দেশজুড়ে

সাঁতরে ধনু নদ পার হতে গিয়ে নিখোঁজ ৩

নেত্রকোনার খালিয়াজুরীতে ধনু নদ পার হতে গিয়ে ডুবে তিনজন নিখোঁজ হয়েছেন। শনিবার (৯ মার্চ) দুপুরে মাছ শিকারি ও স্থানীয়দের সংঘর্ষ হলে নদ সাঁতরে পার হওয়ার সময় ওই তিনজন যুবে যান। পরে তাদের আর হদিস পাওয়া যায়নি।

Advertisement

নিখোঁজরা হলেন, জেলার আটপাড়া উপজেলার রূপচন্দ্রপুর গ্রামের মৃত রুস্তম আলীর ছেলে শহিদ মিয়া (৪৮), মদন উপজেলার বাগজান গ্রামের রুকন মিয়া (৪৫) ও একই উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের রুপচান মিয়ার ছেলে অটোচালক ইয়াসিন মিয়া (১৯)।

শহিদ মিয়া মিয়ার মেয়ে ঝুমা আক্তার বলেন, ‘আমার বাবা শনিবার সেহেরি খেয়ে পলো নিয়ে খালিয়াজুরীতে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। শুনেছি সেখানে মারামারি হয়েছিল। আমার চাচা বলেছেন, তাদের নৌকা থেকে মেরে নদীতে ফেলা হয়েছিল। সবাই সাঁতরে উঠতে পারলেও আমার বাবা উঠতে পারেননি। আমি আমার বাবাকে ফেরত চাই।’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, এক সপ্তাহ ধরে নেত্রকোনার হাওরাঞ্চল খালিয়াজুরী ও মদন উপজেলার বিভিন্ন ইাজারাকৃত জলমহালের মাছ লুটপাট করার মহোৎসব চালিয়েছে লোকজন। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী প্রতিদিন ময়মনসিংহের নান্দাইন গৌরিপুর, ঈশ্বরগঞ্জ, কিশোরগঞ্জের তাড়াইল, নেত্রকোনা সদর, আটপাড়া, কেন্দুয়া, মদন ও খালিয়াজুরী উপজেলার কয়েক হাজার লোকজন সমবেত হয়ে হাওরের ইজারাকৃত বিলের মাছ লুট করছিল। মদন উপজেলার নূরেশ্বর বিল, খালিয়াজুরী উপজেলার কির্তনকলা বিল, কারি বিল, উচাবাইদা বিল, হাইলা বিলসহ বেশ কয়েকটি ইজারাকৃত বিলের মাছ লুট করেছে শিকারিরা। প্রশাসনের লোকজনের বাঁধা উপেক্ষা করে প্রতিদিন এমন ঘটনা ঘটছে। যেসব বিলের মাছ লুট হয়েছে এগুলোর ইজারা মূল্য প্রায় চার কোটি টাকা।

Advertisement

দুপুরে খালিয়াজুরী উপজেলার ইজারাকৃত কাঠালজান ও মরাগাঙ্গের মাছ লুট করার জন্য ধনু নদীর পাড়ে জমায়েত হয় হাজারো লোকজন। পরে শিকারিরা রসুলপুর ফেরিঘাটের পাশে তাদের পরিবহনের শতাধিক পিকআপ, অটোরিকশা, সিএনজি, হেনট্রলি, মোটরসাইকেল রেখে ধনু নদী পাড় হওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় ফেরিঘাটের লোকজনের সঙ্গে মাছ শিকারিদের বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বাঁধে। সংঘর্ষে স্থানীয় লোকজন অংশ নিলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ সময় উভয় পক্ষের প্রায় অর্ধশত লোকজন আহত হয়। পরে বিক্ষুব্ধ স্থানীয় লোকজন মাছ শিকারিদের পরিবহনের শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করে।

একাধিক মাছ শিকারি জানান, খবর পেয়ে মাছ ধরার জন্য ধনু নদীর পাড়ে যাই। সেখানে হাজার হাজার লোকজন ছিল। হঠাৎ সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে স্থানীয় লোকজন একত্রিত হয়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সবাইকে মারধর শুরু করে। তারা আমাদের গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। নদী পাড় হওয়ার সময় আমাদের কয়েকজনকে পিটিয়ে নদীতে ফেলা হয়।’

খালিয়াজুরী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মকবুল হোসেন জানান, ‘পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে পরিস্থিতি শান্ত করতে কিছু লোকজন আটক করে থানা নেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।’

নেত্রকোনার পুলিশ সুপার মির্জা সায়েম মাহমুদ বলেন, অতিরিক্ত লোকজন জড়ো হয়ে মাছ শিকারের চেষ্টা করছিল। পুলিশ গিয়ে তাদের নিয়ন্ত্রণ করছে। আমরা সামাজিক মাধ্যমে জেনেছি কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের খোঁজখবর নিচ্ছি। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় থাকায় কোনো মামলা হয়নি।

Advertisement

এইচএম কামাল/আরএইচ/জেআইএম