ল্যাটফর্ম।
আন্তর্জাতিক প্রযোজক, পরিবেশক, স্টুডিও ও বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন সহযোগিতার সুযোগ তৈরি করছে। এটি বিশেষভাবে বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, চীন ও মধ্যপ্রাচ্যের চলচ্চিত্র শিল্পকে বিশ্ববাজারের সঙ্গে সংযুক্ত করতে কাজ করছে।
Advertisement
জাফর ফিরোজ বর্তমানে সাউথ ইস্ট এশিয়া পিক্সারস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী মূলত সিনে ইমপ্যাক্ট মালয়েশিয়া প্রজেক্ট নিয়ে হংকং ও দুবাই ক্রিয়েটিভ ইকোনমি জোনের সঙ্গে কাজ করছে।
জাফর ফিরোজের রয়েছে অ্যাকাডেমিক শিক্ষায় ব্যাপক অভিজ্ঞতা এবং চলচ্চিত্র শিল্পে গভীর দক্ষতা। তিনি মালয়েশিয়ার লিমককউইং ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি থেকে ডিজিটাল ফিল্ম ও টেলিভিশন বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এর আগে তিনি বাংলাদেশের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। চলচ্চিত্র নির্মাণ ও পরিচালনায় বিশেষায়িত শিক্ষা নেওয়ার জন্য তিনি ভারতের বিখ্যাত মুম্বাই ফিল্ম একাডেমি থেকে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা অর্জন করেছেন। এই প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতা তাকে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র জগতে একটি স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করতে সাহায্য করেছে।
জাফর ফিরোজ চলচ্চিত্র জগতে তার দক্ষতা ও মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় প্রকল্পে। তিনি সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রে। Reborn (2018): চীনা পরিচালক লি হাইলং এবং হলিউড প্রযোজক আন্দ্রে মরগানের সাথে কাজ করেছেন এই চলচ্চিত্রে। A Tale of an Old Town এবং Time Sighs as Water: দুটি চাইনিজ চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে তার অবদান চলচ্চিত্র জগতে তার আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি করেছে।
২০০৯ সালে তিনি বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘দুরবিন’ নির্মাণ করেন, যা বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে একটি মাইলফলক হিসেবে স্বীকৃত। বর্তমানে তিনি মালয়েশিয়ায় নির্মিত থ্রিলার চলচ্চিত্র ‘জেনুবিয়া’ পরিচালনা করছেন, যা তার পরিচালনায় আরও একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন হতে যাচ্ছে।
Advertisement
জাফর ফিরোজ শুধু একজন চলচ্চিত্র নির্মাতাই নন, তিনি একজন দক্ষ চিত্রনাট্যকার এবং সাহিত্যিক হিসেবেও সমানভাবে পরিচিত। তার চিত্রনাট্য "The Uncertainty" আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।
এছাড়াও, তিনি সাহিত্য জগতেও তার সৃজনশীলতার ছাপ রেখেছেন— ‘খুকি ও প্রজাপতি’ (২০১৮): শিশুতোষ ছড়ার বই, যা শিশুদের কল্পনা ও বন্ধুত্বকে উৎসাহিত করে। ‘আবছায়া’ (২০২২): কবিতার সংকলন, যেখানে প্রেম, দেশপ্রেম ও মানবতার কাব্যিক অনুসন্ধান ফুটে উঠেছে। এপ্রিলে মালয়েশিয়া থেকে প্রকাশিত হবে বাস্তব জীবনের ঘটনা নিয়ে উপন্যাস ‘চৌরাস্তা’। মালয়েশিয়ায় এক বাংলাদেশি অভিবাসী শিক্ষার্থীর সংগ্রাম ও স্বপ্নের উপন্যাস। এটি শুধু একটি গল্পই নয়, এটি মধ্যবিত্ত পরিবারের সংগ্রাম, অভিবাসীর কষ্ট এবং রাষ্ট্রের নিষ্ঠুর বাস্তবতার একটি দলিল হবে।
জাফর ফিরোজ সামাজিক উন্নয়ন ও সংগঠনেও সক্রিয়ভাবে জড়িত। কমনওয়েলথ ইয়ুথ ইনোভেশন হাব-এর মিডিয়া পরিচালক। যেখানে যুব নেতৃত্ব ও প্রযুক্তির মাধ্যমে উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ ফোরাম অ্যাসোসিয়েশন (MBFA)-এর সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি প্রবাসীদের জন্য সাংস্কৃতিক বিনিময়, দাতব্য কাজ ও শিক্ষা উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
তার সাহিত্যকর্ম ও সামাজিক উদ্যোগগুলো শিল্প, সংস্কৃতি ও সমাজের উন্নয়নে তার গভীর প্রতিশ্রুতিরই প্রতিফলন। আগামী ৭ নভেম্বর ২০২৫ কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত হবে KLIFA-এর পরবর্তী আসর। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র নির্মাতা, শিল্পী, প্রযোজক ও পরিবেশকরা এতে অংশ নেবেন।
জাফর ফিরোজের নেতৃত্বে KLIFA মালয়েশিয়ার চলচ্চিত্র শিল্পকে বিশ্ব-দরবারে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তার এই উদ্যোগ শুধু মালয়েশিয়ার জন্যই নয়, পুরো এশিয়ার চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।
এমআরএম/এমএস