দেশজুড়ে

‘ব্যবসায়ীদের দখলে’ হিমাগার, ভাড়া কমলেও কমেনি ভোগান্তি

• হিমাগার গেটে আলু নিয়ে কৃষকদের অপেক্ষা• রাতের আঁধারে ব্যবসায়ীদের আলু হিমাগারে ঢোকানোর অভিযোগ• ১০ হাজার বস্তা আলু নেওয়া সম্ভব হলেও আসছে ২৫ হাজার বস্তা• হিমাগারে আলু সংরক্ষণের সরকারি নিয়ম ৬০ শতাংশ কৃষকের ৪০ শতাংশ ব্যবসায়ীদের

Advertisement

একদিকে আলুর ভালো দাম না পেয়ে হতাশ কৃষকরা, অন্যদিকে হিমাগারে আলু সংরক্ষণ নিয়েও নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে তাদের। কৃষকদের আন্দোলনের মুখে হিমাগারে আলু রাখার ভাড়া প্রতি কেজি সর্বোচ্চ ৬ টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। এতে কিছুটা স্বস্তি পেলেও আলু সংরক্ষণের কার্ড (অনুমতিপত্র) চাহিদামতো পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ কৃষকদের।

কৃষকদের অভিযোগ, এখন অধিকাংশ হিমাগারে আলু রাখছেন ব্যবসায়ীরা। আবার কার্ড পাওয়ার পরও হিমাগার গেটে আলু নিয়ে কৃষকদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে দিনের পর দিন। অথচ ব্যবসায়ীদের ট্রাক ট্রাক আলু ঢোকানো হচ্ছে হিমাগারগুলোতে।

হিমাগার কর্তৃপক্ষের দাবি, হিমাগারে রাখা আলুতে লাভ বেশি হওয়ায় এবার কৃষকরা বীজের পাশাপাশি বিক্রির উদ্দেশ্যেও আলু সংরক্ষণে ঝুঁকেছেন। ফলে আলু সংরক্ষণে হিমাগারে চাপ বেড়েছে, যা সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। দিনে যেখানে হিমাগারে ১০ হাজার বস্তা আলু নেওয়া সম্ভব, সেখানে কৃষকরা নিয়ে আসছেন ২০ থেকে ২৫ হাজার বস্তারও বেশি। ফলে হিমাগার গেটে যানজট তৈরি হচ্ছে।

Advertisement

আরও পড়ুন হিমাগারে আলু রাখতে কেজিপ্রতি দিতে হবে পৌনে ৭ টাকা সড়কে আলু ফেলে কৃষকদের বিক্ষোভ

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এবার জেলায় আলু চাষ হয়েছে ৪৩ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে, যা থেকে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৯ লাখ ৬৬ হাজার ৫৪৬ মেট্রিক টন। তবে অনুকূল আবহাওয়ার কারণে জেলায় এবার ১০ লাখ মেট্রিক টনেরও অধিক আলু উৎপাদনের আশা করছে কৃষি বিভাগ। জেলার ১৯টি হিমাগারে আলু সংরক্ষণ ক্ষমতা ১ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন। যেখানে কৃষকদের পাশাপাশি আলু সংরক্ষণ করেন ব্যবসায়ীরাও। কিন্তু হিমাগারে সংরক্ষিত আলুর লাভ বেশি পেয়ে কৃষকরা এবার নিজেরাই সংরক্ষণে ঝুঁকে পড়েছেন।

কালাই উপজেলার ধুপসাড়া গ্রামের ইমরান হোসেন বলেন, কয়েকদিন ধরে ধরনা দিয়েও আলুর কার্ড সংগ্রহ করতে পারিনি। অথচ আমাদের বাড়ির পাশেই হিমাগার। যেখানে প্রতি রাতেই ব্যবসায়ীদের হাজার হাজার বস্তা আলু নেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, শুধু এই হিমাগারেই নয়, জেলার প্রতিটি হিমাগারের সামনেই ব্যবসায়ীদের আলুবোঝাই ট্রাকের সারি। কৃষকদের আলু তো ট্রাকে আসে না। আমাদের অভিযোগ কে শুনবে?

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার বটতলী গ্রামের আনোয়ার হোসেন বলেন, হিমাগারে ২৫ বস্তা আলু রাখার জন্য দু’দিন ধরে অপেক্ষা করেও রাখতে পারিনি। হিমাগারের গেটের সামনে ট্রাক, ট্রলি ও ভ্যানে শত শত বস্তা আলু নিয়ে আমার মতো অপেক্ষা করছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। কিন্তু গেট খুলছে না। কখন নেওয়া হবে তাও জানি না। শুনছি রাতে নাকি ব্যবসায়ীদের আলু ঠিকই নেওয়া হচ্ছে।

Advertisement

আরও পড়ুন আরও পড়ুন- কৃষকের গলায় আলুর ফাঁস হিমাগার ভাড়া বৃদ্ধির খবরে দুশ্চিন্তায় আলু চাষিরা

ক্ষেতলালের বটতলী হিমাদ্রী লিমিটেডের ব্যবস্থাপক আব্দুল কুদ্দুস জাগো নিউজকে বলেন, কৃষকরা যে অভিযোগ করছেন তা পুরোপুরি সঠিক নয়। কৃষকদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের কিছু আলু রাখতে হয়, কারণ তারা প্রতি বছরই আমাদের হিমাগারে আলু রাখেন। দুই বছর ধরে হিমাগারে আলু সংরক্ষণে লাভ হওয়ায় কৃষকরা শুধু বীজ নয়, বিক্রির জন্যও আলু সংরক্ষণ করছেন। ফলে হিমাগারে চাপ বেড়েছে, যা সামাল দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। ৬০ শতাংশ কৃষক এবং ৪০ শতাংশ ব্যবসায়ীদের আলু হিমাগারে সংরক্ষণের সরকারি নিয়ম থাকলেও হিমাগারে ৮০ শতাংশ কৃষকের আলু সংরক্ষণ করা হয় বলে তিনি দাবি করেন।

কালাই উপজেলার এম ইসরাত হিমাগারের ব্যবস্থাপক রায়হান মন্ডল জাগো নিউজকে বলেন, গত বছর প্রতি কেজি আলুর হিমাগার ভাড়া ৬ টাকা হলেও এবার ব্যাংক সুদ ও শ্রমিকের দাম বেশি হওয়ায় ৮ টাকা নির্ধারণ করে হিমাগার অ্যাসোসিয়েশন। কিন্তু কৃষকদের দাবির মুখে সরকার সেই দাম কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ৬ টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করে। ফলে প্রতিটি হিমাগারেই আলু সংরক্ষণে চাহিদা বেড়েছে, যা সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান জাগো নিউজকে বলেন, প্রতি কেজি আলুর হিমাগার ভাড়া পৌনে ৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া হিমাগারগুলোতে কৃষকদের আলু সংরক্ষণে কোনো ধরনের হয়রানি না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সার্বিকভাবেই বিষয়গুলো মনিটরিং করা হচ্ছে। এর কোনো ব্যত্যয় ঘটলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এফএ/জিকেএস