সাহিত্য

অনন্ত পৃথ্বীরাজের সাতটি কবিতা

মিতালির চোখ

Advertisement

মিতালির চোখ দুটো লাল কেন! ওর চোখে বাহান্নর আগুনএকাত্তর জ্বালা এখনো পোড়ায়,হলুদ নদী, সবুজ বন, সোনারাঙা মাঠ।

মিতালির চোখ এখন হলুদ-সবুজশুধু নাই তার তরল-জল, অশ্রুবারি।

****

Advertisement

উনুন

তোমার কোঁকরানো চুলগুচ্ছ থেকেবেলিফুলের সুবাস ভেসে আসে;জাপানি পারফিউম সেখানে একটি নাম কেবল—তোমার শরীরের ঘ্রাণ, রুপের মাদকতা ছড়িয়ে পড়ে দেহান্তরে—জ্বলন্ত উনুন মতো ভস্ম করে দেয় মনের পারদ।

****

জন্মদাত্রী

Advertisement

‘মা’, এই শব্দটা ইচ্ছে করেই ভুলে থাকি—তবু প্রকৃতি আমাকে ব্যাকুল করে রাখে;চোখের পাতায় ভেসে ওঠে ভগ্নশরীরের কঙ্কালসার এক বৃদ্ধার অবয়ব—ঘুমাতে পারি না, কিছুতেই আমি ঘুমাতে পারি না। বয়সের রোষে তার রোগের ভার বেড়েছে বেশ। মাসকাবারি দশ হাজার মাইনে পাই...!

নাহ্, এই বৃদ্ধাকে আমি কিছুতেই চিনতে চাই না; ইচ্ছে করেই ভুলে যেতে চাই।‘মা’ নামক শব্দটি ভুলে যেতে চাই, আসলেই ভুলে যেতে চাই।তারপরও কঙ্কালসার এক বৃদ্ধার অবয়ব চোখে ভেসে ওঠে;উনি আমার জন্মদাত্রী মা।

আমি প্রতিদিন কলমচষি ক্ষেতের কামলার মতো অফিসে অফিসেমাইনে পাই মাসকাবারি হাজার দশেক; ভাড়া বাসা খুপড়ি ঘর তবুও খরচা-খরচ নেহাত কম নয়, সন্তানাদি নাই বলে আমার বউটার দিকে সবাই কেমন যেন তাকিয়ে থাকে; অথচ ওর দিকে আমি তাকাতে পারি নানা তেল, না সাবান—এসবেই কিছুই ঠিকমতো দিতে পারি না বলে লজ্জিত হইতাই বলে কোনো অভিযোগ নেই; কেবল মায়ের জন্য মনটা কেমন ছটফট করে তার।

****

আগুনমুখো ভোর

পৃথিবীতে দুই প্রকারের আগুন জ্বলে নিঃশেষ হয়;চুলোর আগুন বাহ্যিক, মনের আগুন দেহ পোড়ায় না বটেতবে নিজেকে শেষ করে দেয়। ছাই কয়লার মতো পড়ে আছি অবিরত, কত নিঃসঙ্গ সময় কেটে গেছে।এখন স্মৃতিফলকের ’পর মাঝে মাঝে শিউলিফুল ঝরে পরে।

রাত বিষময়, সকালটা স্নিগ্ধ হবে ভেবেছিলাম; আলস্য ছেড়ে কাকডাকা ভোরে জেগে দেখি,ঘরের দরজার চৌকাঠে গোছা গোছা শিউলি ফুল—আমি কিন্তু একটুও অবাক হইনি।প্রকৃতির নিয়মে নয়, তোমার নিয়মেই এমনটি হয়; হাডসনের বন্দুক অথবা উড়ন্ত রাজহাঁসের মধ্যে সম্পর্কের জাল তৈরি হলে, পাখিরা আগুন হয়ে যায়; যে আগুন মোবাইল তরঙ্গের মতন অদৃশ্যমান,ইদানিং সকালগুলো প্রায়ই আগুনমুখো।

****

পুরুষ শিকার

কবিতার খেড়োখাতা পড়ে থাক না এখন চিমনির মুখে কালো ধোঁয়াআমাদের প্রতিটি দিন নিষিক্ত ফুলের কান্নায় মোড়া; আহাজারি করেনারীকে বিশ্বাস করা দায় হয়ে গেছে; সব তুণখোলা তলোয়ারের যেনতার একজোড়া চোখ ঘাই হরিণীর মতো নিয়ত শিকার খোঁজে।

****

বন্ধ্যা সময়ে গল্প

আমের মুকুল এসেছে, গাছে গাছে ভ্রমরার গুঞ্জন শুনি, বসন্তে চৈত্রের তাপ, খাঁ খাঁ রোদ্দুর—বন্ধ্যা সময়ে ফসলের দিনগুলি।

কোথাও প্রেম নেই, সবাই শুধু শরীরী সুখ চায়— ভোঁতা অস্ত্রে পানসে জীবন, সুখ উপভোগ দায়।

অধিক কর্ষণে ফসলের মাঠ অনুর্বর হয়ে যায়; অথচনারীর শরীর সারহীন, কীটনাশক ছাড়াই উর্বরতা পায়।

কবির বন্দনায় তোমার অবয়ব ফ্রেমে বাঁধা যায় না।বিপন্ন সময়ে ববকাট চুল, ঘ্রাণ ভুলে থাকতে পারি না।

****

যে জীবন নাহারের; বশিরের

সরষে ফুলে মৌমাছির গুঞ্জন; হেসে ওঠে মাঠকিশোরীর শরীর নাচন চুকে যায় আমছিপারা পাঠনূরুন নাহার মেয়েটির নাম লাজুক লাজুক চাহনিপাড়ার যুবকদের হৃদয় হরণ করে; এ যেন নতুন কাহিনি।বশির ছেলে ভালো গঞ্জের কলেজে আইএসসি পড়েমনসুরের গ্যারেজে সময়ের অবসরে কাজকাম করে।জীবন জোয়ারে বর্ষার জল উতাল পাতাল ঢেউবয়সের দোষ, অসুখের খোঁজ; করে নাই কেউ।

এসইউ/এমএস