জাতীয়

ঈদের সময় অতিরিক্ত ভাড়া-যাত্রী বহন করলে লঞ্চের রুট পারমিট বাতিল

ঈদের সময় অতিরিক্ত ভাড়া নিলে ও যাত্রী বহন করলে এবং সদরঘাটে সিরিয়াল ভেঙে যাত্রী তুললে লঞ্চের রুট পারমিট বাতিল করা হবে বলে জানিয়েছেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। 

Advertisement

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) সচিবালয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নৌপথে সুষ্ঠু, সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ নৌচলাচল এবং যাত্রীদের নিরাপদ ভ্রমণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে করণীয় নির্ধারণ বিষয়ক সভা শেষে উপদেষ্টা এ কথা বলেন।

ঈদুল ফিতর সামনে রেখে নৌচলাচলের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্তগুলো ১৫ রমজান থেকে বাস্তবায়ন শুরু হবে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, জিরোপয়েন্ট থেকে সদরঘাট পর্যন্ত রাস্তাটি উন্মুক্ত রাখতে হবে। বাস যাত্রাপথে যত্রতত্র দাঁড়িয়ে রাস্তা বন্ধ করতে পারবে না। আমি পুলিশকে অনুরোধ করেছি, তারা তিনটি জায়গায় র‌্যাকার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন। প্রয়োজন হলে বাস উঠিয়ে নিয়ে যাবেন।

Advertisement

‘গোলাপ শাহ মাজার থেকে সদরঘাট পর্যন্ত এমন একটা বিশৃঙ্খল অবস্থা হয়, কেউ বিকেল ৩টার সময় রওয়ানা হলেও ৭টার লঞ্চ ধরতে পারেন না। একটা সভ্য দেশ, সভ্য শহরে এটা হয় না।’

উপদেষ্টা বলেন, দ্বিতীয়ত (সদরঘাটে) লঞ্চের কোনো সিরিয়াল ব্রেক করা যাবে না। আমি শুধু মুখে মুখে বলছি না, এখানে মালিক সমিতির লোকজন আছেন, তাদের সামনে বলা হয়েছে। সিরিয়াল ভাঙলে ওই লঞ্চের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেওয়া হবে। দরকার হলে তার লাইসেন্স সাসপেন্ড করবো। সে যেই হোক, তার যতই ক্ষমতা থাকুক। সরকারের আইনের চেয়ে বড় ক্ষমতাধর আর কিছু নেই দুনিয়ায়।

তিনি বলেন, লঞ্চ মালিকরা নির্ধারিত ভাড়ার বেশি নেবেন না। এখন যাত্রী কম হওয়ায় তারা নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম ভাড়া নিচ্ছেন। আগামী ১৫ রমজান থেকে নির্ধারিত ভাড়া নেওয়া হবে। আজ-কালকের মধ্যে উনারা ভাড়া টানিয়ে দেবেন, যাতে যাত্রীরা দেখতে পারেন নির্ধারিত ভাড়াটা কী, আর উনারা কী ভাড়া নিচ্ছেন।

লঞ্চে যাত্রীদের নিরাপত্তায় একজন কমান্ডার ও তিনজন আনসার থাকবে জানিয়ে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আনসারদের আচরণের বিষয়ে বলা হয়েছে। আনসারদের যাত্রীদের সুরক্ষা দেওয়া ছাড়া অন্য কোনো কাজ নেই।

Advertisement

‘কোনো লঞ্চ অতিরিক্ত যাত্রী বহন করতে পারবে না। এ বিষয়ে আমাদের ইন্সপেক্টররা থাকবেন। শুধু সদরঘাটে না রাস্তায় কোনো জায়গা থেকে যদি অতিরিক্ত যাত্রী নেন কোনো লঞ্চ মালিক, সেজন্য কোস্টগার্ডকে বলা হয়েছে। নৌবাহিনীকেও বলা হয়েছে। কারণ নৌবাহিনীকে গ্রেফতারের ক্ষমতা দেওয়া আছে।’

নৌ পুলিশ, র‍্যাব, কোস্টগার্ড অহেতুক কোনো লঞ্চে উঠে তল্লাশি করবে না জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, যদি সেটা করা হয়, আমি লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে বলবো, তারা একটা অভিযোগ দেবেন। আমরা ব্যবস্থা নেবো।

তিনি আরও বলেন, ঘাটগুলোতে কুলিদের ইউনিফর্ম ও নেমপ্লেট থাকতে হবে। যদি না থাকে সে ইজারাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাখাওয়াত হোসেন বলেন, রাতে স্পিডবোট ও বাল্কহেড চলবে না। একটি লঞ্চ আরেকটি লঞ্চের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে না। লঞ্চের ফিটনেস সার্টিফিকেট থাকতে হবে। ফিটনেস ইন্সপেকশন কাল থেকেই শুরু হবে। মালিকদের বলবো, তারা যাতে ফিটনেস সার্টিফিকেটটা নিয়ে নেন। তা না হলে রাস্তায় যদি তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয় তাহলে সরকার দায়ী থাকবে না।

যাত্রী নামিয়ে বাস ফেরিতে ওঠানোর জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন উপদেষ্টা।

আমরা সব সময় দেখি অতিরিক্ত ভাড়া ও যাত্রী না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ঈদের সময় যখন যাত্রীর চাপ হয় তখন এ নির্দেশনা কেউ মানে না। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে উপদেষ্টা বলেন, ‘এবার কী হবে আমি জানি না। বলা হয়েছে, শুধু জরিমানা নয়, ওই লঞ্চের রুট পারমিট বাতিল করা হবে।'

এবার সবকিছু আমি নিজে দেখবো। আমি নিজেই সদরঘাটে যাবো, বলেন উপদেষ্টা।

অন্তর্বর্তী সরকারের এটা প্রথম ঈদ। সব সময়ই নিয়ম ভাঙার একই ঘটনা ঘটে। যারা আগে ছিল এখনো তারাই রয়েছে। তাহলে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, এ বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমি তো অত্যন্ত আশাবাদী। না হলে আমি রোজার মধ্যে এতক্ষণ কেন কথা বলবো? আমার কি কথা বলার শখ আছে? এত শখ তো নেই! হর্ষবর্ধন যখন বঙ্গ জয় করেছিল তখন কী হয়েছিল সেটা তো আমি জানি না, আমি আমার কথা বলতে পারি। আগে তো অনেক ভালো জিনিস হয়েছিল, খারাপ জিনিস হয়েছিল। আমরা চেষ্টা করছি।

বর্তমান পরিস্থিতিতে লঞ্চে একজন কমান্ডার তিনজন আনসার পর্যাপ্ত কি না, জানতে চাইলে নৌ উপদেষ্টা বলেন, ক্রিটিক্যাল জায়গাগুলোতে কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ, এমনকি নৌবাহিনীকে থাকার জন্য বলা হয়েছে। আমি এটাও বলেছি প্রয়োজনে আত্মরক্ষার জন্য যা করতে হয়, সেটাই করবেন। তাই যারা অপকর্ম করার চিন্তা-ভাবনা করছেন, আশা করি চিন্তা-ভাবনা করে করবেন।

এসময় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ, বিআইডব্লিউটি-এ চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা, নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর মোহাম্মদ মাকসুদ আলমসহ নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড, পুলিশ, লঞ্চ মালিক সমিতিসহ বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসকরা উপস্থিত ছিলেন।

আরএমএম/এমএইচআর/এএসএম