অভাবের তাড়নায় একসময় করতেন দিনমজুরি। পরে ছোট ছোট চুরি আর ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে শুরু করেন ডাকাতি। চার বছর আগে এলাকায় একটি অটোরিকশা চুরি করতে গিয়ে এলাকাবাসীর হাতে আটক হন। পরে মারধর করে গ্রামবাসী তাকে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেয়। তখন থেকেই তিনি নিজ গ্রামে খুব কম আসতেন।
Advertisement
ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন আন্তঃজেলা ডাকাতচক্রের প্রধান। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করতেন তিনি। ভয়ংকর ওই ডাকাত সর্দারের নাম আলমগীর শেখ। সম্প্রতি টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে যে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটে, তাতেও জড়িত ছিলেন আলমগীর শেখ ও তার ভাই রাজীব শেখ। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে নেত্রকোনা থেকে থেকে ডাকাত সর্দার আলমগীর শেখ ও তার ছোট ভাই রাজিব হোসেন শেখকে ঢাকার আশুলিয়া থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার জিয়নপুর ইউনিয়নের আমতলী লাউতারা এলাকার বাসিন্দা কৃষক খোরশেদ আলম শেখের ছেলে আলমগীর শেখ ও রাজীব শেখ।
আরও পড়ুন: টাঙ্গাইলে শিক্ষাসফরের তিন বাসে ডাকাতি টাঙ্গাইলে শিক্ষা সফরের ৩ বাসে ডাকাতির ঘটনায় মামলা টাঙ্গাইলে শিক্ষা সফরের বাসে ডাকাতির ঘটনায় দুজন আটকস্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাঁচ বছর আগেও আমতলী বাজারে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতেন আলমগীর শেখ। নদীগর্ভে ভিটেমাটি বিলীন হওয়ার পর আমতলী আশ্রয়ণ প্রকল্পে তিনি একটি ঘর বরাদ্দ পান। সেই ঘরেই তিন ছেলে ও এক পুত্রবধূসহ বসবাস করতেন আলমগীর শেখ। পরে বড় ছেলে আলমগীর তার স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে পাশের গ্রাম আমতলী এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতে শুরু করেন।
Advertisement
প্রথম দিকে এলাকার ছিঁচকে চোরদের সঙ্গে ছোট ছোট চুরি ও ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়েন আলমগীর। একপর্যায়ে শুরু করেন ডাকাতি। চার বছর আগে এলাকায় একটি অটোরিকশা চুরি করতে গিয়ে আটক হন। পরে এলাকাবাসী মারধর করে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেয়। তখন থেকেই তিনি তার নিজ গ্রামে খুব কম আসতেন। এরপর ধীরে ধীরে আন্তঃজেলা ডাকাতচক্রের প্রধান হয়ে ওঠেন আলমগীর শেখ। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করতে থাকেন তিনি। সম্প্রতি ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলন্ত বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানির ঘটনায় উঠে আসে আলমগীর শেখ ও তার ভাই রাজীব হোসেন শেখের নাম। আলমগীর শেখের পরিকল্পনায় ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে আসা ইউনিক রোড রয়েলসের (আমরি ট্রাভেলস) একটি বাসে মধ্যরাতে ডাকাতির ঘটনা ঘটান তারা। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বাসটির নিজেদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ডাকাতদল। পরে তিন ঘণ্টা ধরে বাসটিকে বিভিন্ন স্থান ঘুরিয়ে যাত্রীদের টাকা-পয়সা ও মালামাল লুণ্ঠন করেন। দুজন নারীকে শ্লীলতাহানি করা হয় বলেও বাসযাত্রীরা।
একপর্যায়ে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের নির্জন স্থানে বাস থামিয়ে ডাকাতদল নেমে যায়। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। এ ঘটনায় বাসের যাত্রী ওমর আলী বাদী হয়ে মির্জাপুর থানায় মামলা করেন। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে নেত্রকোনা থেকে থেকে ডাকাত সর্দার আলমগীর শেখ ও তার ছোট ভাই রাজিব হোসেন শেখকে ঢাকার আশুলিয়া এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
আরও পড়ুন: টাঙ্গাইলে ডাকাতি: রাতভর সড়ক পাহারা দিচ্ছেন গ্রামবাসী ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ডাকাত আতঙ্ক, বাড়ানো হয়েছে পুলিশের টহলজিয়নপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মতিন মোল্লা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের এলাকার ছেলে আলমগীর। আগে বাজারে দিনমজুরির কাজ করতো। তারা তিন ভাই। ছোট ভাই রাজিব হোসেন শেখ পড়াশোনা করতো। নদীগর্ভে তাদের ভিটেমাটি বিলীন হওয়ার পর আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে সবাই থাকতো। প্রথমে এলাকার ছোট ছোট চুরি ও ছিনতাই করতো আলমগীর। পরে ধীরে ধীরে বড় অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে সে। শুনেছি অনেক বড় একটা ডাকাত দলের সর্দার আলমগীর।’
তিনি আরও বলেন, ‘এর আগেও অনেকদিন জেলে ছিল। এখন তেমন এলাকায় দেখি না। গতবছর এলাকায় স্মার্টকার্ড বিতরণের সময় দেখেছিলাম। এরা এলাকার ক্যানসার। আমাদের এলাকার সুনাম নষ্ট করছে। এদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত।’
Advertisement
আমতলী এলাকার বাসিন্দা ফজলে রাব্বি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আলমগীর ও তার ভাই রাজিব এই সমাজের শত্রু, দেশের শত্রু। তাকে আমরা এলাকা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম। সে অনেক বড় ডাকাত দলের সর্দার। আমরা তার অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।’
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌফিক আজম জাগো নিউজকে বলেন, আলমগীর শেখের নামে দৌলতপুর থানায় ২০১৬ সালে একটি মাদক মামলা হয়। ওই মামলার প্রধান আসামি আলমগীর। এছাড়া শিবালয় থানায় একটি মাদক মামলা, টাংগাইল থানায় ডাকাতি মামলা ও গাজীপুরে ডাকাতি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
সজল আলী/এসআর/এএসএম