জাতীয়

জমেনি ইফতারি বাজার, প্রথম রোজায় লোকসানে বেশির ভাগ ব্যবসায়ী

সবসময় রমজানে জমজমাট থাকে নগরীরর বেইলি রোডের ইফতারি বাজার। সেই আশায় প্রথম রমজানে রকমারি ইফতারির পসরা নিয়ে বসেছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা না আসায় অধিকাংশ বিক্রেতা ইফতারি নষ্ট করে ফেলেছেন। লোকসান গুনতে হয়েছে তাদের। বেচাকেনা কম হওয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তারা। দ্বিতীয় রমজানেও বেইলি রোডে ইফতারকেন্দ্রিক জৌলুস চোখে পড়েনি।

Advertisement

সোমবার (৩ মার্চ) নগরীর বেইলি রোডে রমজানের দ্বিতীয় দিন ইফতারি বাজার ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বেশির ভাগ বিক্রেতা মৌসুমি ব্যবসায়ী। ১১ মাস অন্য পণ্য বিক্রি করলেও এক মাসের জন্য ইফতারির পসরা সাজিয়েছেন অনেকে। এজন্য সকাল ৯টার মধ্যে কিচেন মার্কেট থেকে তাদের কেনাকাটা করতে হয়। এরপর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে বিকেল ৩টায় বেচাকেনা শুরু হয়। চলে ইফতারের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত। তবে এবার বিক্রেতা ভালো নেই। কারণ বেশির ভাগ বিক্রেতাই প্রথম রমজানে আশানুরূপ বিক্রি করতে পারেননি।

বেইলি রোডে হকের হালিমের বেশ নামডাক। দূর থেকে অনেক ক্রেতা ছুটে আসেন হালিম কিনতে। মাটির পাত্রের মানভেদে ২০০ থেকে শুরু করে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে হালিম। ইফতারের আগ মুহূর্তে সেভাবে ক্রেতা সমাগম চোখে পড়েনি। খলিলুর রহমান নামে একজন ডাকাডাকি করছেন এভাবে- নিয়ে যান হকের হালিম, সুস্বাদু হকের হালিম...।

Advertisement

হক ব্রেডের স্বত্বাধিকারী ইউসুফ হোসেন বলেন, প্রথম দিনে আমার ৩০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। ক্রেতা খুবই কম। কেন কম তা বুঝতে পারছি না। আমার মনে হয় ক্রেতার পকেটে টাকা নেই।

বেইলি রোডে ফিস কেক দোকানেও প্রথম দিনে পাঁচ হাজার টাকার বেগুনি, চপ, পাকোড়া পলিথিনে ভরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। ফিস কেকের মালিক মহর আলী বলেন, আমি বেইলি রোডে এমন ইফতারির বাজার দেখিনি। ক্রেতা একেবারেই নেই। প্রথম রমজানে পাঁচ হাজার টাকার ইফতারি নষ্ট হয়েছে। ইফতারি কিন্তু সংরক্ষণ করা যায় না। বেচাকেনা না হলে ফেলে দেওয়া লাগে।

তিনি আরও বলেন, কখনো মনে হয় পাবলিকের হাতে টাকা নেই। আবার চিন্তা করে দেখি আমার ইফতারির দামও বেশি না। মাত্র পাঁচ টাকায় বেগুনি-চপ বিক্রি করছি। গত বছর বেইলি রোডে আগুন ধরেছিল। এটা কারণ হতে পারে। অথবা মানুষ এখন স্বাস্থ্যসচেতন, ভাজাপোড়া খেতে চায় না।

জাফরান জুসবারে অন্য সময় জুস বিক্রি করা হলেও রমজানে বিক্রি হয় ইফতারি। প্রথম রমজানে ১৫ হাজার টাকার ইফতারি নষ্ট হয়েছে জাফরান জুসবারে। দোকানের মালিক মিজানুর রহমান বলেন, মানুষের পকেটে টাকা নেই। তাই বেচাকেনাও নেই। প্রথম রমজানে আমার ১৫ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে।

Advertisement

সরেজমিনে দেখা গেছে, বেইলি রোডের নবাবী ভোজ ও বেইলি পিঠাঘরে রমজানে ক্রেতাদের ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো। কিন্তু দ্বিতীয় রমজানে কাঙ্ক্ষিত ভিড় চোখে পড়েনি। নবাবী শাহী হালিম পাত্রভেদে ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা, ঘি ও জাফরানে ভাজা নবাবী স্পেশাল শাহী জিলাপি ৪৫০ টাকা কেজি, ঘি ও জাফরানে ভাজা নবাবী স্পেশাল বোম্বে জিলাপি ৩৫০ টাকা কেজি, ঘি ও জাফরানে ভাজা নবাবী স্পেশাল রেশমি জিলাপি ৬০০ টাকা কেজি, নবাবী জর্দা ২৫০ টাকা কেজি, নবাবী ক্ষিরসা ফালুদা ৩৫০ টাকা কেজি, নবাবী জাফরানি পেস্তা বাদাম শরবত ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি, নবাবী বোরহানি ১২০ থেকে ২৩০ টাকা বোতল, নবাবী লাবাং ১২০ টাকা লিটার, সুইট লাচ্ছি ২৫০ টাকা লিটার, চিকেন ঝাল ফ্রাই ১ হাজার ৪০০ টাকা কেজি, বিফ ভুনা ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি, মাটন ভুনা এক হাজার ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বেইলি রোডের বিভিন্ন দোকানে শাহী ছোলা ৩৫০ টাকা কেজি, পেঁয়াজু ১৫ টাকা পিস, বেগুনি ১৫ টাকা পিস, চিকেন সমুচা ৩০ টাকা পিস, ফুলকপির চপ ৩০ টাকা পিস, অন্থন ৩০ টাকা পিস, মধুবান ৫০ টাকা পিস, মুরালি ৩০০ টাকা কেজি, ডিমচপ ৩০ টাকা পিস, স্প্রিং রোল ৩০ টাকা পিস, স্পেশাল বাটার নান ৭০ টাকা পিস, রুমালি রুটি ৪০ টাকা পিস, চিকেন রেশমি কাবাব ২৮০ টাকা পিস, শিক কাবাব ২২০ টাকা পিস, চিকেন সাসলিক ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া মানভেদে প্রতি কেজি রেশমি জিলাপি ৪০০, বুরুন্দি ২৮০, প্রতি পিস প্যাটিস ৩০, চিকেন পরোটা ৫০, বেগুনি ৫, পাকোড়া ৫ ও মহব্বতের শরবত ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। রান্না করা গরুর মাংস ১ হাজার ৪০০, মুরগির মাংস ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

 

এমওএস/এএমএ/এমএস