দেশজুড়ে

জানাজানি হওয়ায় ঘুষের টাকা ফেরত দিলেন এসআই

একটি হত্যা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে আটক করে থানায় নেয় পুলিশ। তাদেরকে মারধরের একপর্যায়ে ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাসে ৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়। একপর্যায়ে ৬০ হাজার টাকায় রফাদফা হলে আটকদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ছাড়ার আগে টাকাগুলো গুণে গুণে পকেটে ভরেন পুলিশ কর্মকর্তা। কিন্তু ওই চারজন এলাকায় এসে সবাইকে জানিয়ে দেন। এতে সমালোচনা শুরু হলে টাকা ফেরত দেন পুলিশ কর্মকর্তা। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম।

Advertisement

বুধবার (১২ মার্চ) দুপুরে উপজেলার পৌর বাজারে মোনায়েম মিয়া নামের একজনের কাছে ঘুষের টাকা ফেরত দেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

পুলিশ কর্মকর্তা যে চারজনকে আটক করেছিলেন তাদের মধ্যে একজনের নাম বাবুল মিয়া।

বাবুলের বাবা মোনায়েম মিয়া বলেন, ঈশ্বরগঞ্জ পৌর বাজারে সাক্ষাৎ করার জন্য এসআই নজরুল ইসলাম দুপুরে আমাকে ডেকে আনেন। তার কথামতো বাজারে এলে ৫৯ হাজার টাকা আমার হাতে ফেরত দেন। পুলিশ এক হাজার টাকা কম দিলেও এ নিয়ে তাকে কিছু বলিনি।

Advertisement

ঘুষের টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে ঈশ্বরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম বলেন, এ নিয়ে মোবাইলে কিছুই বলবো না। সামনাসামনি সাক্ষাতে কথা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর উপজেলার জাটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরী হিসেবে যোগদান করেন একই এলাকার লোকমান হেকিমের ছেলে আরমান হোসেন। গত বছরের ১ অক্টোবর ভোরে ওই বিদ্যালয়ে কর্মরত অবস্থায় আরমানকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় রাতেই নিহতের মা শামসুন্নাহার ঝর্ণা বাদী হয়ে ছয়জনের নাম উল্লেখ করে আরও কয়েকজনকে অজ্ঞাত আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার পরপরই মামলার প্রধান আসামি গ্রাম পুলিশ মাসুদকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। কিছুদিন পর মাসুদ উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে কারাগার থেকে মুক্ত হন।

ভুক্তভোগীদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরিফ বিল্লাহ বাচ্চু, রিফাতুল ইসলাম শাহীন, বাবুল মিয়া ও রোমান মিয়া নামের চার জনকে থানায় আটক করে নিয়ে যান। জিজ্ঞাসাবাদের নামে তাদের মারধর করা হয়। একপর্যায়ে আটকদের ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়। অন্যথায় আরমান হত্যা মামলায় তাদের ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়। এমতাবস্থায় বাবুলের বাবা মোনায়েম মিয়া এসআই নজরুলের সঙ্গে ৬০ হাজার টাকায় বিষয়টি রফাদফা করেন। পরে আটক সবাইকে পরদিন রাতে মুক্তি দেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

আটক হওয়া বাবুল মিয়া বলেন, আটকের পর মুক্তি দেওয়ার আগ পর্যন্ত মারধর করা হয়। একপর্যায়ে তার বাবার (মোনায়েম) সঙ্গে এসআই নজরুলের ৬০ হাজার টাকার রফাদফা হলে তাকেসহ আটক চারজনকে মুক্তি দেওয়া হয়। মুক্তি দেওয়ার আগে সাদা কাগজে স্বাক্ষরসহ তাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়নি কিংবা কোনো প্রকার নির্যাতন করা হয়নি মর্মে তাদের কথা ভিডিও রেকর্ড করে রাখা হয়েছে।

Advertisement

ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওবায়দুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ৬০ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি জানার পর এসআই নজরুল ইসলামকে টাকা ফেরত দিতে বলেছি। সে এখন পর্যন্ত টাকা ফেরত দিয়েছে কি না আমার জানা নেই।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম বুধবার রাতে জাগো নিউজকে বলেন, ঈশ্বরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে ঘটনাটি তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছি। আগামী ৫ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। ওই পুলিশ সদস্য ঘুষ নিলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কামরুজ্জামান মিন্টু/এফএ/এএসএম