রাজনীতি

নির্বাচন যদি সুষ্ঠুভাবে হয় বিরোধ তো দরকার নেই

‘আমি ছাত্রদের লড়াকু, ত্যাগী ভূমিকায় দেখেছি। কিন্তু একই সঙ্গে তাদের রাগী ইয়াং ম্যান মনে হয়েছে। এই সমাজের প্রতি রাগের অনেক কারণ ছিল। এখন আমরা সেই রাগের কারণ রাখছি না। তাই রাগ এখন বাদ দিতে হবে। এখন যুক্তি দিয়ে পথ ঠিক করতে হবে।’

Advertisement

ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল, নির্বাচনসহ সমসাময়িক বিষয় নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় একথা বলেন গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আবদুল্লাহ আল মিরাজ।

জাগো নিউজ: রাজনীতিতে ভবিষ্যতে ঐক্য ধরে রাখার যে বিষয়ে যে আলোচনা হয়, সেই ঐক্য কি ধরে রাখা সম্ভব হবে?

মাহমুদুর রহমান মান্না: যখন নির্বাচন সামনে তখন ঐক্যের কথা বলে কী হবে! তবে মতপার্থক্য সত্ত্বেও গণতন্ত্র, দেশের সার্বভৌমত্ব, অর্থনৈতিক উন্নতি- এসব বিষয়ে ঐকমত্য থাকতে পারে। নির্বাচন যদি সুষ্ঠুভাবে হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে তো বিরোধ আমাদের দরকার নেই। আমাদের সংস্কৃতিতে বিভাজনটা যত স্পষ্ট, ঐক্যটা তত দৃশ্যমান নয়। কিন্তু আমি আশা করতে চাই, একটি বিপ্লবের পর নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হলে ঐক্যটা শক্ত হবে।

Advertisement

জাগো নিউজ: নির্বাচন নিয়ে আপনাদের প্রস্তুতি কেমন?

মাহমুদুর রহমান মান্না: এ নিয়ে কোনো আলোচনা মাঠে নেই। ফলে যে যার মতো করে প্রস্তুতি নিচ্ছি। যার যার ক্যাপাসিটি অনুযায়ী চেষ্টা হচ্ছে। নিজেদের মধ্যেই যাতে দাঁড়ানো যায় তা নিয়ে চেষ্টা করা হচ্ছে। এর মধ্যে তারেক রহমান জাতীয় সরকারের প্রস্তাব দিয়ে রেখেছেন। সেটা নিয়েও আলোচনা হয়নি।

এই মুহূর্তে আমাদের নাগরিক ঐক্যের অবস্থান হচ্ছে, আমরা আলোচনা করছি না। অনির্বাচিত সরকার তো ক্ষমতায় থাকা যাবে না। সেক্ষেত্রে ভোটও যাতে দ্রুত হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে

আমার জায়গা থেকে বলছি, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। এই সংস্কার প্রক্রিয়াকে চলমান রাখতে যারা আছেন সবাই মিলেই চেষ্টা করা উচিত। এটার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। সে হিসেবে কেউ যদি বলে আসেন আমরা একসঙ্গে কাজ করবো সেটা বিবেচনায় আসতে পারে। তবে আমাদের কাছে এ ধরনের কোনো প্রস্তাব আসেনি। এটা বিবেচনায় থাকবে।

Advertisement

এই মুহূর্তে আমাদের নাগরিক ঐক্যর অবস্থান হচ্ছে, আমরা আলোচনা করছি না। অনির্বাচিত সরকার তো ক্ষমতায় থাকা যাবে না। সেক্ষেত্রে ভোটও যাতে দ্রুত হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

জাগো নিউজ: আপনার নির্বাচনী এলাকা বগুড়ার রাজনীতিতে আপনাকে হুমকি দিয়েছিল বিএনপি। বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নিয়েছেন কোনো?

আরও পড়ুন

ডিসেম্বরে হতে পারে জাতীয় নির্বাচন, এনসিপির দাবি ভিন্ন এ বছর নির্বাচন সম্ভব নয় আমি ঠিক এভাবে কথাটা বলিনি: নাহিদ ইসলাম নতুন রাজনৈতিক দলের নাম ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ নারীর প্রতি সহিংসতা-নিপীড়ন বরদাশত করবে না এনসিপি

মাহমুদুর রহমান মান্না: তারা ঘোষণা দিয়েছিল আমাকে এলাকায় যেতে দেবে না। আমি পরিস্থিতি দেখে তারেক রহমানকে ফোন করেছিলাম। তিনি ফোন ধরেননি প্রথমে, হয়তো আমার নম্বর তিনি চিনতেন না। এরপর আমার মেসেজ দেখে হয়তো আমাকে কল দিয়েছেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি হয়তো স্থানীয়ভাবে কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। এতে আমার মনে হয় এই উত্তেজনাটা কিছুটা কমেছে। আমি সম্প্রতি একটা সভা করেছি সেখানে।

জাগো নিউজ: ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নিয়ে আপনার ভাবনা কী?

মাহমুদুর রহমান মান্না: রাজনীতির যত বিস্তার হয় ততই ভালো। রাজনীতি নিয়ে চর্চা হবে, অনুশীলন হবে- এ নিয়ে মানুষের মধ্যে আলোচনা হবে। রাজনীতি হচ্ছে সমাজের চালিকাশক্তি। সে জায়গা থেকে তরুণ ছাত্রসমাজ সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে অংশ নিচ্ছেন সেটা ভালো খবর বলে মনে করি। এই তরুণ সমাজ ফ্যাসিবাদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করেছে, যা আমরা দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের মধ্যেও করতে পারিনি। তাদের কাছে আমরা ভালো কিছু আশা করতে পারি।

ফ্যাসিবাদকে উৎখাতের লড়াই ও রাষ্ট্র গঠনের লড়াই দুটির প্রকৃতি এবং চরিত্র ভিন্ন। একটি হচ্ছে বিক্ষোভধর্মী, আর রাষ্ট্র গঠনের বিষয়টি হচ্ছে ঠান্ডাভাবে করতে হবে। জ্ঞানের চর্চা, মতবাদ থাকতে হবে। আমি অনেক দিন ধরেই রাজনীতি করছি, আমি নতুন রাজনৈতিক দলের সাফল্য কামনা করি

কিন্তু ফ্যাসিবাদকে উৎখাতের লড়াই ও রাষ্ট্র গঠনের লড়াই দুটির প্রকৃতি এবং চরিত্র ভিন্ন। একটি হচ্ছে বিক্ষোভধর্মী, আর রাষ্ট্র গঠনের বিষয়টি হচ্ছে ঠান্ডাভাবে করতে হবে। জ্ঞানের চর্চা, মতবাদ থাকতে হবে। আমি অনেক দিন ধরেই রাজনীতি করছি, আমি নতুন রাজনৈতিক দলের সাফল্য কামনা করি।

জাগো নিউজ: সংবিধান পরিবর্তন করে দ্বিতীয় রিপাবলিক গঠনের বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

মাহমুদুর রহমান মান্না: সরকার ও রাজনৈতিক দল থেকে বলা হয়েছে দেশের সিস্টেম পরিবর্তনে সংস্কার চাই। এজন্য ১৫টি কমিশন হয়েছে, যার ছয়টি এরই মধ্যে রিপোর্ট দিয়েছে। এই রিপোর্ট বুঝতে হবে, তাদের এসব বিষয়ে পাল্টা প্রস্তাব দেওয়ার মতো জ্ঞান থাকতে হবে। এসব জ্ঞান ছাড়া রাষ্ট্র গঠন সম্ভব হবে না।

এজন্য ছাত্ররা ফ্যাসিবাদ হটাতে যেভাবে সফল হয়েছে, পরবর্তীসময়ে রাষ্ট্র গঠন ও রাজনৈতিক দল নিয়ে কতটুকু সফল হবে তা বলতে পারবো না। কোনো সন্দেহ নেই, একটি জ্ঞানলব্ধ সমাজ গঠন করতে হলে ছাত্রদের প্রয়োজন হবে। তারা গণতান্ত্রিক রাজনীতির ভ্যানগার্ড। তাদের মাঝেই সম্ভাবনা আছে।

আমি ছাত্রদের লড়াকু, ত্যাগী ভূমিকায় দেখেছি। কিন্তু একই সঙ্গে তাদের রাগী ইয়াং ম্যান মনে হয়েছে। এই সমাজের প্রতি রাগের অনেক কারণ ছিল। এখন আমরা সেই রাগের কারণ রাখছি না। তাই রাগ এখন বাদ দিতে হবে। এখন যুক্তি দিয়ে পথ ঠিক করতে হবে।

তারা শুরুটা যেভাবে করলো সেকেন্ড রিপাবলিক করতে চায়, গণপরিষদে ভোট হতে হবে। দুটি খুবই জটিল ও বিতর্কিত বিষয়। এর ব্যাখ্যা যা তারা দিয়েছে তা খুবই সাদামাটা।

তারা শুরুটা যেভাবে করলো সেকেন্ড রিপাবলিক করতে চায়, গণপরিষদে ভোট হতে হবে। দুটি খুবই জটিল ও বিতর্কিত বিষয়। এর ব্যাখ্যা যা তারা দিয়েছে তা খুবই সাদামাটা

যেহেতু ফার্স্ট রিপাবলিক সাকসেসফুল হয়নি, সেজন্য সংবিধান পরিবর্তন করে নতুন করে করতে হবে। কিন্তু সংবিধান সংস্কার কমিশন যা বললো এতে সংবিধান রচনার কথা না বলে সংস্কারের কথা বলেছে। আমি সন্দেহ করছি তারা যেভাবে সংবিধান পরিবর্তন ও গণপরিদ নির্বাচনের কথা বলছে তা তো হচ্ছে না। অনেক দলও আছে যারা সংবিধান বাতিলেরটা মনে করে না। সেক্ষেত্রে নতুন কমিশন দিয়ে নতুন করে সেকেন্ড রিপাবলিক ঘোষণা করার বাস্তবতা রাখে না। তারা এটা নিয়ে কী লড়াই করতে চাচ্ছে তা নিয়ে আমার ধারণা নেই। কথা বলার সুযোগ হয়নি এর মধ্যে। আগে এ বিষয়ে সেভাবে বলেনি। তাদের যাত্রাটাই একটা বিতর্কিত জটিল প্রক্রিয়ায় ঢুকে গেছে।

জাগো নিউজ: দেশের বর্তমান রাজনীতি কেমন হওয়া উচিত?

মাহমুদুর রহমান মান্না: এখন রাজনীতি হবে নতুন বাংলাদেশ গড়ার। কেমন নতুন, আগের যে ভুল-ভ্রান্তি অন্যায় হয়েছে তা বাদ দিয়ে ফ্রেশ একটি দেশ গঠনের চেষ্টা। যারা এ চেষ্টায় থাকবে তাদের পাশেই দেশের মানুষ থাকবে। এটা জামায়াত, বিএনপি সবাই বলছে। এ জায়গায় আমাদের অপেক্ষা করতে হবে, দেখতে হবে কারা ভালো করে। এএএম/এএসএ/এমএস