আন্তর্জাতিক

সার্বিয়ায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভে লাখ লাখ মানুষ, গড়লো ইতিহাস

সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে শনিবার (১৫ মার্চ) দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। একটি রেলস্টেশন ধসে ১৫ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে কয়েক লাখ মানুষ এদিন রাজপথে নেমে আসে।

Advertisement

সরকার দাবি করেছে, বেলগ্রেডজুড়ে মোট ১ লাখ ৭ হাজার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে। তবে স্বাধীন পর্যবেক্ষক সংস্থা পাবলিক মিটিং আর্কাইভের মতে, এ সংখ্যা ৩ লাখ ২৫ হাজারের বেশি হতে পারে, যা সার্বিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জনসমাগম।

আরও পড়ুন>>

নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ/ সরকারবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল সার্বিয়া সার্বিয়ায় নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে বিক্ষোভ, আটক ৩৮ ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল সার্বিয়া, কথা বলতে চান প্রেসিডেন্ট

গত বছরের নভেম্বরে নোভি সাদ শহরে স্টেশনের ছাদ ধসের ঘটনায় তীব্র জনরোষ তৈরি হয়। বিক্ষোভকারীরা দাবি করছেন, সরকারের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণেই এই বিপর্যয় ঘটেছিল। প্রেসিডেন্ট আলেকসান্ডার ভুচিচের দল প্রগ্রেসিভ পার্টির এক দশকের শাসনের প্রতিফলন হিসেবে তারা এই ঘটনাকে দেখছেন। ভুচিচ নিজেই ২০২২ সালে স্টেশনটির সংস্কার উদ্বোধন করেছিলেন।

Advertisement

প্রতিবাদে উত্তাল বেলগ্রেড

বিক্ষোভকারীরা ‘১৫ জনের জন্য ১৫তম’ শিরোনামে শনিবারের বিশাল সমাবেশের আয়োজন করেন। বেলগ্রেডের বিভিন্ন স্থানে চারটি মূল মিলনস্থল ছিল। এদিন ঐতিহ্যবাহী রিপাবলিক স্কয়ার রীতিমতো জনসমুদ্র পরিণত হয়, প্রিন্স মিহাইলো ভাস্কর্যের ওপর উঠে দাঁড়ান অনেকেই। ন্যাশনাল মিউজিয়ামের সামনের রাস্তা থেকে স্টুডেন্ট স্কয়ার পর্যন্ত মানুষ ভিড় জমায়।

বিক্ষোভে আইনজীবী, কৃষক ও ট্যাক্সিচালকদের পাশাপাশি সামরিক বাহিনীর সাবেক সদস্যরাও যোগ দেন। বিক্ষোভকারীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে মোটরসাইকেল আরোহীরা সংসদ ভবনের সামনে অবস্থান নেন, অন্যদিকে ট্রাক্টর নিয়ে কৃষকরা সেখানে জড়ো হন।

প্রতিবাদকারীরা চান, স্টেশন সংস্কারের সব নথিপত্র প্রকাশ করা হোক এবং দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা হোক। যদিও কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে সাবেক নির্মাণমন্ত্রী গোরান ভেসিকসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে, তবে মামলাগুলো এখনো বিচারের মুখোমুখি হয়নি।

সরকারের প্রতিক্রিয়া

শনিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রেসিডেন্ট আলেকসান্ডার ভুচিচ পুলিশ বাহিনীর প্রশংসা করে বলেন, আমরা শান্তি বজায় রাখতে পেরেছি, এতে আমি গর্বিত। তিনি স্বীকার করেন, প্রতিবাদকারীদের ক্ষোভের যৌক্তিকতা রয়েছে এবং বলেন, আমাদের নিজেদের পরিবর্তন আনতে হবে।

Advertisement

তবে, পদত্যাগের দাবি প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, আমি ব্ল্যাকমেইলের কাছে নতি স্বীকার করবো না। আমি এই দেশকে একটি ভয়াবহ ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিতে দেবো না।

প্রধানমন্ত্রী মিলোশ ভুচেভিচ জানুয়ারির শেষদিকে পদত্যাগের ঘোষণা দিলেও সেটি এখনো জাতীয় পরিষদে অনুমোদিত হয়নি। ফলে তিনি এখনো দায়িত্বে রয়েছেন।

শিক্ষার্থীদের অবস্থান অব্যাহত

এই বিক্ষোভের সূত্রপাত শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে হলেও পরে বিভিন্ন পেশার মানুষ এতে যোগ দেন। তারা বলছেন, প্রকৃত দোষীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

বেলগ্রেড বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্রী জানা ভাসিক বলেন, আমরা কেবল একটি কার্যকর রাষ্ট্র চাই। আমরা চাই, প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করুক। ক্ষমতায় কারা আছে, সেটা আমাদের বিবেচ্য নয়, আমরা শুধু একটি সঠিক বিচার ব্যবস্থা চাই।

বিক্ষোভ চলাকালীন এখন পর্যন্ত ২২ জনকে আটক করা হয়েছে এবং ৫৬ জন আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে।

সূত্র: বিবিসিকেএএ/