জাগো জবস

প্রথমবার পরীক্ষা দিয়েই বিজেএস জয়

নাহিদ হাসান জয়। প্রথমবার পরীক্ষা দিয়েই বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের ১৭তম বিজেএস পরীক্ষায় ‘সহকারী জজ’ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ল’ অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচের ছাত্র। স্নাতকোত্তর চূড়ান্ত পরীক্ষার ভাইভার দিন বিকেলে তিনি এই ফলাফল হাতে পান। তার এই সফলতার গল্প তুলে ধরেছেন জাগো নিউজের কাছে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আজাহারুল ইসলাম—

Advertisement

জাগো নিউজ: আপনার জন্ম ও শৈশব সম্পর্কে জানতে চাই—নাহিদ হাসান জয়: আমার বেড়া ওঠা নাটোর জেলার লালপুর থানার ধনঞ্জয়পাড়া গ্রামে। শৈশবেই ২০০৫ সালে মাত্র ৫ বছর বয়সে বাবাকে হারাই। আমরা ৩ ভাই। আমি সবার ছোট। প্রাথমিক বিদ্যালয় জীবন শুরু করেছিলাম করিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। মাধ্যমিক সম্পন্ন করেছি ২০১৬ সালে করিমপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেছি ২০১৮ সালে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারি কলেজ নাটোর থেকে।

জাগো নিউজ: বিজেএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর অনুভূতি কেমন?নাহিদ হাসান জয়: কিছু অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। সবচেয়ে বড় অনুভূতি হলো, ২৩ ফেব্রুয়ারি আমার মাস্টার্স ভাইভা সম্পন্ন হওয়ার মাধ্যমে অ্যাকাডেমিক জীবনের ইতি ঘটলো। কয়েক ঘণ্টা যেতে না যেতেই জুডিসিয়ারির চূড়ান্ত ফলাফলের সুসংবাদটি এলো। এর মাধ্যমে মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে সম্মানের সাথে অ্যাকাডেমিক জীবন সমাপ্ত করতে পারলাম।

জাগো নিউজ: উত্তীর্ণ হওয়ার পেছনে অনুপ্রেরণা কী ছিল?নাহিদ হাসান জয়: প্রথমেই মহান আল্লাহ তাআলার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা, তিনি আমাকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছেন। কুরআনের সেই আয়াত মনে পড়ে যায় যে, ‘শিগগিরই তোমার রব তোমাকে এত বেশি দেবেন যে, তুমি খুশি হয়ে যাবে।’ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ২০১৮-১৯ সেশনে ল’ অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ভর্তির পর থেকেই আমার ইচ্ছে ছিল একদিন বিচারক হয়ে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবো। পরিবারও আমাকে এ ব্যাপারে উৎসাহিত করেছে। পাশাপাশি উৎসাহিত হয়েছি বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই-আপুদের সুপারিশপ্রাপ্ত হতে দেখে। তাদের অনুপ্রেরণামূলক কথাগুলোও আমাকে উৎসাহিত করেছে। শিক্ষকদের জ্ঞানগর্ভ কথাগুলোও আমাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।

Advertisement

জাগো নিউজ: অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার সাথে জুডিসিয়ারির পড়া কীভাবে সামলে নিয়েছেন?নাহিদ হাসান জয়: আমি প্রথম বর্ষ থেকেই অ্যাকাডেমিক পড়াশোনা ভালোভাবে করেছি। কিন্তু বিজেএসের প্রিপারেশন শুরু করেছি তৃতীয় বর্ষ থেকে। প্রথম ৩ বছর আমি ডিপার্টমেন্টে প্রথম, দ্বিতীয়র মধ্যেই থাকতাম। পরে জুডিসিয়ারির দিকে ফোকাস করতে গিয়ে ডিপার্টমেন্টের চূড়ান্ত রেজাল্টে তৃতীয় হই। ডিপার্টমেন্টের কিছু কোর্সের সাথে জুডিসিয়ারির সিলেবাসের মিল থাকে। কোর্সগুলো আমি খুব ভালোভাবে পড়তাম। ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং অনুশীলন করতাম প্রতিনিয়ত।

আরও পড়ুন বিসিএসে শাহরিয়ারের প্রশাসন ক্যাডার জয়ের গল্প নতুনরা যেভাবে বিসিএসের প্রস্তুতি নেবেন

জাগো নিউজ: বিচারক হওয়ার স্বপ্ন কখন থেকে? সফলতার পেছনে কার অবদান বেশি?নাহিদ হাসান জয়: বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ল’ অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ভর্তির পর থেকেই আমার ইচ্ছে ছিল যে, একদিন বিচারক হয়ে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবো। এ যাত্রায় শিক্ষকদের পাশাপাশি পরামর্শক হিসেবে বেশি সহযোগিতা পেয়েছি সাকিব আহমেদ ইমন ভাই (সহকারী জজ ১৫তম বিজেএস) এবং আমার বিভাগের প্রথম ব্যাচের আসাদুজ্জামান নুর ভাইয়ের (সহকারী জজ ১৬তম বিজেএস) কাছ থেকে। এ ছাড়া আমার বড় ভাই, খুব কাছের বন্ধু সবাই আমাকে সহযোগিতা এবং অনুপ্রাণিত করেছেন।

জাগো নিউজ: কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন এবং কত সময় পড়াশোনা করেছেন?নাহিদ হাসান জয়: প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম জেনারেল অংশ দিয়ে। আমার মনে হয় গণিত, বিজ্ঞান, বাংলাদেশ-আন্তর্জাতিক অংশে খুব সুন্দর একটা মার্কস পেলে এ যাত্রায় ভালো ফলাফল করাটা অনেকটা সহজ হয়ে পড়বে। আমি ধারাবাহিক ভাবে ১২-১৪ ঘণ্টা পড়াশোনা করে গেছি।

জাগো নিউজ: ভাইভার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? কততম ভাইভায় সফল হয়েছেন?নাহিদ হাসান জয়: এটাই আমার প্রথম জুডিসিয়ারি এবং চাকরির পরীক্ষা। আমার অনার্স চূড়ান্ত রেজাল্টের মধ্যেই সার্কুলারটা পেয়েছিলাম। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়েছি। অবশেষে মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে সুপারিশপ্রাপ্ত হলাম। যেদিন ভাইভা ছিল; সেদিন বিকেলেই ফলাফল হাতে পাই। ভাইভার অভিজ্ঞতায় যেটা মনে হয়েছে, সেটা হলো রিটেনে খুব ভালো একটা মার্কস থাকলে ভাইভায় ২-১টি প্রশ্নের উত্তর সঠিক জানা না থাকলেও কোনো নেগেটিভ প্রভাব ফেলে না। ভাইভা বোর্ডে সব প্রশ্নের উত্তর পারতে হবে এমন মনে হয়নি। যেটা পারবেন না, সেটা সুন্দরভাবে বিনয়ের সাথে স্যরি বলা যেতে পারে। বিচারকরা অনেক সময় আপনার নার্ভ পরীক্ষা করতে পারেন। সেটাও আপনাকে বিনয়ের সাথেই মোকাবিলা করতে হবে।

Advertisement

জাগো নিউজ: যারা বিচারক হতে চান, তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?নাহিদ হাসান জয়: নতুনদের জন্য পরামর্শ হলো যাদের জুডিসিয়ারির ইচ্ছে আছে, তাদের লেখার মান বাড়াতে হবে। খাতার পেজের সংখ্যা বৃদ্ধি না করে কোয়ালিটি বৃদ্ধি করতে হবে। আল্লাহ তাআলার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রেখে পরিশ্রম করে যেতে হবে।

জাগো নিউজ: বিচারক হিসেবে দেশের জন্য কী অবদান রাখতে চান?নাহিদ হাসান জয়: ভবিষ্যতে আমি দেশ ও দেশের মানুষের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। মানুষের আস্থার সর্বশেষ জায়গা হলো বিচার বিভাগ। আমি বিচার বিভাগের সেই সম্মানে অবদান রাখতে চাই।

এসইউ/এএসএম