বাংলাদেশে নারী ও শিশুদের ওপর পারিবারিক সহিংসতা, যৌন হয়রানি ক্রমাগত বেড়েই চলছে। নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে পারলে, নারীর বিরুদ্ধে অপরাধ প্রবণতা অনেকাংশেই কমে আসবে।
Advertisement
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে সোমবার (১০মার্চ) মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) আয়োজিত ‘নেতৃত্ব ও ক্ষমতায়নের পথে নারীদের অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ‘নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে’
সম্প্রতি ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টার ঘটনা উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, দেশজুড়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোতে কর্তৃপক্ষকে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে অপরাধীরা পার পেয়ে যাবে ও অন্যরা অপরাধ করতে উৎসাহিত হবে। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, আমাকে অনেকেই নারী দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছে ‘হ্যাপি উইমেন্স ডে’ বলে। আজ আমি আসলে হ্যাপি না। সম্প্রতি নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতার বিষয়ে ইঙ্গিত করে তিনি জানান, আনন্দিত হওয়ার কারণ তিনি দেখছেন না।
তিনি বলেন, আইন উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন, ১৫ দিনে তদন্ত ও ৯০ দিনের মধ্যে ধর্ষণের বিচার করতে হবে। আমরা পর্যবেক্ষণ করবো এই কাথার বাস্তবায়ন কতটুকু হয়। ৮ বছর আগে এক শিশুকে ধর্ষণ করার অপরাধে যার শাস্তি হয়, আইনের ফাঁক ফোঁকর দিয়ে সে বেরিয়ে এসেছে। শাহীন আনাম এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান।
Advertisement
শাহীন আনাম আরও বলেন, হতাশ হলে চলবে না। পরবর্তী প্রজন্ম হাল ধরবে। প্রত্যেক নারীর দায়িত্ব কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সব অপরাধ রুখে দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে একটি সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয়।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের পরিচালক, বনশ্রী মিত্র নিয়োগী বলেন, কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করে আমি নির্যাতনের শিকার কি না, আমি বলি না। তবে আমি ভয়ে থাকি সবসময়, এই বুঝি কেউ এসিড মারলো, কেউ জামা ধরে টান দিলো বা কেউ অশ্লীল কথা বললো। শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যাচারিত না হলেও এই যে ভয় পাওয়াটা, এটাও একটা অত্যাচার। এটা সবাইকে অনুধাবন করতে হবে। ভয়হীন সমাজ গড়তে না পারলে নির্যাতন থামবে না।
তিনি বলেন, গভীর শেকড়ের যে পিতৃতন্ত্রের ধারক আমাদের সমাজ, সেখান থেকে নারীদের বের হয়ে আসতে হবে। লজ্জা বা ভয় পেয়ে দমে না গিয়ে আওয়াজ উঠাতে হবে।
Advertisement
বনশ্রী মিত্র নিয়োগী তার মূল প্রবন্ধ থেকে বলেন, নেতৃত্বের জায়গায় গার্মেন্টস শ্রমিকরা নিম্ন মজুরিধারী স্বল্প দক্ষতা সম্পন্ন শ্রমিক হিসেবে কর্মরত। এখানে সুযোগ আছে নারীদের দক্ষ করে গড়ে তোলার। এছাড়াও বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি প্রশ্ন করে বলেন, আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। রিলসের মাধ্যমে উপস্থাপন হয়েছে বলে মাগুরার সাম্প্রতিক ধর্ষণের ঘটনায় আমাদের হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে। অথচ ৮ বছর আগের ধর্ষণের আসামি ছাড়া পেয়ে ঘুরে বেরাচ্ছে, তার কোনো প্রতিবাদ নেই কেন? আমাদের গ্রহণযোগ্যতা ও সহ্য করে যাওয়াটা নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ইনফ্লুয়েন্সিং, ক্যাম্পেইন অ্যান্ড কমিউনিকেশনের পরিচালক, নিশাত সুলতানা বলেন, সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহে কথা বলার শক্তি হারিয়ে গেছে, শক্তি সঞ্চার করে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি তার জীবনের গল্প বলতে গিয়ে জানান অনেক বাধা পেরিয়ে নিজে এগিয়ে যাচ্ছি।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি সুইডিশ দূতাবাসের উন্নয়ন সহযোগিতা বিভাগের প্রধান মারিয়া স্ট্রিডসম্যান বলেন, বাংলাদেশে নারীদের অগ্রগতি সত্ত্বেও, বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০২৪ অনুসারে, ১৪৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৯তম, যা দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে থাকলেও অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ, মজুরি সমতা এবং নেতৃত্বের সুযোগে এখনও পিছিয়ে আছে। তিনি যোগ করেন, এমন একটি জেন্ডার-সমতাপূর্ণ সমাজ নিশ্চিত করার জন্য কাজ করতে হবে, যেখানে নারী, পুরুষ সমানভাবে মূল্যবান এবং সমান অধিকার ভোগ করে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেয়া খান বলেন, নারীদের জন্য সচেতনতামূলক কাজে সব সময় কাজ করে যাচ্ছি আমরা। ৪৫৫৩ ইউনিয়ন ৩৩০টি পৌরসভায় কিশোর-কিশোরী ক্লাব আছে। আমরা সপ্তাহভিত্তিক তাদের নিয়ে আলোচনায় বসি। তাদের কথা শুনি।
তিনি আরও বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নের জন্য আমরা শুধু নারীদের নিয়ে চিন্তা করেছি। এ বিষয়ে পুরুষদের সম্পৃক্ত করে ভাবা হয়নি তেমন একটা। এতে প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে নারী-পুরুষ, ছেলে-মেয়েরা। গবেষণার মাধ্যমে ব্যর্থতার জায়গা গুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
এসএম/এসএনআর/এমএস