ক্যাম্পাস

জুলাই আন্দোলনের হামলাকারীকে পরীক্ষার সুযোগ দিলেন বিভাগীয় প্রধান

জুলাই আন্দোলনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় অংশগ্রহণকারী এক ছাত্রলীগ নেতাকে হাসপাতালে বসে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। লোকপ্রশাসন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক হরে কৃষ্ণ কুন্ডু এই সুযোগ করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

Advertisement

পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ইয়া রাফিউ শিকদার আপন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭ ব্যাচের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী। তবে বর্তমানে ৪৯ ব্যাচের সঙ্গে তার শিক্ষা কার্যক্রম চলমান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা যায়, ইয়া রাফিউ শিকদার ঢাকার একটি হাসপাতালে বসে পরীক্ষা দেওয়ার আবেদন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী কোনো শিক্ষার্থী বিশেষ পরীক্ষা দিতে চাইলে বিভাগীয় সভাপতির মাধ্যমে উপাচার্য বরাবর আবেদন করতে হয়। সেই আবেদনে বিভাগীয় সভাপতি, মেডিকেল অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তথ্য যাচাই করে সুপারিশ করেন। পরে সেই সুপারিশের ভিত্তিতে পরীক্ষার অনুমতি দেন উপাচার্য।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইয়া রাফিউ শিকদার আপন জুলাই আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। এরমধ্যে ১৪ জুলাই রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের তাজউদ্দীন আহমেদ হলের কক্ষে কক্ষে গিয়ে শিক্ষার্থীদের মারধর ও হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন। এছাড়া হলের ফেসবুক গ্রুপে শিক্ষার্থীদের হুমকি দিয়েও পোস্ট দেন তিনি।

Advertisement

আপনের বিভাগের শিক্ষার্থীরা বলেন, ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪৯ ব্যাচের চতুর্থ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু হয়। আপনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতাল থেকে তাকে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দিতে সুপারিশ করেন লোকপ্রশাসন বিভাগের সভাপতি হরে কৃষ্ণ কুন্ডু।

তবে আপন অসুস্থ হওয়ার মিথ্যা নাটক ও জাল ডকুমেন্ট বানিয়ে পরীক্ষার আবেদন করেছেন বলে দাবি বিভাগের শিক্ষার্থীদের।

লোকপ্রশাসন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক হরে কৃষ্ণ কুন্ডু

তারা বলেন, আমরা এর আগেও ইয়া রাফিউ শিকদারের বিচারের দাবি জানিয়েছি। আর বিভাগের সভাপতি সবকিছু জেনে কীভাবে পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেন তা আমাদের বোধগম্য নয়।

Advertisement

আপনের হলে অবস্থানকারী ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী খন্দকার ফাহাদ বলেন, জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর সরাসরি হামলায় জড়িত আপন। এভাবে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা পার পেয়ে যাওয়া মানে জাতির সঙ্গে প্রতারণা করা। বর্তমান প্রশাসন শিক্ষার্থীদের রক্তের ওপর দিয়ে এসে তারা তাদের দায়িত্ব ভুলে গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে লোকপ্রশাসন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক হরে কৃষ্ণ কুন্ডু বলেন, একজন পরীক্ষা দিচ্ছেন। তবে এ বিষয়ে আমি বলতে পারবো না। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আর পরীক্ষা কমিটির সভাপতি বিস্তারিত বলতে পারবেন।

পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল আমিন বলেন, কে পরীক্ষা দেবে আর কে দিতে পারবে না এটি নির্ধারণের এখতিয়ার কমিটির নেই। কোনো শিক্ষার্থী আবেদন করলে বিভাগীয় সভাপতি, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ সংশ্লিষ্টরা যাচাই-বাছাই করে সুপারিশ করলে উপাচার্য পরীক্ষার অনুমতি দেন। এখানে তো বিভাগীয় সভাপতি সুপারিশ করেছেন। আমরা প্রশ্নপত্র মডারেশন, পরীক্ষা রুটিন অনুযায়ী সম্পন্ন, খাতা মূল্যায়ন ও ফলাফলের কাজ করতে পারি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, যেহেতু এখনো কোনো ধরনের আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়নি, সেহেতু তাদের পরীক্ষা দিতে আইনত বাধা নেই। তবে দ্রুতই আমরা তদন্ত প্রতিবেদন সিন্ডিকেটে উত্থাপন করবো। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেই তাদের ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব কার্যক্রম বাতিল হবে।

সৈকত ইসলাম/জেডএইচ/জেআইএম