মানিকগঞ্জের শিবালয়ে যমুনার চরে আনুষ্ঠানিকভাবে উড্ডয়নের চার দিন পর আবারও আকাশে উড়লো তরুণ উদ্ভাবক জুলহাসের তৈরি করা উড়োজাহাজ। উড়োজাহাজটি দেখতে উপজেলার জাফরগঞ্জের চরে আসেন বাংলাদেশ বিমানের অবসরপ্রাপ্ত পাইলট ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ আল ফারুক।
Advertisement
জুলহাসের তৈরি উড়োজাহাজ আকাশে ওড়া দেখতে রোববার (৯ মার্চ) সকাল থেকে হাজারও মানুষ যমুনার পাড়ে ভিড় করেন। লোকে লোকারণ্য যমুনাপাড়ে বিরাজ করে উৎসবের আমেজ।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে যমুনা নদীর বালুচরে জুলহাসের তৈরি আরসি উড়োজাহাজটি উড্ডয়ন করে। এসময় বাংলাদেশ বিমানের অবসরপ্রাপ্ত পাইলট ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ আল ফারুকসহ সিভিল এভিয়েশনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। উড়োজাহাজ উড্ডয়নের আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হেলিকপ্টার নিয়ে যমুনার চরে অবতরণ করেন তিনি। এরপর আলোচনা সভায় যোগ দেন।
আলোচনা সভায় অবসরপ্রাপ্ত পাইলট ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, ‘আমি এসেছি তাকে অভিনন্দন জানানোর জন্য। এয়ার কেস (উড়োজাহাজ) আবিষ্কার হয়েছে ১২০ বছর আগে। কিন্তু ও যে সাহসটা করলো, নিজের মেধা দিয়ে যে কাজটি করলো...আমরা ওরে আরও সাহায্য করে আর্থিক বা বিভিন্ন ইউনিভার্সিটির লোক যদি এসে দেখে যে, এটাকে আরও ভালোভাবে করা যায় কি না। প্রথমে দুই সিট তারপর তিন সিট তারপর চার সিট। এটার একটা সার্টিফিকশন দরকার আছে। একটা প্লেনের কিন্তু অনেকগুলো ইন্সট্রুমেন্ট থাকে। একটা ইন্সট্রুমেন্ট গতি শো করবে, একটা ইন্সট্রুমেন্ট ইঞ্জিনের প্যারামিটার শো করবে....এসব একেকটার পার্ট বাই পার্ট তাকে জানতে হবে।’
Advertisement
জুলহাস মোল্লার (২৮) বাড়ি মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার তেওতা ইউনিয়নের ষাইটঘর তেওতা গ্রামে। তার বাবা জলিল মোল্লার গ্রামের বাড়ি ছিল জেলার দৌলতপুর উপজেলার বাঘুটিয়া এলাকায়। নদীভাঙনের কারণে বর্তমানে শিবালয়ে পরিবারসহ বসবাস করছেন তারা। ছয় ভাই ও এক বোনের মধ্যে জুলহাস পঞ্চম। উপজেলার জিয়নপুরের বিকেএস উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছেন। তবে অর্থাভাবে আর পড়তে পারেননি।
পেশায় ইলেকট্রিশিয়ান জুলহাস ঢাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন। অবসরে তিনি এই উড়োজাহাজ তৈরি করেন। মঙ্গলবার (৪ মার্চ) দুপুরে উপজেলার জাফরগঞ্জ এলাকায় যমুনা নদীর চরে নিজের তৈরি উড়োজাহাজটি আকাশে সফলভাবে উড্ডয়ন করেন। ওইদিন তাকে আর্থিক সহযোগিতা করেন জেলা প্রশাসক। এরপর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও জুলহাসের জন্য আর্থিক সহযোগিতা হিসেবে ৫০ হাজার টাকা পাঠান। আজ বঙ্গটেক নামের একটি সফটওয়্যার কোম্পানি থেকে ৫০ হাজার টাকা সহযোগিতা করা হয় জুলহাসকে।
আলোচনা সভা শেষে জুলহাস মোল্লা জানান, তিন বছর গবেষণা এবং এক বছর সময় লেগেছে উড়োজাহাজটি তৈরি করতে। অ্যালুমিনিয়াম ও লোহা দিয়ে উড়োজাহাজটির অবকাঠামো তৈরি। পানির পাম্পের ‘সেভেন হর্স পাওয়ারের’ ইঞ্জিন ব্যবহার করেছেন। বিমানটি পরীক্ষামূলকভাবে প্রশিক্ষণের জন্য তৈরি করা হয়েছে। তবে, সরকারি অর্থায়ন ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এটি বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করা যেতে পারে। উড়োজাহাজটি ৫০ ফুট ওপরে উড়তে পারে।
সজল আলী/এসআর/জেআইএম
Advertisement