ডোনাল্ড ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি এক সরল সূত্রে কাজ করে: যে দেশ যুক্তরাষ্ট্রের ওপর যত বেশি নির্ভরশীল, তাকে তিনি তত বেশি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। গত সপ্তাহের ঘটনাবলি সেটাই স্পষ্ট করেছে, যার চূড়ান্ত পরিণতি হলো ৩ মার্চের ঘোষণা—যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের সামরিক সহায়তা স্থগিত রাখছে, যতক্ষণ না ইউক্রেন রাশিয়ার সঙ্গে শান্তির শর্ত মেনে নেয়।
Advertisement
এই কঠিন পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির জন্য কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। আপাতত তার উচিত ট্রাম্পের দেওয়া সীমিত সহায়তাই গ্রহণ করা। কারণ এই সহায়তা ছাড়া পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ইউক্রেনের নির্ভরতারাশিয়া যখন তিন বছর আগে ইউক্রেন আক্রমণ করে, তখন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে অস্ত্র, অর্থ, গোয়েন্দা তথ্য ও যোগাযোগ সহায়তা দিয়ে সহায়তা করেছিল। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যবোধ ও কৌশলগত স্বার্থ রক্ষা করতেই এই সহায়তা দিয়েছিলেন। কিন্তু ট্রাম্পের শাসনে সেই নির্ভরতাই এখন ইউক্রেনের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন>>
Advertisement
মার্কিন অস্ত্র ছাড়া ইউক্রেন হয়তো গ্রীষ্ম পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারবে, বিশেষ করে যদি ইউরোপীয় দেশগুলো তাদের সহায়তা বাড়ায়। কিন্তু এতে ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়বে। যদি গোয়েন্দা তথ্য ও যোগাযোগ সহায়তাও বন্ধ হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও সংকটময় হয়ে উঠবে।
জেলেনস্কির সামনে কঠিন পথজেলেনস্কির সামনে মূলত দুটি পথ খোলা:
১. ট্রাম্পের দেওয়া খনিজ সম্পদ চুক্তি মেনে নেওয়া, যা হয়তো কার্যকর কোনো নিরাপত্তা দেবে না, তবে অন্তত কিছু মার্কিন সহায়তা নিশ্চিত করবে।
২. চুক্তি প্রত্যাখ্যান করা, যার ফলে ইউক্রেন পুরোপুরি যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা হারাবে।
Advertisement
এখানে প্রথম বিকল্পটি বেছে নেওয়াই বাস্তবসম্মত। কারণ এতে ইউক্রেন অন্তত কিছু সামরিক ও গোয়েন্দা সহায়তা পেতে পারে। ইউরোপীয় দেশগুলো যদি মার্কিন অস্ত্র কিনে ইউক্রেনকে সরবরাহ করতে পারে, তাহলে সেটিও একটি সম্ভাবনা। একই সঙ্গে, এই চুক্তির মাধ্যমে ইউক্রেন ট্রাম্পের ওপর কিছুটা হলেও কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে পারবে।
ইউরোপের জন্য সতর্কবার্তাট্রাম্প ইউক্রেনের অস্ত্র সহায়তা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তকে সাময়িক বিরতি বললেও ইউরোপকে ধরে নিতে হবে যে এটি স্থায়ী সিদ্ধান্ত হয়ে উঠতে পারে। তাই ইউরোপের উচিত রুশ রাষ্ট্রীয় সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে তা ইউক্রেনের প্রতিরক্ষার জন্য ব্যবহার করা। পাশাপাশি, ইউক্রেনের নিজস্ব অস্ত্র উৎপাদন বাড়ানো, ইউরোপের সামরিক উৎপাদন বৃদ্ধি করা এবং ইউক্রেনের স্বাধীনতার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেওয়া প্রয়োজন।
ন্যাটো ইতিহাসের সবচেয়ে সফল সামরিক জোট হলেও ট্রাম্প যখন তার মিত্রদের নির্ভরতাকে দুর্বলতার সুযোগ হিসেবে দেখছেন, তখন ইউরোপকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। ট্রাম্প এরই মধ্যে কানাডা ও মেক্সিকো থেকে পণ্য আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়ে মিত্রদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই কৌশল ইউক্রেন, ইউরোপ বা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না। বরং এটি ইউক্রেনের দুর্বলতাকে আরও বাড়িয়ে দেবে এবং বিশ্বকে আরও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেবে। ইউরোপকে এখন প্রস্তুত থাকতে হবে, যেন তারা রাশিয়া ও একটি অনিশ্চিত যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে। অন্যথায়, এটি ন্যাটোর জন্যেও বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি করতে পারে।
কেএএ/