অর্থনীতি

ইফতারের অনেক পণ্যের দাম চড়া

‘পরশু ১ কেজি শসা ৪০ টাকা রাখলেন, আজ কেনো ৫০? রমজানের কারণে বাড়তি টাকা কেন নেবেন? ’। এভাবে রাজধানীর একটি নিত্যপণ্যের বাজারে প্রতিবাদ করেন বেসরকারি চাকরিজীবী সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনিসহ অধিকাংশ ক্রেতার অভিযোগ, বেগুন-শসা ও লেবুর দাম খুচরা ব্যবসায়ীরা বাড়িয়েছেন। অথচ দেখার কেউ নেই। আর ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদা বাড়লে দাম একটু বাড়বেই।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি বছরের মতো এবারও রমজানের আগে বাজারে স্বস্তি নেই। অধিকাংশ ইফতারি পণ্যের চড়া দাম ক্রেতাদের অস্বস্তিতে ফেলেছে।

ক্রেতাদের অভিযোগ-শসা, বেগুন ও লেবুর দাম রাখা হচ্ছে বেশি। আবার পেঁয়াজু, আলুরচপ বানাতে প্রয়োজন সয়াবিন তেল। পণ্যটি ঘিরে নৈরাজ্য চলছে দীর্ঘদিন ধরে। বাজারে সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। যেখানে পাওয়া যাচ্ছে সেখানেও তেলের চড়া দাম।

শনিবার (১ মার্চ) রাজধানীর মিরপুরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ব্রয়লার মুরগি ও বিভিন্ন শীতকালীন সবজির দাম। এবার অনেকটাই স্থিতিশীল ছোলা, খেজুর, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন ও চিনির দর।

Advertisement

ক্রেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের অভিযোগ, বেগুন-শসা ও লেবুর দাম খুচরা ব্যবসায়ীরা বাড়িয়েছেন। তিনি বলেন, তারা রাতারাতি ১০-২০ টাকা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। অথচ দেখার কেউ নেই।

রাজধানীর মুসলিম বাজার ও মিরপুর ১২ নম্বর কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৩-৪ দিন ধরেই বাড়তি শসার দাম। হাইব্রিড, দেশি শসা ও ছোট আকারের খিরা পাওয়া যাচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকায়। যা কয়েকদিন আগেও ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা।

হাশমত নামের এক দোকানি জানান, চাহিদা বাড়লে দাম একটু বাড়বেই। গত বছরের রোজায় মানুষ শসা ১০০ টাকায় কিনেছে। বাজারে এখন ভরপুর শসা রয়েছে।

শসার মতো দাম বেড়েছে বেগুনেরও। বেগুনি তৈরি করতে চিকন বেগুনের প্রয়োজন হয়। ৪-৫ দিন আগেও প্রতি কেজি চিকন বেগুন কেনা গেছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। প্রায় দ্বিগুণের মতো দাম বেড়ে এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। আর গোল বেগুনে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়।

Advertisement

সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে লেবুর। শরবত তৈরির অন্যতম উপাদান লেবু। ইফতারে সবাই শরবত খাওয়ার চেষ্টা করেন। ফলে লেবুর চাহিদা বেড়ে যায়। আর এ সুযোগে লেবুর দামও বেড়েছে। প্রতি ডজন বাতাবি লেবু বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা। এছাড়া ১ ডজন দেশি লেবু বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩৫ টাকায়। অর্থাৎ প্রতিহালি বাতাবি লেবু ৫০-৫৫ টাকায় আর কাগজি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকায়। যদিও বিক্রেতাদের দাবি বেশ কয়েকদিন ধরেই লেবুর দাম চড়া।

মিরপুর ১২ নম্বর কাঁচাবাজারে ব্যবসায়ী শাহিন আলম বলেন, আবার বর্ষায় আসবে লেবু সিজন। অনেক দিন ধরেই লেবুর দাম বাড়তি। বাজারে লেবুও কম। এজন্য দাম একটু বেশি।

গত নভেম্বর থেকেই বোতলজাত সয়াবিনের সংকট চলছে। বেশিরভাগ দোকানেই নেই সয়াবিন তেল। দোকানিরা লুকিয়ে রেখেছেন তেল। পরিচিত ক্রেতার কাছে বেশি দামে বিক্রি করছেন।

মিনহাজ নামের এক ক্রেতা জানান, পরিচিত একজন বিক্রেতার কাছ থেকে ১ লিটারের একটি সয়াবিন তেল কিনেছেন তিনি। গায়ে মূল্য ১৭৫ টাকা লেখা থাকলেও তিনি কিনেছেন ১৯০ টাকায়। মুসলিম বাজারে বেশ কয়েকটি মুদি দোকানে গিয়ে সয়াবিন তেল চোখে পড়েনি।

বিক্রেতারা জানিয়েছেন, সরবরাহ কম থাকায় তারা সয়াবিন তেল ক্রেতাদের দিতে পারছেন না। ডিলারা আশ্বস্ত করেছেন কিছুদিনের মধ্যেই পরিস্থিতি ঠিক হবে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৯০ থেকে ২০০ টাকা। এছাড়া দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৪৫ টাকায়, ছোলা প্রতি কেজি ১১০ থেকে ১২০ টাকায়, বেসন প্রতি কেজি মানভেদে ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়, চিনি প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়, আলু প্রতি কেজি ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এসএম/এমআইএইচএস