গাইবান্ধায় সরকারিভাবে আমন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল আট হাজার ৩৫৫ টন। সরকারিভাবে গত ১৭ নভেম্বর থেকে ধান কেনা শুরু হয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়েছে ধান সংগ্রহ অভিযান। সরকার এবার আমন মৌসুমে প্রতিকেজি ধানের দাম নির্ধারণ করেছিল ৩৩ টাকা। কিন্তু এত চড়া দাম দিয়েও কৃষকদের কাছে ধান কিনতে পারেনি গুদামগুলো।
Advertisement
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গাইবান্ধায় ১১টি গুদামে আট হাজার ২৫৫ মেট্রিক টন ধান ও ১৩ হাজার ৩৩৯ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এতে চাল সংগ্রহ হয়েছে ১৩ হাজার ৩৩৩ টন, যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় কাছাকাছি। তবে ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৩৬৯ মেট্রিক টন। অর্থাৎ নির্ধারিত তিন মাস সময় পেরিয়ে গেলেও লক্ষ্যমাত্রার পাঁচ শতাংশও (৪.৪৭ শতাংশ) ধান সংগ্রহ করতে পারেনি সরকার।
জেলার সাতটি উপজেলার মধ্যে এক ছটাক ধানও সংগ্রহ করতে পারেনি গাইবান্ধা সদর। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা ১১২ টন ধান সংগ্রহ করে সর্বোচ্চ সংগ্রহের অবস্থানে রয়েছে। অন্যান্য উপজেলার গুদামগুলো সামান্য পরিমাণ ধান সংগ্রহ করতে পেরেছে।
সূত্র আরও জানায়, একজন কৃষক সর্বনিম্ন ১২০ কেজি থেকে সর্বোচ্চ ৩ মেট্রিক টন পর্যন্ত ধান সরকারি গুদামে বিক্রি করতে পারেন। ধান কেনার পর গুদাম থেকে কৃষককে ওজনমান মজুত সনদ দেওয়া হয়। কৃষক ওই সনদ ব্যাংকে তার নিজস্ব ১০ টাকার হিসাবে জমা দেন। পরে চেক দিয়ে তার হিসাব থেকে ধান বিক্রির টাকা তোলেন।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকার গত বছর ৩০ টাকা দরে ধান কিনলেও এবার ৩৩ টাকা দরে ধান কেনার ঘোষণা দেয়। সে হিসেবে প্রতিমণ ধানের দাম পড়ে ১৩২০ টাকা। স্থানীয় বাজারগুলোতে এবার ১২০০-১৩০০ টাকায় ধান বেচাকেনা হয়েছে। তবে গুদামে ধান পরিবহনে কৃষকের ব্যয় বাড়ে। শ্রম ও সময় বেশি পড়ে যায়। এছাড়া গুদামে ধান দিতে গিয়ে কর্মকর্তাদের নানান ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়। এসব কারণে সরকারি গুদামগুলোতে ধান দিতে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন কৃষকরা।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার কাশিনাথপুর গ্রামের কৃষক আয়নাল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘সরকারি খাদ্যগুদামে ধান নিয়ে যেতে ক্যারিং খরচ বেশি। সময় ও শ্রম বেশি যায়। ব্যাংকে গিয়ে টাকা তুলতে হয়। অথচ বাড়ি থেকে ধান বিক্রিতে ঝামেলা নেই। কোনো খরচও নেই। এজন্য সরকারি খাদ্যগুদামে ধান বিক্রিতে কৃষকদের আগ্রহ নেই।’
আরেক কৃষক হাশেম মিয়া বলেন, ‘গুদামে ধান দিতে গিয়ে হয়রানিতে পড়তে হয়। এক ধান বারবার মাপে। ধান দিয়ে ট্যাকা নেওয়ার সময় অফিসারদের নানান কাউটালি। চেক নিতে কীসের নাকি বকশিশ দেওয়া লাগে। এইজন্য এল্লা কাউটালির জন্য মুই আর ওরহরোক (তাদের) আর ধান দেম (দেবো) না।’
গোবিন্দগঞ্জের সাতাইবাতাইল গ্রামের কৃষক মজনু ইসলাম বলেন, ‘এবার আমন ধানে সরকার যে রেট দিয়েছে তা মোটামুটি ভালো। তবে কৃষকরা ধান দিতে গেলে গুদামের কর্মকর্তারা হয়রানি করে। এ কারণেই আমি সরকারি গুদামে ধান দিইনি।’
Advertisement
জানতে চাইলে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, চুক্তিবদ্ধ চালকল মালিকদের কাছ থেকে এক হাজার ৩৩৩ মেট্রিক টন চাল কিনেছে খাদ্য বিভাগ। তবে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ধান সংগ্রহ করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি।
এ এইচ শামীম/এসআর/জিকেএস