প্রতিষ্ঠার ১০ বছরেও স্থায়ী ক্যাম্পাস হয়নি হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজের। সদর আধুনিক হাসপাতালের নতুন ভবনের দুটি ফ্লোর আর ছাদে কোনোরকম চলছে পাঠদান। ছোট ছোট কয়েকটি কক্ষে চলছে প্রশাসনিক কার্যক্রম। এতে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জেলাবাসী।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য অনেকটা দুর্গম হাওরে স্থান নির্ধারণ করেন সাবেক এমপি মো. আবু জাহির। এ হাওরটি মূলত তার নিজ গ্রামে রিচিতে অবস্থিত। তাই এই জায়গায় মেডিকেল কলেজ করার প্রতি ঝোঁক ছিল তার। অথচ হাওরটি অতি বন্যাপ্রবল এলাকা। প্রতি বর্ষাতেই এখানে প্রবল বন্যা হয়। তাছাড়া যাতায়াতের জন্যও রয়েছে মাত্র একটি সড়ক। অথচ জেলা সদরের বিভিন্ন স্থানে সরকারি জমি রয়েছে, যেখানে একাধিক যাতায়াত সুবিধা আছে। জমিও উঁচুতে। এসব জমিতে মেডিকেল কলেজ স্থাপন করলে সরকারের ব্যয় সাশ্রয় হবে দুই তৃতীয়াংশ।
কলেজশিক্ষক আলী আজমল উজ্জ্বল জাগো নিউজকে বলেন, ‘সরকার চাইলে সরকারি জমি যেকোনো প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারে। যেমন সদর হাসপাতালের ঠিক পাশেই একটি সাব পোস্ট অফিসের বিপুল পরিমাণ জমি রয়েছে। সেখানে একটি মেডিকেল কলেজ করা সম্ভব। এখানে মাত্র কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য এত বড় জমির কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।’
তিনি বলেন, ‘প্রধান ডাকঘর দোতলা করে এ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সেখানে স্থানান্তরিত করা যেতে পারে। সরকার চাইলেই এটি সম্ভব। এখানে জমি অধিগ্রহণের বিষয় নেই। খরচও অনেক সাশ্রয় হবে। যাতায়াত ব্যবস্থাও অনেক ভালো।’
Advertisement
ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় সমাজকর্মী তারেক ইকবাল খান বলেন, ‘বন্যাপ্রবল এলাকায় কেন মেডিকেল কলেজ করতে হবে? মেডিকেল কলেজ করার জন্য যাতায়াত ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে মেডিকেলের জন্য সবচেয়ে উত্তম জায়গা আমার মনে হয় ধুলিয়াখাল বাইপাস সড়কের পাশে জমিগুলো। এখানে মডেল টাউনের জন্য জমি সরকারের অধিগ্রহণ করা আছে। গত ৭-৮ বছরে এখানে কেউ হয়তো জমি কেনেননি। তাহলে এ জমি ফেলে না রেখে সেখানেই মেডিকেল কলেজ করা সম্ভব। চাইলে এর পাশেও জমি নিতে পারে।’
পরিবেশবাদী তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘নির্ধারিত স্থানটি নিচু এলাকা। বারিপাত অঞ্চল। বৃষ্টির পানির আধার এবং কৃষির কথা মাথায় রেখে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করা প্রয়োজন। যোগাযোগ, প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা, শিক্ষার পরিবেশ, ভবন নির্মাণে আর্থিক বিষয়াদিসহ পরিবেশ এবং ভৌগোলিক অবস্থা বিবেচনায় এনে কলেজের অবকাঠামো করা উচিত। মেডিকেল কলেজের জন্য অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থান বিবেচনায় আনা উচিত। আর তা না হলে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।’
এ বিষয়ে হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জাবেদ জিল্লুল বারী বলেন, ‘মেডিকেলের স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য আসলে একাধিক রাস্তা রয়েছে এমন জায়গা সবচেয়ে উত্তম। যদি একটি রাস্তা থাকে, তাহলে যানজট সৃষ্টি হলে রোগী নিয়ে মেডিকেলে পৌঁছানো দুষ্কর হয়ে পড়বে। আমি মনে করি আমাদের সব সমস্যার সমাধান একটি স্থায়ী ক্যাম্পাসের মাধ্যমেই সম্ভব। এটি হওয়ার আগে পর্যন্ত সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।’
মেডিকেল কলেজের কাগজপত্র পর্যালোচনা করে জানা যায়, ২০১৫ সালে হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়। ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষে ৫১ জন শিক্ষার্থী ভর্তির মাধ্যমে মেডিকেল কলেজটির যাত্রা শুরু হয়। অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে ২৫০ শয্যা আধুনিক হাসপাতালের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় স্থান দেয়া হয়। বর্তমানে মেডিকেল কলেজটিতে ৪৪৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন।
Advertisement
মেডিকেল কলেজটির স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য শহরতলির অতি বন্যাপ্রবল এলাকা হিসেবে পরিচিত রিচি গ্রামের হাওরে জমি বাছাই করা হয়। তার ইচ্ছাতেই মূলত এখানে জমি চিহ্নিত করা হয়। মেডিকেলের ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ৪৭৫ কোটি ১৯ লাখ ৪১ হাজার টাকা। অথচ জমিটি একদিকে যেমন নিচু, অন্যদিকে এখানে যাতায়াতের জন্য মাত্র একটি সড়ক রয়েছে। সেটিও দিনের বেশিরভাগ সময় যানজট থাকে।
এসআর/জিকেএস