ভেনেজুয়েলার দুই শতাধিক নাগরিককে এল সালভাদরের একটি সুপারম্যাক্স কারাগারে স্থানান্তর করেছে যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে ভেনেজুয়েলার এই নাগরিকদের একটি গ্যাং দলের সদস্য হিসেবে অভিযোগ আনা হয়েছে। একজন মার্কিন বিচারক এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করার পরেও তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। খবর বিবিসির।
Advertisement
এল সালভাদোরের প্রেসিডেন্ট নায়েব বুকেলে সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে লিখেছেন, স্থানীয় সময় রোববার (১৬ মার্চ) সকালে আন্তর্জাতিক এমএস-১৩ গ্যাংয়ের ২৩ জন সদস্যের সঙ্গে ভেনেজুয়েলার গ্যাং ট্রেন ডি আরাগুয়ার ২৩৮ জন সদস্য মধ্য আমেরিকার দেশটিতে পৌঁছেছেন ।
মার্কিন প্রশাসন বা এল সালভাদর কেউই আটক হওয়া ব্যক্তিদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানায়নি বা তাদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বা গ্যাং দলের সদস্য হিসেবে তাদের বিষয়ে তথ্য প্রদান করেনি।
ভেনেজুয়েলার এসব নাগরিককে বহিষ্কারে শতাব্দীর প্রাচীন যুদ্ধকালীন আইন প্রয়োগ করতে এক ফেডারেল বিচারক বাধা প্রদান করলেও তা মানেনি ট্রাম্প প্রশাসন। এরই মধ্যে এসব নাগরিককে নিয়ে এল সালভাদরের উদ্দেশে বেশ কিছু ফ্লাইট ছেড়ে গেছে।
Advertisement
বিচারকের রায়ের কথা উল্লেখ করে বুকেলে সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে বলেন, উফ... অনেক দেরি হয়ে গেছে। তার একটি পোস্টের সঙ্গে সংযুক্ত একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, হাত-পা শিকল দিয়ে বাঁধা অবস্থায় লাইনে দাঁড়িয়ে আছে বেশ কয়েকজন। সশস্ত্র কর্মকর্তারা তাদের বিমান থেকে নামিয়ে আনছেন।
এদিকে আদালতের রায় লঙ্ঘন করার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট। তিনি বলেন, প্রশাসন আদালতের আদেশ মানতে অস্বীকৃতি জানায়নি। তিনি ভেনেজুয়েলার ওই গ্যাং দলের সদস্যদের এলিয়েন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ক্যারোলিন লিভিট বলেন, আমেরিকান ভূখণ্ড থেকে সন্ত্রাসী টিডিএ (ট্রেন ডি আরাগুয়া) এলিয়েনদের এরই মধ্যে সরিয়ে দেওয়ার পর এই আদেশ জারি করা হয়েছে যার কোনো আইনি ভিত্তি ছিল না।
এর আগে গত শনিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন যে, তিনি ১৭৯৮ সালের এলিয়েন এনিমিস অ্যাক্ট আইন প্রয়োগ করে একটি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছেন। সেখানে তিনি ট্রেন ডি আরাগুয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানোর চেষ্টা করা এবং হুমকি দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘অনিয়মিত যুদ্ধে’ লিপ্ত থাকার জন্য এই গ্যাংয়ের সদস্যদের নির্বাসিত করা হবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় শেষবার জাপানি-আমেরিকান বেসামরিক নাগরিকদের আটক করার জন্য এ ধরনের আইন ব্যবহার করা হয়েছিল।
Advertisement
শনিবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন ডিসির জেলা বিচারক জেমস বোসবার্গ ট্রাম্পের ঘোষণার আওতায় থাকা লোকজনকে বহিষ্কারের ওপর ১৪ দিনের স্থগিতাদেশের আদেশ দেন। মার্কিন গণমাধ্যম জানিয়েছে, আইনজীবীরা যখন তাকে জানান যে নির্বাসিতদের বহনকারী বিমানগুলো এরই মধ্যে ছেড়ে গেছে তখন বিচারক বোসবার্গ ফ্লাইটগুলোকে ফিরিয়ে আনার জন্য মৌখিক নির্দেশ দেন। যদিও সেই নির্দেশ তার লিখিত রায়ের অংশ ছিল না। তবে এসব ফ্লাইট কখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ছেড়ে গেছে তা এখনও স্পষ্ট নয়।
রবিবার আদালতে দাখিল করা এক মামলায় বিচার বিভাগের আইনজীবীরা বলেছেন, এই আদেশ প্রযোজ্য হয়নি কারণ নির্বাসিতদের এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ড থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ট্রাম্পের এলিয়েন এনিমি অ্যাক্টের সমালোচনা করে ভেনেজুয়েলা বলছে, এটা ভেনিজুয়েলার অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অন্যায়ভাবে অপরাধী করে তুলেছে এবং মানবতার ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার ঘটনাগুলোকে উস্কে দিচ্ছে।
এদিকে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো ট্রাম্পের নিন্দা করেছে। তারা অভিযোগ করেছে যে, তিনি ২২৭ বছরের পুরোনো আইন ব্যবহার করে যথাযথ প্রক্রিয়াকে এড়িয়ে যাচ্ছেন।
ট্রাম্পের মিত্র প্রেসিডেন্ট বুকেলে লিখেছেন যে, আটক হওয়া ব্যক্তিদের তাৎক্ষণিকভাবে এল সালভাদরের কুখ্যাত মেগা-কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে। নবনির্মিত সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ওই কারাগারের ধারণ ক্ষমতা ৪০ হাজার। সেখানকার বন্দীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণের অভিযোগ এনেছে বিভিন্ন মানবাধিকার গোষ্ঠী।
আরও পড়ুন: মঙ্গলবার পুতিনের সঙ্গে কথা বলবেন ট্রাম্প ভারতে পুলিশের সামনেই তারাবির সময় মসজিদে ‘হামলা’ ভারতে হোলি উৎসবের জন্য ত্রিপলে ঢেকে দেওয়া হলো মসজিদদুদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের অংশ হিসেবেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে বন্দিদের এল সালভাদরের কারাগারে প্রেরণ করা হচ্ছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর দ্বিতীয় দেশ হিসেবে এল সালভাদরে সফর করেন মার্কো রুবিও।
টিটিএন