জাতীয়

ডিসেম্বরে হতে পারে জাতীয় নির্বাচন, এনসিপির দাবি ভিন্ন

ঐক্য-অনৈক্য আর সংস্কারের মাঝেই শোনা যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারকাজের পদক্ষেপ আর নির্বাচনের প্রস্তুতি একই ধারায় চলছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সর্বশেষ যুক্তরাজ্যের স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরের প্রথম দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।

Advertisement

দেশের অন্যতম প্রধান দল বিএনপিও দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এরই মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে তারা। তাদের এক সময়ের জোট সঙ্গী জামায়াতে ইসলামীসহ অন্য দলগুলোও প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এদিকে, আওয়ামী লীগ সরকার পতন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নামে নতুন দল গঠন করেছেন। তারা আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন চান না। তারা গণহত্যার দায়ে আগে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিচার চান। নতুন প্রজাতন্ত্র গড়তে একটি নতুন সংবিধান ও গণপরিষদ নির্বাচন চান।

গত সোমবার (৩ মার্চ) ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সমতা, প্রস্তুতি ও সংকট ব্যবস্থাপনাবিষয়ক কমিশনার হাজদা লাহবিব প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন। তখন ড. ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই ভোট সম্ভবত চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।

Advertisement

আরও পড়ুন: ভোট সম্ভবত ডিসেম্বরের মধ্যেই হবে: প্রধান উপদেষ্টা সংস্কার নিয়ে ঐক্য কতদূর? একটা পলাতক দল সর্বাত্মক চেষ্টা করছে অস্থিতিশীল করার জন্য

এর আগে, গত ১১ ফেব্রুয়ারি ইউএনডিপিসহ উন্নয়ন সহযোগী ১৮টি দেশের রাষ্ট্রদূত প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিনসহ অন্য কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ ইসির অবস্থান তুলে ধরেন। বলেন, নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বরে ভোট ধরেই সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। জাতীয় নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো প্রস্তুতি নেই নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক সংস্থাটির, এমন বার্তা দেন তিনি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ১৬ ডিসেম্বরের বক্তব্যে বলেছিলেন, যদি অল্প পরিমাণে সংস্কারসহ নির্বাচন করতে হয় সেখানেই যদি রাজনৈতিক মতৈক্য গিয়ে দাঁড়ায় তাহলে পরে এ বছরের শেষ নাগাদ ডিসেম্বরে ইলেকশন; যদি আরেকটু সংস্কার করার সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে ২০২৬ এর জুন নাগাদ ইলেকশন করা সম্ভব।

ইসির প্রস্তুতির বিষয়ে আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম আমাদের আর্লিয়েস্ট ডেটটা ধরে প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। আমাদের অবস্থান এখনো অপরিবর্তিত। আমরা ডিসেম্বর ধরেই প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। আমাদের ভিন্ন প্রস্তুতি নেই।’

এদিকে, এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলো জোরেশোরে মাঠে নেমেছে। ভোটের সমীকরণ কী হবে, কোন দলের সঙ্গে কার জোট হচ্ছে, কার সঙ্গে কোথায় আসন সমঝোতা, এসব বিষয়েও আলোচনা শুরু হচ্ছে। নতুন দলসহ অন্যরাও ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার কথা বলাবলি করছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: নির্বাচনের চূড়ান্ত তারিখ প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকেই শুনবেন

রাজনীতির মাঠে প্রভাবশালী দল বিএনপি নতুন সরকার গঠনের পর থেকেই নির্বাচন চাইছে। সম্প্রতি রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে নির্বাচিত ‘কর আইনজীবী’ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে শ্রদ্ধা জানানো শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নির্বাচন যত দেরি হবে দেশ তত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জনগণ একটি নির্বাচিত দায়বদ্ধ ও জবাবদিহি সরকারের জন্য অপেক্ষায় আছে।

আরও পড়ুন: সরকারকে দ্রুত নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান বিএনপির দুই শতাধিক আসনে আসতে পারে ধানের শীষের সবুজ সংকেত এত আগে কেন নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা করছে জামায়াত?

এদিকে, এরই মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য ৩০০ আসনের প্রায় সবগুলোতেই প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে জামায়াত। জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার অবশ্য সম্প্রতি বলেছেন, এখন জেলা পর্যায় থেকে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হচ্ছে। তবে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন এলে তারা কেন্দ্রীয়ভাবে প্রার্থী ঘোষণা করবেন।

অপরদিকে, মঙ্গলবার (৪ মার্চ) ঢাকার সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি এবং রায়েরবাজার কবরস্থানে চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রথম দলীয় কর্মসূচি শুরু করেছে নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, একটি নতুন প্রজাতন্ত্র গড়তে একটি নতুন সংবিধান ও গণপরিষদ নির্বাচন প্রয়োজন। পুরাতন সংবিধান রেখে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে, রায়েরবাজারে এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম সাংবাদিকদের বলেন, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিচার না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো মানুষ, কোনো রাজনৈতিক দল ভুল করেও যেন নির্বাচনের কথা না বলে।

সারজিস বলেন, খুনি হাসিনাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসতে হবে। সে বিচারের মঞ্চে দাঁড়াবে, ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়াবে। যে হাসিনার নির্দেশে এতগুলো হত্যা করা হলো সেই খুনের বিচার না দেখা পর্যন্ত কীভাবে এ দেশের মানুষ ভিন্ন কিছু চিন্তা করে? যতদিন না আমরা খুনি হাসিনাকে ওই ফাঁসির মঞ্চে না দেখছি, এই বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। আমরা রাজপথে ছিলাম। আমার যে ভাইয়েরা রাজপথে জীবন দিয়েছে, আমাদের যে মায়েদের চোখ দিয়ে এখনও কান্না ঝরছে, পানি পড়ছে আমরা যেন মরার আগে অন্তত খুনি হাসিনার বিচারটা দেখে মরতে পারি।

সারজিস আলমের এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, ফ্যাসিস্টদের বিচার সবাই চাই। কিন্তু নির্বাচন প্রক্রিয়া পেছানোর কোনো অজুহাত জনগণ গ্রহণ করবে না। নিয়মতান্ত্রিকতার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। নির্বাচন পিছিয়ে দীর্ঘসূত্রতার পেছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র আছে। এটা হলে দেশের ক্ষতি হবে।

নতুন দলকে ধৈর্য ধরে আগানোর পরামর্শ দিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, এই নির্বাচনই তো শেষ না। এর পরও নিবার্চন হবে। নতুন দল গঠন করেই ক্ষমতায় চলে আসবে বিষয়টা এত সহজ নয়। বিএনপি একদিনেই এই জায়গায় আসেনি। প্রতিষ্ঠিত হতে সময় লাগে, সেটা মানতে হবে। বিএনপি প্রতিষ্ঠিত করতে প্রতিষ্ঠাতার জীবনই চলে গেছে। আমাদের চেয়ারপারসন আন্দোলন করতে গিয়ে ফ্যাসিবাদের নির্যাতনে জীবনের শেষ প্রান্তে।

এসএনআর/এমএমএআর/এএসএম