অর্থনীতি

চট্টগ্রামে সবজির দাম বাড়তি, কাটছে না সয়াবিন তেলের সংকট

রোজার আগে চট্টগ্রামে বাড়তে শুরু করেছে সবজির দাম। প্রায় সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে ৫-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। অন্যদিকে এখনো কাটেনি সয়াবিন তেলের সংকট।

Advertisement

ক্রেতাদের অভিযোগ, অতি মুনাফালোভী সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছে না সরকার। এতে ক্রেতাদের জিম্মি হয়েই পণ্য কিনতে হচ্ছে।

শনিবার (১ মার্চ) সকালে নগরীর কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবজির দাম ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে।

নগরীর কাজীর দেউড়ি বাজারে বাজার করেন উচ্চবিত্ত পরিবারের লোকজন। পাশাপাশি পাঁচশো মিটার দূরত্বে রয়েছে ব্যাটারি গলি বাজার। যেখানে মধ্য ও নিম্নআয়ের লোকজনের যাতায়াত বেশি। বড় এই দুই বাজারেই সবজির দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা বেড়েছে।

Advertisement

ব্যাটারি গলি বাজারে আলু ২৫-৩০ টাকা, ফুলকপি ৪০-৫০ টাকা, বাধা কপি ২০-২৫ টাকা টমেটো ২৫-৩০ টাকা, বেগুন ৩০-৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ১০০-১২০ টাকা, শিমের বিচি ১০০-১২০ টাকা, কচুর ছড়া ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, মূলা ৩০-৪০ টাকা, শালগম ৩০ টাকা, চিচিঙা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রমজান শুরু হওয়ায় খিরা, শসা, কাঁচা মরিচ, ধনেপাতার কদরও বেড়েছে। বাজারে খিরা ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৬০ টাকা, ধনেপাতা ১২০-১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে সাইজভেদে ৪০ থেকে ৮০ টাকা।

ব্যাটারি গলিতে নিয়মিত বাজার করেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মজীবী কামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বাসার কাছে ব্যাটারি গলি বাজার থেকে নিয়মিত সদাই করি। গত দুই মাস সবজির দাম কম থাকাতে সবার মধ্যে স্বস্তি ছিল। এখন রোজাকে সামনে রেখে দোকানদাররা সবজির দাম বাড়তি নিচ্ছেন।’

অন্যদিকে, ফার্মের মুরগি ২০০-২১০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩০০-৩৩০ টাকা, দেশি মুরগি ৬০০-৬৫০ টাকা. খাসির মাংস ১১০০ টাকা, গরুর মাংস (হাঁড়সহ) ৭৫০ টাকা, গরুর মাংস (হাঁড় ছাড়া) ৯০০-৯৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

Advertisement

আরশাদ হোসেন নামের আরেক ক্রেতা বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগেও মুরগি ১৮৫ টাকা ছিল। এখন সেই মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০৫ টাকায়।’

ব্যাটারি গলিতে মুরগি বিক্রেতা সাদেক বলেন, ‘এখানে আমরা কিনে এনে বিক্রি করি। বেশি লাভ করার সুযোগ নেই। খামারিরা লাভবান হচ্ছে না। খামার করতে গিয়ে অনেকে লোকসানে পড়েছেন। মূলত মুরগির ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন বড় বড় সিন্ডিকেট। যারা একদিনের বাচ্চা ও মুরগির ফিড উৎপাদন করেন। সরকার সিন্ডিকেটগুলো নিয়ন্ত্রণ করলে মুরগির দাম কমানোর সুযোগ রয়েছে।’

আরও পড়ুন:

রোজা শুরুর আগেই বোতলজাত সয়াবিনের তীব্র সংকট রমজানে চলবে অলআউট অ্যাকশন, অপরাধীদের জন্য আতঙ্ক হতে চাই

বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে মাছের দাম কিছুটা বেড়েছে। রুই মাছ দেশি রুই (জ্যান্ত) দেড় থেকে দুই কেজি ৪২০-৪৫০ টাকা, আমদানিকৃত রুই মাছ দুই থেকে তিন কেজি ৩৩০-৩৫০ টাকা, ছোট সাইজের রুই ২২০-২৮০ টাকা, এক থেকে দুই কেজি ওজনের কাতলা মাছ বিক্রি হয়েছে কেজি ৩৫০-৪৫০ টাকা, তিন থেকে চার কেজি ওজনের ব্রিগেট কার্প কেজি ২৫০-৩০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৬০-১৮০ টাকা, দেশি বাইলা কেজি ৫৫০-৭০০ টাকা, শিং মাছ সাইজ অনুসারে ৪৫০-৬৫০ টাকা, মলা মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, শোল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬৫০-৮০০ টাকা, পোয়া ৩৫০ টাকা, চিংড়ি ৬০০-৮০০ টাকা, সুরমা দেড় থেকে দুইকেজি ওজনের ৬৫০ টাকা, কোরাল ৫৫০-৬০০ টাকা, কালিচান্দা (কেজিতে ২-৪টি সাইজের) ৩৫০-৪৫০ টাকা, ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৮০০-৩৬০০ টাকায়।

রিয়াজ উদ্দিন বাজারের মাছ ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন জানান, বাজারে মাছের আমদানি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে রোজা চলে আসায় মাছের চাহিদা বেড়েছে। তাই গত সপ্তাহের চেয়ে দাম বাড়তির দিকে।

অন্যদিকে, বাজারে এখনো কাটেনি সয়াবিন তেলের সংকট। কোনো মুদির দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল সাজানো নেই। শুধু সয়াবিন তেল চাইলেও মিলছে না। যারা নিয়মিত বাজার করেন, কিংবা একসঙ্গে বেশ কয়েকটি মুদি আইটেম কিনছেন, তাদের বাজারের আকার অনুসারে সয়াবিন তেল বিক্রি করছেন মুদি দোকানিরা। তারপরেও লিটারে ১৫-২৫ টাকা পর্যন্ত বেশি দিতে হচ্ছে ক্রেতাদের।

পাইকারি বাজারের চেয়ে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দামও বেশি। পাইকারিতে যেই পেঁয়াজ ৩৫ টাকা, সেটি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা। পাইকারিতে ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০ টাকা হলেও খুচরাতে একই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়।

কাজীর দেউড়ি বাজারে জীবন গ্রোসারির মালিক বলেন, বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ একেবারে কম। যে কারণে আমরা ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী সয়াবিন তেল বিক্রি করতে পারছি না।

এমডিআইএইচ/এসএনআর/এমএস