চাঁপাইনবাবগঞ্জে কৃষি জমিতে তুলনামূলক বেশি সার ব্যবহারে জমাট বাঁধছে না আখের গুড়। এতে বাধ্য হয়ে গুড়ে ব্যবহার হচ্ছে ভারতীয় নিম্নমানের চিনি। এসব গুড় জেলার চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। চিনি মিশ্রিত এসব গুড় দেদারসে বিক্রি হচ্ছে হাট বাজারেও। বিশেষ করে রমজানে গুড়ের চাহিদা বাড়ায় বেড়েছে ভেজাল গুড়ের উৎপাদনও।
Advertisement
জেলায় সবচেয়ে বেশি আখ উৎপাদন হয় শিবগঞ্জ উপজেলার পুঁটিমারি বিল, নাককাটিতলা ও ধাইনগর এলাকায়।
এসব এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, শত শত বিঘা আখ চাষ হলেও নেই মিলের ব্যবস্থা। তাই শতভাগ গুড় প্রস্তুত করেন চাষিরা নিজেই। কিন্তু কয়েক বছর ধরে অতিরিক্ত সার প্রয়োগের কারণে এসব আখের রসে জমছে না গুড়। তাই ভারতীয় নিম্নমানের চিনির সঙ্গে আখের রস মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে ভেজাল গুড়। যা দেদারসে বিক্রি হচ্ছে হাট-বাজারে।
আরও পড়ুন- ভেজাল আখের গুড় তৈরি, ২ লাখ টাকা জরিমানা অনিরাপদ খাবারে ছেয়ে গেছে প্রত্যন্ত এলাকাআখচাষি আশরাফুল ইসলাম বলেন, আখের সঙ্গে জমিতে লাগানো হয়েছিল রসুন। বেশি পরিমাণ সার প্রয়োগ না করলে রসুনের ফলন হবে না। তাই অতিরিক্ত সার ব্যবহার করা হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আখের জমি। আখের রসে জমছে না গুড়। তাই ভারত থেকে আসা চিনি দিয়ে জমানো হচ্ছে গুড়।
Advertisement
আসিকুর রহমান নামে আরও এক আখচাষি জাগো নিউজকে বলেন, একই জমিতে আখ, রসুন ও ধনিয়া চাষ করেছি। রসুন, ধনিয়া ঘরে তুলে বিক্রি করা প্রায় শেষ। এখন আখ মাড়াই করে গুড় বিক্রি করছি। কিন্তু চিনি ছাড়া জমছে না আখের গুড়। বাধ্য হয়ে ভারতীয় চিনি কিনে এনে গুড় জমাতে হচ্ছে। এতে লোকশানের মুখে পড়ছি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক বলেন, সঠিক সময়ের আগেই আখ থেকে গুড় তৈরি ও জমিতে অতিরিক্ত সার প্রয়োগে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে এক বিঘা জমিতে প্রায় ৩০০ কেজি ইউরিয়া সার ব্যবহার করা হয়। যা পরিমাণের চেয়ে অনেক বেশি। এজন্য এসব জমির গুড় জমছে না। এতে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের ভারতীয় চিনি।
আরও পড়ুন- নাটোরে আখ চাষে বদলে যাচ্ছে কৃষকের ভাগ্য প্রস্তুতি ছাড়াই পরিত্যক্ত চিনিকল চালুর উদ্যোগসুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটের রাজশাহী উপকেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোছা. কোহিনুর বেগম জাগো নিউজকে বলেন, মাটিতে রস থাকলে কিংবা জমিতে ইউরিয়া সার পরিমাণের চেয়ে বেশি ব্যবহার হলে আখের রসের গুড় জমাটবদ্ধ হয় না। এছাড়া বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকলেও গুড় জমাটে কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তবে দুশ্চিন্তার কিছু নেই, ঝোলা গুড় উৎপাদন করা যাবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি অধিদপ্তরে উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, আখের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে রসুন, ধনিয়াসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করায় শক্তি হারাচ্ছে কৃষি জমি। ফলে জমছে না গুড়। তবে আমরা গবেষকদের সঙ্গে পরামর্শ করেছি। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে, কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়।
Advertisement
জেলা সিভিল সার্জন ডা. কামাল উদ্দিন বলেন, চিনি মিশ্রিত হওয়ার কারণে ঐতিহ্য হারাচ্ছে গ্রাম-বাংলার গুড়ের স্বাদ। এতে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। এসব গুড় খেলে হতে পারে নানা ধরনের রোগ। তাই এখনই সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
গত বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় আখ চাষ হয়েছিল ৫ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে। যা চলতি বছর কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৮৫০ হেক্টরে।
এফএ/জেআইএম