বুশরা আজমী
Advertisement
চার দেয়ালের অভ্যন্তর থেকে আসা আতঙ্কের দীর্ঘশ্বাসগুলো আজ আর শোনা যায় না, থেমে গেছে অনেক আগেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও এর ব্যতিক্রম নয়। শিক্ষাপ্রাঙ্গন, কর্মস্থল, রাস্তাঘাট-কোথাও নারীরা নিরাপদ নয়। এক সময় চলন্ত ট্রেনে ধর্ষণের ঘটনা আমাদের হতবাক করেছিল, আর এখন বাসভর্তি মানুষের মাঝেও ঘটে যাচ্ছে এই নৃশংসতা। একুশে ফেব্রুয়ারির দিন, যখন দেশ মাতৃভাষার শহীদদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছে, তখন চতুর্থ শ্রেণির এক শিশুকন্যা শহীদ মিনারে ফুল কুড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয়। শিশু, কিশোরী, গৃহবধূ কিংবা বৃদ্ধা-নারীর কোনো বয়সই যেন আর নিরাপত্তার আশ্বাস দিতে পারছে না।
আজকাল পত্রিকা, টেলিভিশন কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম খুললেই ধর্ষণের খবর চোখে পড়ে। এটি যেন আমাদের নিত্যদিনের বাস্তবতা হয়ে উঠেছে। ‘ধর্ষণ’ শব্দটি শুনলেই গা শিউরে ওঠে, ভয় জমে মনে। ভয়ংকর সত্য হলো, নারীরা আজ আর কোনো জায়গাতেই নিরাপদ নয়। ধর্ষকের কাছে নারীর কোনো নিরাপদ আশ্রয় নেই।
ধর্ষণের পেছনে একক কোনো কারণ নেই। এটি একাধারে ক্ষমতার অপব্যবহার, বিকৃত মানসিকতা, পশুত্ববৃত্তি এবং নৈতিক অবক্ষয়ের ফল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটি রাগ, প্রতিশোধপরায়ণতা কিংবা বিকৃত যৌন আকাঙ্ক্ষারও বহিঃপ্রকাশ। নৈতিক শিক্ষার অভাব এবং আইন প্রয়োগের দুর্বলতাও এই অপরাধ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
Advertisement
কিন্তু সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো, প্রতিদিন ধর্ষণের খবর দেখতে পেলেও, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ঘটনা খুবই কম। বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি অপরাধীদের উৎসাহিত করছে, ফলে ধর্ষণ ক্রমশ ভয়াবহ সামাজিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশে প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে প্রায় ১০ জন ধর্ষণের শিকার হন। ২০২৩ সালে ৫৭৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, যার মধ্যে ৩৩ জন ধর্ষণের পর হত্যা স্বীকার ও ৫ জন আত্মহত্যা করেছেন। ২০২৪ সালে ১ হাজার ১৫১টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে, যেখানে ২৮১ জন নারী ও ৩৩১ জন কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। বাস্তব চিত্র আরও ভয়াবহ হতে পারে, কারণ অনেক ঘটনাই লোকলজ্জা ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারণে প্রকাশ্যে আসে না।
ধর্ষণের শিকার নারীরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন না। সমাজ তাদের দোষী করে তোলে, অথচ ধর্ষকরা অবাধে ঘুরে বেড়ায়। এই বৈষম্যমূলক বাস্তবতা বদলাতে হলে ধর্ষণের শিকার নারীদের প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। পাশাপাশি, সরকারের উচিত কঠোর আইন প্রণয়ন ও তার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা। প্রশাসনের তৎপরতা বাড়িয়ে ধর্ষকদের দ্রুততম সময়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
একটি দেশের সমাজ যদি প্রতিনিয়ত ধর্ষণের ঘটনায় কলুষিত হয়, তবে সেই দেশের ভাবমূর্তি হয় নিন্দিত ও নেতিবাচক। তাই নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন আর বিকল্প নয়, এটি অপরিহার্য। আমাদের প্রত্যেকের উচিত সোচ্চার হওয়া, সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য একসঙ্গে কাজ করা।
Advertisement
আরও পড়ুন
পানির জন্য সংগ্রাম দেশে দেশেলেখক: শিক্ষার্থী, অর্নাস ২য় বর্ষ, সমাজকর্ম বিভাগ, রাজশাহী কলেজ
কেএসকে/এমএস