জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসা চলছে অনভিজ্ঞ ডাক্তার, ফার্মাসিস্ট আর স্টাফদের নিয়ে। যার ফলে বাড়ছে ভুল চিকিৎসা।
Advertisement
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসকরা প্রায়ই ভুল চিকিৎসা ও ওষুধ দিয়ে থাকেন। এছাড়া সময়মতো পাওয়া যায় না ডাক্তার ও স্টাফদের।
মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা নিতে আসা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বললে নানা অভিযোগ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের কয়েকজন ডাক্তার-স্টাফ ছাড়া বেশিরভাগই অনভিজ্ঞ। রোগীর সমস্যা ভালোভাবে না শুনে প্রায়ই ভুল চিকিৎসা দেন। সন্ধ্যার পর নারী চিকিৎসকদের মেডিকেল সেন্টারে পাওয়া যায় না। ফলে নারী শিক্ষার্থীরা অনেক সময় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হন। এছাড়া পর্যাপ্ত ওষুধের পরিবর্তে কয়েকটি সাধারণ ওষুধ নিয়ে চলে এখানকার সেবা। যার জন্য শিক্ষার্থীরা মেডিকেল সেন্টারটিকে ‘নাপা সেন্টার’ নামেই ডেকে থাকেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী রুবিনা জাহান তিথি বলেন, ২০২৪ সালের শুরুর দিকে আমার শারীরিক কিছু সমস্যার কারণে ডাক্তার এন্টিবায়োটিক দেয়। এন্টিবায়োটিক সেবনের পর তিনবার নাক দিয়ে রক্ত পড়ে। যতবার বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে গিয়েছি তারা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ না করে শীতকালে এমন হয় বলে চলে যেতে বলেন। পরবর্তীতে ঢাকায় এসে জানতে পারি এন্টিবায়োটিকের ওভার ডোজের ফলে এমন হয়েছে।
Advertisement
পাবলিক হেলথ বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী তারেক মাহমুদের অভিযোগ, ‘ঠান্ডাজনিত কারণে তার কান বন্ধ হয়ে যায়। পরে তিন দিন মেডিকেল সেন্টারে গিয়েছেন। তিন দিনে তিনজন চিকিৎসককে দেখানো হয়। এদের একজন একটি ওষুধ দেন। দিনে দুবার করে ড্রপটি কানে দিতে বলেন। পরবর্তীতে ওষুধ কিনতে গিয়ে জানতে পারি প্রেসক্রিপশনে অন্য ওষুধগুলোর ট্রেড নাম লিখলেও এটা আসলে জেনেরিক (জেনেরিক ড্রাগস)। এছাড়া এমন কোনো কানের ড্রপ নেই। প্রেসক্রিপশনে কোন ওষুধ কতদিন খেতে হবে বা ব্যবহার করতে হবে তাও লেখা ছিল না।’
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৫২ ব্যাচের শিক্ষার্থী মিম বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে রক্ত পরীক্ষা করিয়েছিলাম। সিরিঞ্জ দিয়ে রক্ত কিছুটা টেনে নেওয়ার পর আবার সেটা পুশ করেন চিকিৎসক। এভাবে বেশ কয়েকবার সিরিঞ্জে ব্লাড থাকা অবস্থায় শরীরে পুশ করেন। তখন পুরো জায়গাটা শক্ত হয়ে ফুলে যায়। হাতের ওই জায়গা লাল হয়ে যায়। ভুলভাবে রক্ত নেওয়ায় শরীরে বড় ক্ষতি হতে পারত। দ্রুত এসব অব্যবস্থাপনা শেষ হোক। দক্ষ জনবল নিয়োগ দেওয়া হোক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান মেডিকেল কর্মকর্তা মো. শামসুর রহমান বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের স্বল্পতার কথা স্বীকার করে বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সেভাবে কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ডাক্তার স্বল্পতা দূর করে মেডিকেল সেন্টার পরিচালনার জন্য আমরা বাধ্য হয়েই পার্টটাইম ডাক্তার নিয়োগ দিচ্ছি। তবে অনেকদিন ধরে প্রশাসনকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান-স্টাফ নিয়োগ দেওয়ার জন্য জানাচ্ছি। প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এখানে বর্তমানে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের কোনো পদ নেই। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে জানিয়েছি। চেষ্টা করছি পদ সৃষ্টি করে দ্রুত অভিজ্ঞ ডাক্তার নিয়োগ দিতে। একইসঙ্গে অভিজ্ঞ স্টাফ নিয়োগ দিতেও চেষ্টা করছি।
Advertisement
এফএ/এমএস