দেশজুড়ে

ধর্ষণ মামলার পর বাবা খুন, হত্যাকারী শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ

বরগুনায় মেয়েকে ধর্ষণ মামলার বাদী হওয়ায় বাবাকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার চারদিন হলেও অভিযুক্তদের এখনো শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।

Advertisement

এ ঘটনার পর চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হলেও তিনজনকে ধর্ষণ ও অপহরণ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। একজনকে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে হত্যার ঘটনায় কাউকে অভিযুক্ত করা হয়নি। পুলিশ বলছে, ঘটনাটি তদন্ত করে আসামি শনাক্ত করা সময়সাপেক্ষ।

পুলিশ জানায়, ধর্ষণ ও অপহরণ মামলার পর পুলিশ সৃজীব চন্দ্র রায়কে গ্রেফতার করে। পরে হত্যা মামলার পর সৃজীবের বাবা শ্রীরাম রায়, সৃজীবের সহযোগী কালু ও রফিকুল ইসলামকে আটক করা হয়। তবে কাউকে হত্যা মামলায় আসামি করা হয়নি।

পরিবার সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডের আগে নিহতের এক মেয়ে স্কুলে যাওয়ার পথে অপহরণের পর ধর্ষণের শিকার হয়। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ৫ মার্চ বরগুনা সদর থানায় বাদী হয়ে অপহরণ ও ধর্ষণ মামলা করেন তিনি। পরে ওই দিন অভিযুক্ত একমাত্র আসামি সৃজীব চন্দ্র রায়কে গ্রেফতার করা হয়। এক সপ্তাহ পর মঙ্গলবার (১১ মার্চ) রাতে বরগুনা পৌরসভার কালিবাড়ি এলাকার নিজ বসতবাড়ির পেছনের ঝোপ থেকে স্কুলছাত্রীর বাবার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরদিন নিহতের স্ত্রী অজ্ঞাতনামা আসামিদের নামে মামলা করেছেন।

Advertisement

এদিকে হত্যার ঘটনায় এলাকায় ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তিসহ নিহতের পরিবারের নিরাপত্তা দাবি করেছেন।

নিহতের বোন ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জাগো নিউজকে জানান, আসামি সৃজীব আগে থেকে অপকর্মে জড়িত। ৪ মার্চ সন্ধ্যায় পর থেকে ভাতিজি নিখোঁজ হয়। নিখোঁজের পর প্রতিবেশী আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় খুঁজলেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে ৫ মার্চ সকালে বাড়ির পাশের ডিসিপার্ক সংলগ্ন জায়গা থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পর জিজ্ঞাস করলে সৃজীব তাকে মুখে হাত দিয়ে অপহরণ করে নিয়ে নির্যাতন চালায় বলে পরিবারকে জানায়। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ সৃজীবকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠায়।

তিনি আরও জানান, মামলার ধার্য তারিখ ছিল বুধবার। মঙ্গলবার প্রতিদিনের মতো সকালে দোকানে যায় আমার ভাই। সন্ধ্যায় তার স্ত্রী আমাকে ফোন দিয়ে বাড়িতে আসতে বলে। তিনি জানান, সৃজীবের পরিবার আপস মীমাংসা করতে চায়। আমি ভাইকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানাই। এদিকে সৃজীবের বাবা আমাদের সঙ্গে কথা বলার সময় মীমাংসার কথা বললেও হুমকি দিয়ে বলে আপস মীমাংসা না হলে আমাদের সবাইকে দেখে নেবে। ওইদিন রাত ১টার দিকে ভাবি আমাকে ফোন দিয়ে বলেন- তোমার ভাই এখনো বাড়ি ফেরেননি। আমি ওদের বাড়িতে যাই। তার বড় মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ির পেছনে গিয়ে মরদের দেখতে পাই। মেয়ের অপহরণ ও ধর্ষণের ঘটনায় সম্পৃক্তদের ছাড়া আমার কারও সঙ্গে শত্রুতা ছিল না।

নাম প্রকাশ না করে নিহতের এক প্রতিবেশী জাগো নিউজকে বলেন, তার স্ত্রী-বোনের চিৎকার শুনে আমরা এসে দেখি বাড়ির পেছনে মোবাইলে রিং বাজছে। চারপাশে টাকা পয়সা ও তার মায়ের ওষুধ ছড়ানো ছিটানো। মরদেহ বিবস্ত্র অবস্থায় পড়ে আছে। সারা শরীর কাদামাখা ও ভেজা। কিন্তু যেখানে মরদেহ ছিল সেখানে কোনো কাদাপানি ছিল না। ঘটনাস্থল থেকে পুকুর একটু দূরে।

Advertisement

নিহতের স্ত্রী জাগো নিউজকে বলেন, আমার মেয়ে ধর্ষণ ও অপহরণ মামলা করার পরে যেদিন মামলার ধার্য তারিখ ছিল তার আগের দিন রাতে আমার স্বামীকে হত্যা করে বাড়ির পেছনে ফেলে রেখে যায়। আমার সন্দেহ এ কাজ ওরা করতে পারে। বর্তমানে আমি সন্তানদের নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে আছি। সামনে আমি কী করবো বা আমার সংসার কীভাবে চলবে আমি জানি না।

এ বিষয়ে বরগুনা সদর থানার কর্মকর্তা (ওসি) দেওয়ান জগলুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, মরদেহ উদ্ধারের পর তার স্ত্রী অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত চলমান। এখন পর্যন্ত কোনো আসামি শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

তিনি বলেন, সন্দেহজনক চারজনের মধ্যে তিনজনকে ধর্ষণ ও অপহরণ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় একজনকে মুচলেকা নিয়ে অভিভাবকের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

নুরুল আহাদ অনিক/এমএন/আরএইচ/এমএস