ফিচার

১৮ বছরের আগেই যৌন নির্যাতনের শিকার ৩৭ কোটি নারী

সানজানা রহমান যুথী

Advertisement

আজ বিশ্ব যৌন নিপীড়ন বিরোধী দিবস। আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত কেউ না কেউ যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। ছোট শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ কেউই যৌন নিপীড়ন থেকে রেহাই পাচ্ছে না। নারী, শিশু, প্রবীণ নারীর পাশাপাশি ছোট ছেলে শিশু,পুরুষরাও যৌন নিপীড়নের শিকার হয়।

তবে এক্ষেত্রে নারী, শিশু, বৃদ্ধরাই নিপীড়নের শিকার বেশি হয়। যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদ স্বরূপ প্রতিবছর ৪ মার্চ বিশ্ব যৌন নিপীড়ন বিরোধী দিবস পালিত হয়। তবে আমাদের দেশে এই দিনটি পালনের রেওয়াজ নেই বললেই চলে।

যৌন নিপীড়ন কী?যৌন হয়রানি ও শরীরের অবাঞ্ছিত স্থানে অনধিকার চর্চা, সেই সঙ্গে অননুমোদিত যৌন কর্মকাণ্ডের চেষ্টা করাকেই বলা হয় যৌন নিপীড়ন। সহজ কথায় কারো ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক যৌন কার্যকলাপ বা যৌন জিঘাংসা বাস্তবায়নের অভিপ্রায়কেই বলা হয় যৌন নিপীড়ন।

Advertisement

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হু-এর মতে, প্রতি ৩ জন নারীর মধ্যে ১ জন তাদের জীবদ্দশায় শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বে ১৮ বছর বয়সের আগেই ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৩৭ কোটি নারী ও মেয়ে শিশু। গড়ে এই সংখ্যা প্রতি ৮ জনে একজন।

স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাইল্ডলাইট গ্লোবাল চাইল্ড সেফটি ইনস্টিটিউটের করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, এক বছরে বিশ্বের ৩০ কোটির বেশি শিশু অনলাইনে যৌন নিপীড়ন ও হয়রানির শিকার হয়। এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা তাদের গবেষণায় দেখিয়েছেন, বিশ্বে প্রতি আট শিশুর একটি গত এক বছরে অসম্মতিমূলক কথাবার্তা, যৌনতা-সম্পর্কিত ছবি ও ভিডিও অনুমতি ছাড়াই ছড়িয়ে দেওয়ার শিকার হয়েছে। বিশ্বজুড়ে ভুক্তভোগী শিশুর এ সংখ্যা প্রায় ৩০ কোটি ২০ লাখ। শিশু নির্যাতনের ঘটনার ৭৬ শতাংশই যৌন নিপীড়নের ঘটনা। এই পরিসংখ্যানগুলো থেকে এটি স্পষ্ট যে যৌন নিপীড়ন একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা, যা নারী ও শিশু উভয়কেই প্রভাবিত করে। এই সমস্যা সমাধানে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের এগিয়ে আসা জরুরি।

আমাদের সবার উচিত যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠা। তাহলেই আমরা প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠতে পারব। উন্মেচিত হবে এক নতুন পৃথিবীর। যৌন নিপীড়ন দমনে আমরা সবাই ভূমিকা রাখতে পারি। কীভাবে? আসুন জেনে নেই কয়েকটি উপায়-

১. ছোট শিশুদের স্বাভাবিকভাবেই যৌন নিপীড়ন সম্পর্কে ধারণা নেই। বাবা-মার উচিত সন্তানদের এ সম্পর্কে তাদের যথাযথ ধারণা দেওয়া। পিতা-মাতার উচিত শিশুদের সঙ্গে বন্ধুত্ব সুলভ আচরণ করা ও তাদের কথা গুরুত্ব সহকারে শোনা। কারণ অনেক সময় শিশুরা যৌন নিপীড়নের শিকার হলে বাবা-মায়ের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক না থাকায় তারা তাদের ওপর নিপীড়নের কথা বলতে পারে না এবং অনেক সময় বাবা-মাও শিশুদের কথা গুরুত্ব সহকারে শোনেন না।

Advertisement

২. শিশুকে কখনো একা কারো সঙ্গে ছেড়ে না দেওয়া। অনেক পরিবারে আত্মীয় স্বজনদের মাঝে কিছু অসৎ লোক থাকে। যারা বিকৃত মানসিকতার পরিচয় দেয়। অনেক সময় তারা শিশুদের একা পেলে তাদের যৌন হয়রানি করে। তাই বাবা-মার উচিত শিশুদের প্রতি সচেতন হওয়া।

৩. বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক যৌন নিপীড়ন সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া। সব বিদ্যালয়ে অভিযোগ বক্স রাখা। কোনো শিক্ষার্থী যৌন নিপীড়নের শিকার হলে যেন অভিযোগ বক্সে অভিযোগ করতে পারে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের মাঝে যৌন নিপীড়ন সম্পর্কিত সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলা।

৪. মিডিয়া, বিভিন্ন ক্যাম্পেইন, সেমিনার ইত্যাদির মাধ্যমে যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে পারি। যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিত করা।

৫. আমাদের সমাজে কেউ যৌন নিপীড়নের শিকার হলে আমরা প্রায়ই তাদের বাঁকা চোখে দেখি। এক্ষেত্রে আমরা উল্টো তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারি‌। এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে তাদের সাহস দিতে পারি।

৬. গৃহস্থালি থেকে রাস্তা-ঘাট, অফিস সব জায়গাতেই নারীকে কোনো না কোনোভাবে যৌন নিপীড়নের শিকার হতে হয়। এক্ষেত্রে নারীর নিজেকে হতে হবে আত্মবিশ্বাসী ও সাহসী। প্রয়োজনে নারীরা নিজেদের আত্মরক্ষার মূলত প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। সরকারের উচিত নারীদের নিজেদের আত্মরক্ষার মূলত প্রশিক্ষণে নারীদের অংশগ্রহণে উৎসাহ প্রদান করা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যাতে করে সব নারী এসব প্রশিক্ষণ নিতে পারে সহজেই।

আরও পড়ুন পানির জন্য সংগ্রাম দেশে দেশে  নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ: ক্রমবর্ধমান সামাজিক সংকট 

কেএসকে/জিকেএস