পাপেল ও পারভেজ দুই ভাই। এক বছর আগে বড় ভাই পাপেল চাকরি করতেন ঢাকা শহরে একটি পোশাক কারখানায়। আর ছোট ভাই পারভেজ ছিলেন বেকার। বাড়িতেই থাকতেন। একদিন পারভেজ মেশিনে ফিতার রশি তৈরি করতে দেখেন ইউটিউবে। এরপরই বদলে যায় তার চিন্তাধারা।
Advertisement
বিষয়টি জানান বড় ভাই পাপেলকে। পাপেলও লুফে নেন নতুন চ্যালেঞ্জ। চাকরি ছেড়ে ঢাকার এক আত্মীয়ের ফিতার রশি তৈরির কারখানায় এক সপ্তাহ প্রশিক্ষণ নেন। তারপর নিজেরাই স্বল্প পরিসরে গড়ে তোলেন কারখানা। এখন সেই ফিতার রশি বিক্রি করে দুই ভাই আয় করছেন লাখ লাখ টাকা।
পাপেল ও পারভেজের বাড়ি গাইবান্ধার সাদুল্ল্যাপুর উপজেলার কামারপাড়া ইউনিয়নের নুরপুর গ্রামে। তাদের কারখানায় তৈরি ফিতার রশি ব্যবহার হচ্ছে ট্রাক, ট্রাক্টর, দোলনা, গরু বাঁধাসহ ইত্যাদি কাজে। এসব রশি এখন জেলার গণ্ডি পেরিয়ে যাচ্ছে রংপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায়।
সরেজমিন দেখা যায়, প্রত্যন্ত গ্রামের রাস্তার পাশে ছোট একটি ঘর। ঘরের ভেতরে চলছে মেশিনে ফিতার রশি তৈরির কাজ। মেশিনগুলো বিদ্যুতের সাহায্যে চলছে। ফিতা থেকে তৈরি হচ্ছে নানান রঙের রশি। কারিগর হিসেবে আটজন কারখানায় কাজ করছেন। তাদের তদারকি করছেন দুই ভাই।
Advertisement
কথা বলে জানা যায়, ২০২৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারিতে দুটি মেশিন দিয়ে যাত্রা শুরু করেন তারা। পরবর্তী সময়ে আরও ছয়টি মেশিন কেনেন। বর্তমানে কারখানায় রয়েছে আটটি মেশিন।
প্রতিমাসে ১২ লাখ টাকার ফিতার রশি বিক্রি করেন দুই ভাই। কর্মচারীদের বেতন বাদ দিয়েও তাদের বছরে আয় ৬-৭ লাখ টাকা। প্রত্যন্ত গ্রামে এরকম একটি কারখানা হওয়ায় কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে স্থানীয়দের। বর্তমানে তাদের কারখানায় আটজন নারী-পুরুষ কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। ডে-নাইট শিফটে চলছে কারখানা।
স্থানীয় স্কুলশিক্ষক হামিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘তাদের দুই ভাইয়ের সফতায় আমরা খুশি। প্রথমে ভেবেছিলাম ছেলে দুটি লস করার জন্য এ কাজে হাত দিয়েছে। তবে দিন যত যাচ্ছে তারা তত সফলতা পাচ্ছে।’
মুকুল হোসেন নামের আরেকজন বলেন, ‘দুই ভাই পাপেল ও পারভেজের সফলতায় আমরা গ্রামবাসী খুশি। কাজের মাধ্যমে কীভাবে মানুষ পরিচিত হয়, তা আমরা এই দুই ভাইয়ের কর্মকাণ্ডে বুঝতে পারছি।’
Advertisement
এ বিষয়ে বড় ভাই পাপেল মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘সংসারে অভাবে কারণে ঢাকা শহরে একটি গার্মেন্টসে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে চাকরি করতাম। হঠাৎ একদিন ছোট ভাই পারভেজ ইউটিউবে দেখেন ফিতার রশি তৈরি করে বিক্রি করলে লাভ বেশি হয়। তার কাছে বিষয়টি জানতে পেরে গার্মেন্টসের চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে এক আত্মীয়ের ফিতার রশি তৈরির কারখানায় এক সপ্তাহ প্রশিক্ষণ নিই। তারপর স্বল্প পরিসরে দুটি মেশিন দিয়ে কাজ শুরু করি। এখন ভালোই চলছে। চেষ্টা আর পরিশ্রম করলে জীবনে অনেক কিছুই সম্ভব।’
ছোট ভাই পারভেজ মিয়া বলেন, ‘দেড় বছর আগে রংপুর শহরের একটি ক্লিনিকে কর্মচারী হিসেবে চাকরি করতাম। পরে চাকরি ছেড়ে দিলে বেকার হয়ে যাই। একদিন ইউটিউব দেখতে দেখতে ফিতার রশি তৈরির বিষয়টি আমার নজরে আসে। ফিতা তৈরির সিস্টেমটা কয়কশ ইউটিউবে দেখে বড় ভাই পাপেলকে বলি। তখন আমার কথা শুনে বড় ভাই দুটি মেশিন দিয়ে ফিতার রশি তৈরি শুরু করেন। এখন মোটামুটি দুই ভাইয়ের ভালোই চলছে।’
গাইবান্ধা বেসিকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ আল ফেরদৌস বলেন, তাদের দুই ভাইয়ের এই কারখানা আর বড় পরিসরে করতে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
এ এইচ শামীম/এসআর/জিকেএস