দেশজুড়ে

ফুটপাতে জমে উঠছে ঈদের কেনাকাটা

ময়মনসিংহে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। শহরের বিপণীবিতান ছাড়াও ফুটপাতের দোকানের মানুষের ভিড় বাড়ছে। যে যার মতো করে সারছেন কেনাকাটা।

Advertisement

শহরের বাসাবাড়ি হকার্স মার্কেটের ফুটপাত থেকে পছন্দের জামা-কাপড় কেনার সময় জাগো নিউজের সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন হনুফা খাতুন। তিনি মহানগরীর দাসপাড়া এলাকার বাসিন্দা। স্বামী কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। পরিবারে রয়েছে ছোট্ট তিন ছেলে-মেয়ে। প্রতিবছর কম টাকার মধ্যে হনুফা খাতুনই ঈদের কেনাকাটা করেন। বাজেটের মধ্যে যা কিনেন, তাতেই পরিবারের সবাই খুশি হন।

হনুফা বলেন, কত্তো সুন্দর সুন্দর বড় বড় মার্কেট। কত্তো লোক ইচ্ছামতো কেনাকাটা করতাছে। হেগর (তাদের) ট্যাহা আছে, তাই অইনো (শপিংমলে) গেছে। আমি কম ট্যাহা লয়্যা আইছি। তাই ফুটপাত থাইক্যা বাইচ্ছা বাইচ্ছা ভালা জামাকাপড় কিনবাম।

এসময় কথা হয় ফরিদা ইয়াসমিন নামের আরেকজনের সঙ্গে। তিনি ফুটপাত থেকে বাচ্চার জন্য জামা কিনছিলেন। ফরিদা বলেন, আমার স্বামী মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ। একটি কোম্পানিতে চাকরি করে চার সদস্যের ভরণপোষণ করেন। রমজান মাসে সংসারে খরচ বেড়েছে। তবুও নিজের জন্য কিছু না কিনলেও ছোট্ট বাচ্চারাতো মানবে না। তাই সাধ্যের মধ্যে কেনাকাটা করতে ফুটপাতে এসেছি। এখানে পোশাকের দামও অনেক কম।

Advertisement

এদিকে শহরের স্টেশন রোড, গাঙ্গিনারপাড়, রামবাবু রোড, নতুন বাজার, সিকে ঘোষ রোড ও চরপাড়া এলাকায় গড়ে ওঠা বিপণি-বিতানগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতারা পছন্দের পোশাক কিনছেন। অনেকে পোশাক না কিনে দেখতেও আসছেন। দামাদামি করে ফিরে যেতেও দেখা গেছে অনেককে। তবে এক রেটের অনেক দোকানগুলোতে জমজমাট বেচাকেনা দেখা গেছে।

বিক্রেতারা জানিয়েছেন, সৌখিন মানুষজন দামাদামি পছন্দ করেন না। তাই এক দামে পোশাক কিনতে ক্রেতারা ভিড় জমাচ্ছেন। তবে অনেকে পোশাক দেখলেও না কিনেই বাড়ি ফিরছেন। আগামী সপ্তাহের মধ্যে বিক্রি আরও জমজমাট হয়ে উঠবে।

গাঙ্গিনারপাড় এলাকায় বাড়িপ্লাজা শপিংমল থেকে পরিবারের জন্য বিভিন্ন পোশাক কিনে চলে যাচ্ছিলেন আনোয়ার হোসেন। এসময় কথা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, গত বছরের চেয়ে প্রায় সবধরনের পোশাকের দাম বেশি রাখছে ব্যবসায়ীরা। এতে আমাদের কিছু করার নেই। পরিবারের সবার জন্য সার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি ও শাড়ি কেনা হয়েছে।

কাজী টাওয়ার থেকে কেনাকাটা করছিলেন যুবক ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, পাঞ্জাবি কিনতে এসেছিলাম। গত বছরের চেয়ে দাম অনেক বেশি। তবুও পছন্দ হলে কিনবো।

Advertisement

দাম বেশি রাখার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে এ মার্কেটের ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদিন জাগো নিউজকে বলেন, নামি-দামি ব্রান্ডের বিভিন্ন পোশাক এ শপিংমলে তোলা হয়েছে। গত বছরের চেয়ে পাইকারিভাবে আমরা কিছুটা বাড়তি দামে কিনে এনেছি। তাই ক্রেতা পর্যায়ে দামে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। এ শপিংমলে এখনো বিক্রি খুব জমজমাট না হলেও কয়েকদিনের মধ্যে বিক্রি বেড়ে যাবে বলে আশা করছি।

বাড়িপ্লাজা শপিংমলের বিক্রেতা সোহেল রানা বলেন, এবার মেয়েদের কালেকশন বাড়ানো হয়েছে। বিপুল পরিমাণ পোশাক রেখেছি। এ শপিংমলে সবধরনের বিভিন্ন বয়সী মানুষের পোশাক বিক্রি হলেও এখন পর্যন্ত নারী ক্রেতার সংখ্যাই বেশি।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ইতোমধ্যে ফুটপাতসহ নামি-দামি বিপণি-বিতানগুলোতে ক্রেতাদের উপস্থিতি বাড়তে শুরু করেছে। এ সুযোগে চোর ও ছিনতাইকারীর উৎপাত বাড়তে পারে। সেজন্য পুলিশ সদস্যরা শহরে সারাক্ষণ টহল দিচ্ছে। চুরি-ছিনতাই পুরোপুরি বন্ধ করতে পুলিশের চেষ্টার কমতি নেই। তবে কেনাকাটা করতে আসা লোকজনকেও সতর্ক থাকতে হবে।

কামরুজ্জামান মিন্টু/আরএইচ/এএসএম