এই লম্বা দিনে ক্ষুধার জ্বালাটা মেনে নেওয়া গেলেও অধিকাংশ রোজাদারদের সমস্যা হয় পানি নিয়ে। তাই অনেকেই সেহরির শেষ সময় পর্যন্ত অনেক করে পানি পান করতে থাকেন। তবে আমরা তো মানুষ, ঊট নই। আমাদের শরীরে পানি জমা করে রাখারও কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই দিনে তৃষ্ণা পাওয়ার ভয়ে আপনি সেহরিতে লিটার লিটার পানি খেয়ে ফেললে তা আপনার জন্য উপকারের চেয়ে বেশি অপকারী হতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক একবারে বেশি পানি পান করার প্রভাব-
Advertisement
মানুষের শরীর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে পানি ধারণ করতে পারে, এবং অতিরিক্ত পানি সরাসরি কিডনির মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীর প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ০.৮ থেকে ১ লিটার পানি প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দিতে পারে। তাই একবারে অনেক পানি পান করলে তা শরীরে জমা না থেকে দ্রুত বেরিয়ে যায়, যা শরীরের জন্য তেমন কোনো উপকার বয়ে আনে না।
হাইড্রেশনের জন্য ধীরে ধীরে পানি পান করা গুরুত্বপূর্ণশরীরকে হাইড্রেটেড রাখার জন্য সেহরিতে ধীরে ধীরে পানি পান করা উচিত। একবারে অনেক পানি পান করলে তা শরীরে শোষিত হওয়ার সুযোগ পায় না। বরং, সেহরির সময় অল্প অল্প করে পানি পান করলে তা শরীরে ভালোভাবে শোষিত হয় এবং সারাদিন শরীর হাইড্রেটেড থাকে। এছাড়াও, সেহরিতে পানি ছাড়াও অন্যান্য তরল যেমন ডাবের পানি, ফলের রস বা স্যুপ খাওয়া যেতে পারে, যা শরীরে পানির চাহিদা পূরণে সাহায্য করে।
তবে আপনার মেনে হতে পারে কেউ যদি বেশি বেশি পানি পান করে মনের শান্তি পায় তাতে সমস্যা কী? সমস্যা আছে। অতিরিক্ত পানি পান করলে যে শুধু বারবার প্রস্রাব হবে, তা-ই নয়, এর আরও কিছু ক্ষতিকর দিক আছে। জেনে নিন অতিরিক্ত পানি পান করার ক্ষতিকর দিক-
Advertisement
১. ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতা: অতিরিক্ত পানি পান করলে শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা কমে যেতে পারে, যা হাইপোনাট্রেমিয়া নামক অবস্থার সৃষ্টি করে। এর ফলে মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, এমনকি মারাত্মক ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের ফোলাভাবও হতে পারে। অন্য কোনো রোগের উপস্থিতির ফলে ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ব্যক্তির মৃত্যুও হতে পারে। ফলে ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতাকে কোনোভাবেই হালকাভাবে নেওয়া যাবে না।
২. পাকস্থলীর অস্বস্তি: একবারে অনেক পানি পান করলে পাকস্থলীতে চাপ পড়ে এবং অস্বস্তি হতে পারে। এটি বদহজম বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
৩. ঘন ঘন প্রস্রাব: অতিরিক্ত পানি পান করলে ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ আসে, যা রোজা রাখার সময় অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে।
সেহরিতে পানির সঠিক পরিমাণ নির্ভর করে ব্যক্তির শরীরের ওপর। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক পানির চাহিদা সাধারণত ২-৩ লিটার। রোজার সময় সেহরি ও ইফতারে এই চাহিদা পূরণ করা যায়। সেহরিতে ১-২ গ্লাস পানি পান করা উচিত এবং বাকি পানির চাহিদা ইফতার থেকে সাহরি পর্যন্ত সময়ে ধীরে ধীরে পূরণ করা উচিত।
Advertisement
সেহরিতে একবারে অনেক পানি পান করার চেয়ে ধীরে ধীরে পানি পান করাই বেশি কার্যকর। এটি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং কোনো প্রকার শারীরিক অসুবিধা সৃষ্টি করে না। এছাড়াও, সেহরিতে পানি ছাড়াও অন্যান্য তরল ও পানীয় জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত, যা শরীরে পানির চাহিদা পূরণে সাহায্য করে। রোজার সময় সুস্থ থাকতে সঠিক পরিমাণে পানি পান করা এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এএমপি/জেআইএম