ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি বদলে যাওয়ায় ইউরোপের দেশগুলো নতুন এক বাস্তবতায় প্রবেশ করছে। দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ট্রাম্পের বিতর্কিত অবস্থান ইউরোপজুড়ে বিস্ময় ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। তবে সেই হতাশাই যেন ইউরোপকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার নতুন অনুপ্রেরণা দিচ্ছে।
Advertisement
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ইউরোপীয় নিরাপত্তার অন্যতম ভিত্তি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ট্রান্সআটলান্টিক জোট। কিন্তু ট্রাম্পের শাসনামলে এই সম্পর্কের ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে পড়ছে। এক সময়ের নির্লিপ্ত ইউরোপ এখন দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। ইউক্রেন নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিধাগ্রস্ত নীতি, ন্যাটো মিত্রদের প্রতি ট্রাম্পের অবজ্ঞা এবং তার বেপরোয়া বক্তব্য ইউরোপকে বাধ্য করেছে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বিষয়ে নিজেদের করণীয় পুনর্বিবেচনা করতে।
আরও পড়ুন>>
ইউক্রেনে মার্কিন অস্ত্র সহায়তা স্থগিত হওয়া কী শিক্ষা দেয়? ইউক্রেন সংকটে ইউরোপ কি এবার সাহসী পদক্ষেপ নেবে? ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপের বিপজ্জনক টানাপোড়েনট্রাম্পের আগ্রাসী কূটনৈতিক অবস্থান ও ন্যাটো মিত্রদের অবমূল্যায়ন ইউরোপের ঐক্যে বিভাজন সৃষ্টি করতে পারতো। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, ইউরোপীয় দেশগুলো এখন আরও দৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। জার্মানির নতুন চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ বলেছেন, ইউরোপকে এখন ‘যেকোনো মূল্যে’ নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে। জার্মানি তার ঐতিহ্যগত অর্থনৈতিক সংযম নীতি শিথিল করে প্রতিরক্ষা খাতে বিপুল বিনিয়োগ করছে।
Advertisement
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) গত ৬ মার্চ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়ের জন্য সদস্য দেশগুলোর জন্য ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি ইউরোর সহজ ঋণ প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে। ইইউর সদস্য রাষ্ট্রগুলো যৌথভাবে অস্ত্র কেনার জন্য কোভিড-১৯ মহামারি পরবর্তী পুনরুদ্ধার প্রকল্পের আদলে একটি তহবিল গঠনেরও পরিকল্পনা করছে।
এই পরিবর্তনের বড় একটি দিক হলো, যুক্তরাজ্যও ইউরোপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতায় ফিরে আসছে। ব্রেক্সিট-পরবর্তী সময়ের তুলনায় যুক্তরাজ্য এখন ইউরোপীয় নীতিনির্ধারণের সঙ্গে বেশি সম্পৃক্ত। একই সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভেতরে অনাগ্রহী দেশগুলোর মতামতকে পাশ কাটিয়ে ‘ইচ্ছুক দেশগুলোর জোট’ গঠন করে অগ্রসর হওয়ার নীতি গ্রহণ করা হচ্ছে।
তবে চ্যালেঞ্জও কম নয়। ইউরোপের প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানো সহজ হলেও জনগণকে কর বৃদ্ধি বা সামাজিক ব্যয় কমানোর প্রয়োজনীয়তা বোঝানো কঠিন হতে পারে। ইউরোপীয় অর্থনীতির ধীরগতি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্ভাব্য বাণিজ্য যুদ্ধ এবং ইউক্রেন সংঘাতে মতপার্থক্যও বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
ট্রাম্প যদি দাবি করেন, ইউরোপ তার কারণে নিজেকে শক্তিশালী করছে, তাহলে সেটা পুরোপুরি ভুল হবে না। তবে ইউরোপ কেবল তার পাশে দাঁড়ানোর জন্য নয়, বরং ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিজেকে রক্ষার জন্যই এই পরিবর্তন আনছে। ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র এই ঐতিহাসিক মিত্রতার প্রতি আবার শ্রদ্ধাশীল হবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু ইউরোপ নিশ্চিত করতে চায়, সেই পুনর্মিলন যদি হয়ও, তবে তা তাদের নিজেদের শর্তেই হবে।
Advertisement
কেএএ/