জাতীয়

চকবাজারে ‘বড় বাপের পোলায় খায়’র চাহিদা বেশি

পুরান ঢাকার চকবাজারের ইফতারির নামডাক দেশজুড়ে। বাহারি ইফতারির জন্য ঢাকা শহরের সব এলাকা থেকেই ভোজনরসিকরা চকবাজারে আসেন ইফতারি কিনতে। প্রতি বছরের মতো এ বছরও রোজার শুরু থেকেই জমে উঠেছে পুরান ঢাকার চকবাজারের ইফতারির বাজার। যদিও অন্য বছরের মতো ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় এখনো লক্ষ্য করা যায়নি।

Advertisement

সোমবার (৩ মার্চ) সরেজমিনে দেখা যায়, বিক্রেতারা হাঁকডাক ছেড়ে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। ক্রেতারা আসছেন, দরদাম করছেন। ক্রেতাদের বেশি আকর্ষণ চকবাজারের ঐতিহ্যবাহী ইফতারি ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙা ভইরা লইয়া যায়’, চিকেন সাসলিক, আস্ত কোয়েল, আস্ত খাসির রান ভুনা, সুতি কাবাব, শরবত-ই মোহাব্বত ইত্যাদির প্রতি।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙা ভইরা লইয়া যায়’ ৮০০ টাকা কেজি, চিকেন আচারি ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি, হালিম ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজি, সুতি কাবাব ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া চকবাজারের আকর্ষণীয় ইফতারি আস্ত খাসির রান ভুনা ৮০০ টাকা পিস, আস্ত কোয়েল ৮০ থেকে ১০০ টাকা করে ও আস্ত মুরগি ভুনা ৩০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া শাহী ছোলা ৩২০ টাকা কেজি, ঘুগনি ১৬০ টাকা, কাশ্মীরি বিফ আচারি ১৫০, প্রতি পিস অনথন ১০ থেকে ২০ টাকা, জালি বিফ টিক্কা ৪০ টাকা, জালি টিক্কা ৩০ টাকা, দুধ নান ৬০ টাকা, আলু পরোটা ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আরও পড়ুন

Advertisement

জমজমাট ফুটপাতের ইফতার বাজার জমেনি ইফতারি বাজার, প্রথম রোজায় লোকসানে বেশির ভাগ ব্যবসায়ী ইফতারের আগে সড়কে তীব্র যানজট, মেট্রোরেলেও ঠাঁই নেই

এদিকে শাহী পরোটা ৭০ টাকা পিস, চিকেন সাসলিক ৫০ টাকা পিস, পনির ৮০০ কেজি ও শাহী জিলাপি ৩০০ টাকা কেজি, দইবড়া ১৫০ টাকা কেজি, বাটার নান ১৫০ টাকা পিস, রেশমি কাবাব ১২০ টাকা পিস, ফালুদা ৫০ থেকে ১০০ টাকা বাটি ও মুড়ি মানভেদে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পানীয়র মধ্যে শরবত-ই মোহাব্বত প্রতি লিটা ২০০ টাকা, মাঠা ১০০ টাকা, শাহী মালাই শরবত ১০০ থেকে ২০০ টাকা ও লাবাং ২২০ টাকা লিটার বিক্রি করতে দেখা গেছে।

এছাড়া হরেক রকম আচারের দেখাও মেলে ইফতারি বাজারে। এর মধ্যে আমের আচার ৫০০ ও চালতার আচার ৪০০ টাকা কেজি দরে দাম হাঁকেন বিক্রেতারা। ফলের মধ্যে মাঝারি আকারের তরমুজ ২৫০ থেকে ৩০০ ও মাঝারি আনারস ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।

সেখানে কথা হয় ইফতারি বিক্রেতা মো. রুবেলের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবার ইফতারি তৈরির কিছু সামগ্রীর দাম বেশি হলেও ইফতারির দাম আমরা বাড়াইনি। আগের মতোই দাম রেখেছি। বিক্রিও হচ্ছে ভালোই।’

আরেক বিক্রেতা মো. বাবুল হোসেন বলেন, ‘ক্রেতা আসছে ভালোই। প্রতিদিন রান্না করা ইফতারি প্রতিদিনই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। আলহামদুলিল্লাহ।’

Advertisement

অবশ্য ভিন্ন রকম তথ্য দেন চকবাজারে চটপটি বিক্রি করা মো. লিটন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি সারাবছরই চকবাজারে চটপটি বিক্রি করি। এই এলাকায়ই আমার জন্ম। আগেকার দিনে চকবাজারের ইফতারি বাজারে যতটা ভিড় দেখেছি এখন তেমন ভিড় দেখছি না। দোকানও কমেছে কিছু। বিক্রেতারা ভালো মানের মসলা দেন না, একদিনের মাল ফ্রিজে রেখে পরের দিন বিক্রি করেন। এজন্য ক্রেতা কমে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ৫-১০ বছর পর চকবাজারের ইফতারির ঐতিহ্য থাকবে না। দোকানওয়ালারা নিজেদের পায়ে কুড়াল মারতেছে।’

এদিন বাজারে বিভিন্ন বয়সী ও শ্রেণি-পেশার ক্রেতার দেখা মেলে। মিরপুরের বাসিন্দা ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. তুহিন হাবিব বলেন, ‘ঢাকায় আসার পর পুরান ঢাকার ইফতারি বাজারে কখনো আসা হয়নি। এজন্য আজ ইফতারি কিনতে ও ঘুরে দেখতে এসেছি।’

আরেক ক্রেতা আব্দুল কাদের বলেন, ‘আমরা পুরান ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দা। চকবাজারের ইফতারি ছাড়া আমাদের রমজান চলে না। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও এসেছি ইফতারি কিনতে।’

এমআইএন/ইএ/এমএস