অর্থনীতি

আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখে ঈদের পোশাকে এসেছে বৈচিত্র্য

আনন্দের সহযাত্রী হয়ে আসে ঈদ। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসব বলে ঈদ ঘিরে আগে থেকেই পোশাক নিয়ে ভাবনা শুরু হয়। অন্যদিকে বছরের সবচেয়ে বড় ব্যবসার মৌসুম ধরতে নতুন কিছু দেওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকে ফ্যাশন ব্র্যান্ড ও হাউজগুলো।

Advertisement

এবার যেহেতু গরম থাকবে তাই আরাম ও স্বস্তিতে থাকাকে প্রাধান্য দিয়ে ব্র্যান্ডগুলো নিয়ে এসেছে নতুন ডিজাইন। সেই সঙ্গে থাকবে আভিজাত্য। সব বয়সী নারী, পুরুষ ও শিশুর জন্য আবহাওয়া এবং উৎসব উপযোগী পোশাকগুলো সবার দৃষ্টি কাড়বে বলে আশা ব্র্যান্ডগুলোর কর্মকর্তাদের।

রোজার ঈদ ঘিরে বেশ আগে থেকেই শুরু হয় ঈদ উদযাপনের সব পরিকল্পনা। নতুন পোশাকের অপেক্ষায় থাকে সবাই। ঈদের সকাল, বিকেল এবং সন্ধ্যায় কাঙ্ক্ষিত পোশাক নির্বাচনে ক্যাজুয়াল কিংবা এক্সক্লুসিভ প্রাধান্য পাচ্ছে এবারের আয়োজনে।

দেশীয় ব্র্যান্ড কে ক্র্যাফট এরই মধ্যে ঈদ আয়োজনের পোশাক নিয়ে হাজির হয়েছে। মোটিফের সঙ্গে মিলিয়ে নানান রঙের ফেব্রিক ও স্টাইলের সমন্বয় সমৃদ্ধ করেছে কে ক্র্যাফটের এবারের ঈদ আয়োজন।

Advertisement

কে ক্র্যাফটের সহকারী মহাব্যবস্থাপক নাসির আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের এবারের আয়োজনে রয়েছে নানান প্যাটার্নের সালোয়ার-কামিজ, ডাবল লেয়ারড সালোয়ার-কামিজ, লং-কুর্তি, রেগুলার কুর্তি, টপস্, ডাবল লেয়ারড কুর্তি, টিউনিক, গাউন, কাফটান, প্যান্টসহ টপস, টপস-স্কার্ট। ছেলেদের জন্য রয়েছে কে ক্র্যাফটের রেগুলার, কাট বেইজড ও ফিটেড পাঞ্জাবি। এছাড়া পাওয়া যাবে রেগুলার ও স্লিম ফিট ক্যাজুয়াল শার্ট, এথনিক শার্ট, ফতুয়া ও টি-শার্ট।

কন্যাশিশুদের জন্য তারা এনেছে সালোয়ার-কামিজ, ফ্রক, কুর্তি, টপস, লেহেঙ্গা সেট, টপস সেট ও স্কার্ট। ছেলেশিশুদের জন্য নানান রঙের পাঞ্জাবি, হাফহাতা শার্ট, ফতুয়া এবং টি-শার্ট।

কে ক্র্যাফটের ওই কর্মকর্তা বলেন, শিশুদের পোশাকে প্যাটার্ন, ফেব্রিক এবং রঙের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্যাটার্নে ভিন্নতা এবং রঙে উৎসবের আমেজ বহন করবে। এছাড়া ছোট মেয়েরা বোন অথবা মায়ের সঙ্গে মিলিয়ে পরার জন্য সালোয়ার-কামিজ, কুর্তি এবং বাবা ও ছেলের জন্য পাঞ্জাবি, শার্ট থাকছে বরাবরের মতো। এছাড়া যুগলদের জন্য আছে বিশেষ ম্যাচিং পোশাক।

নাসির আহমেদ বলেন, পরিবেশ ও আবহাওয়ার সঙ্গে আরামদায়ক হওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে ফেব্রিক হিসেবে নেওয়া হয়েছে কটন, ডিজাইন্ড কটন, সুইস কটন, স্ল্যাব কটন, হ্যান্ডলুম কটন, লিলেন, জর্জেট, সিল্ক, জয়স্রী সিল্ক, হাফ সিল্ক, সাটিন ও অরগাঞ্জা।

Advertisement

তিনি জানান, এবার তাদের সংগ্রহে থাকা শাড়ি দুই থেকে আট হাজার টাকা, তাঁতের শাড়ি এক হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা, সালোয়ার-কামিজ তিন থেকে আট হাজার টাকা, কুর্তি/টপস দেড় থেকে চার হাজার টাকা। ছেলেদের পাঞ্জাবি এক হাজার ২০০ থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা, ক্যাজুয়াল শার্ট দেড় হাজার থেকে তিন হাজার টাকায় পাওয়া যাবে।

এছাড়া মেয়েশিশুদের পোশাকের মধ্যে সালোয়ার-কামিজ দুই থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা, টপস/ফ্রক ৯০০ থেকে আড়াই হাজার, লেহেঙ্গা সেট এক হাজার ৮০০ থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায় মিলবে। ছেলেশিশুদের পাঞ্জাবি ৭০০ থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা এবং শার্ট পাওয়া যাবে ৬০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায়।

আরও পড়ুন ট্রেন্ডিংয়ে আছে যে ধরনের শাল যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য যুদ্ধে বাংলাদেশের কোনো লাভ হবে? পোশাকে বাসন্তী ছোয়া, আছে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধন

বিশ্বরঙ এর স্বত্বাধিকারী বিপ্লব সাহা জাগো নিউজকে বলেন, ৩০ বছর ধরে দেশব্যাপী বিশ্বরঙ তার সাফল্য বজায় রেখেছে। ঈদ উৎসবের রঙে বাড়তি মাত্রা যোগ করতে বরাবরের মতোই দেশীয় কাপড়, উপকরণ ব্যবহার করে বিশ্বরঙ এবারের ঈদের আয়োজনে পোশাকে ট্রেন্ডি এবং ট্রেডিশনাল লুকের নান্দনিক উপস্থাপন করেছে। আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখে আরামদায়ক কাপড়, যেমন: সুতি, ধুপিয়ান সিল্ক, তসর সিল্ক, লিলেন, কাতান ব্যবহার করেছে। রঙের ক্ষেত্রেও কনট্রাস্ট কালারের পাশাপাশি রঙের ম্যাচিউরড টোনের পরিমিত ব্যবহার লক্ষণীয়।

বিশ্বরঙে বাচ্চাদের জন্য আছে নান্দনিক সব কালেকশন। সেই সঙ্গে প্রাপ্ত বয়স্ক এবং নারীদের জন্য আছে ঐতিহ্য ও আভিজাত্যের ছোঁয়া। সাধ ও সাধ্যের সমন্বয়ে প্রিয়জনকে খুশি করতে বিশ্বরঙ নিয়ে এসেছে এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকার মধ্যে আকর্ষণীয় শাড়ি।

ফ্যাশন ব্র্যান্ড লা রিভের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মন্নুজান নার্গিস জাগো নিউজকে বলেন, আমরা ফেব্রুয়ারিতেই ঈদ কালেকশন লঞ্চ করেছি। এবার আমাদের ঈদের থিম ছিল ‘মুভমেন্ট’ অর্থাৎ এগিয়ে চলা বা গতিময়তা। যখন আপনার দেহ, মন, আত্মা একাত্ম হবে তখনই গতিময়তা আসবে। যেসব রঙ আমাদের মনে প্রশান্তি আনে, এনার্জি পাই, এসব রঙ আমরা এবারের ফ্যাশনে রিফ্লেক্ট করেছি। যেমন: সবুজ এনার্জি দেয়, গ্রিনের বিভিন্ন শেড, নীলের বিভিন্ন শেড।

‘এর পাশাপাশি আমরা ঐতিহ্যের সঙ্গে আভিজাত্যের মেলবন্ধন করার চেষ্টা করেছি। যেমন: ঝারকা হচ্ছে রাজবাড়ির জানালায় থাকে যা আমরা আমাদের প্রিন্টে হাইলাইট করেছি। সিলভেটে আমরা এবার ক্লিন, সিম্পল এবং রিল্যাক্সড সিলভেট রেখেছি। কিছু স্লিভে আমরা ইলাস্টিক ব্যবহার করেছি, কিছু ওভার সাইজড, কিছু ড্রপ শোল্ডার করেছি।’

মন্নুজান নার্গিস বলেন, ছেলেদের নানান ডিজাইনের পাঞ্জাবি আছে। শার্ট, পোলো টি-শার্ট ইত্যাদি আছে। যেসব রং এনার্জি দেয় সেসব রং প্রাধান্য দিয়েছি। এছাড়া এবার বেশ গরম পড়বে। তাই আবহাওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আমরা কটনকে প্রাধান্য দিয়েছি। কিন্তু যেহেতু ফেস্টিভ এবং এটা আমাদের সবচেয়ে বড় উৎসব, তাই কিছুটা গরজিয়াস ভাব আনতে হয়।

লা রিভের ওই কর্মকর্তা বলেন, আসলে মুদ্রাস্ফীতির কারণে আমাদের কাঁচামালের দাম বেড়ে গেছে। কিন্তু এই চাপ আমরা ক্রেতাদের ওপর না দিয়ে নিজেরা বিয়ার করছি। তাই পণ্যের দাম গত বছরের মতোই রাখা হয়েছে। তার ওপর ভ্যাট যোগ হয়েছে ২ দশমিক ৫ শতাংশ। মানুষের হাতে তো টাকা নাই সেভাবে। তাই আমরা দামটা সেভাবেই অ্যাডজাস্ট করার চেষ্টা করেছি।

‘কিছু ক্ষেত্রে দাম কিছুটা বাড়ানো হয়েছে; তবে তা ক্রেতার নাগালের মধ্যেই থাকবে আশা করছি। এবার আমাদের সেল অনেক ভালো হবে বলে প্রত্যাশা। কারণ কাস্টমার আমাদের ডিজাইন পছন্দ করছে, ফেব্রিক পছন্দ করছে। যেহেতু প্রাইজটা কম্পিটিটিভ তাই ডিজাইন এবং কোয়ালিটির কথা চিন্তা করলে আমরা ভালো প্রাইজ দিচ্ছি। কাস্টমার পছন্দ করছে।’ বলছিলেন মন্নুজান নার্গিস।

এসআরএস/এমএইচআর/এএসএম