শিক্ষা

ডিগ্রির ফলাফলে ‘নম্বর আটকা’ বাণিজ্য, পুনর্মূল্যায়নে গলাকাটা ফি

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ডিগ্রি পাস ও সার্টিফিকেট কোর্সের ২০২২ সালের দ্বিতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফল গত ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করা হয়েছে। এতে ৯১ দশমিক ৪৯ শতাংশ পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন। তবে প্রকাশিত এ ফলাফলে ব্যাপক ত্রুটি-বিচ্যুতির অভিযোগ করেছেন ফলপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা।

Advertisement

বিশেষ করে অসংখ্য শিক্ষার্থীর নম্বর আটকে রাখা হয়েছে। ওয়েবসাইটে তাদের রোল নম্বরসহ অন্যান্য তথ্য দিয়ে সাবমিট করলে যে ফলাফল আসছে, তাতে ইংরেজিতে ‘মার্কস উইথহেল্ড’ লেখা দেখানো হচ্ছে। অর্থাৎ, ওই শিক্ষার্থীর ‘নম্বর আটকা আছে’।

কিন্তু কেন; কী কারণে আটকা আছে, তা বলতে পারছেন না স্ব স্ব কলেজ কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট উত্তর মিলছে না জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছেও। এতে প্রকাশিত ফলাফল নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন পরীক্ষার্থীরা।

২০২২ সালের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আব্দুস সামাদের ভাষ্য, ‘কেন এমন হয়েছে জানি না। তবে অভিযোগ পাচ্ছি অনেক।’

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর ডিগ্রি পাস ও সার্টিফিকেট কোর্সের দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সারাদেশের ৬৭১টি কেন্দ্রে এক হাজার ৯১০টি কলেজের নিয়মিত, অনিয়মিত ও মানোন্নয়নসহ দুই লাখ সাত হাজার ৯০৫ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি এ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়।

ফল প্রকাশের ঘোষণায় বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে রোল নম্বর, শিক্ষাবর্ষসহ অন্যান্য তথ্য দিয়ে পরীক্ষার্থীরা ঘরে বসে তাদের ফলাফল জানতে পারবেন। তবে অনেকের ফলাফলে ‘মার্কস উইথহেল্ড’ বা ‘নম্বর আটকা আছে’ লেখা দেখানো হয়। জাগো নিউজের কাছে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী এমন অভিযোগ করেন।

তাদের অভিযোগের সূত্র ধরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজের তিন শতাধিক পরীক্ষার্থী একই সমস্যায় পড়েছেন। তাছাড়া কারমাইকেল কলেজসহ ছোট-বড় অনেক কলেজের অসংখ্য শিক্ষার্থীও একই অভিযোগ জানিয়েছেন। কলেজ কর্তৃপক্ষও ফলাফলের জায়গা এমন লেখা দেখানোর কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না।

ভিক্টোরিয়া কলেজের আবু বকর নামে এক শিক্ষার্থী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি নিয়মিত শিক্ষার্থী। পরীক্ষা দিয়েছি। কোনো অসদুপায় অবলম্বন করিনি। কিন্তু প্রকাশিত ফলাফলে আমার নম্বর আটকে রাখার কথা জানানো হয়েছে। আমি কলেজে খোঁজ নিয়েছি। শিক্ষক-কর্মকর্তারা কেউ বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলতে পারছেন না।’

Advertisement

আরও পড়ুন ঢাকা বোর্ডের এসএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র বিতরণ ১১-১২ মার্চ  ইএফটিতে সাড়ে ৩ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন হতে পারে বৃহস্পতিবার  দশম গ্রেড দাবিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে শিক্ষকদের অবস্থান 

কারমাইকেল কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, ফলাফল আটকে রাখা হয়েছে কেন তা তারা বুঝতে পারছেন না। তাদের পরিচিত সহপাঠী অনেকে এমন সমস্যায় পড়েছেন। কলেজ কর্তৃপক্ষও বিষয়টি নিয়ে কিছু জানে না। এ নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় ভুগছেন।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. এনামুল করিম ও অতিরিক্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মো. ফরিদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এ বিষয়ে জানেন না বলে জানান। একই সঙ্গে তারা দুজনই উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আব্দুস সামাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।

জানতে চাইলে উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আব্দুস সামাদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘এমন সমস্যার কথা আমিও শুনেছি। ভিক্টোরিয়া কলেজের ৩০০ জনের বেশি পরীক্ষার্থীর নাকি এমন ফল দেখানো হচ্ছে। হয়তো আরও অভিযোগ আছে। রেজাল্ট পুরোটা সফটওয়্যারে তৈরি। পুনরায় এটা দেখে জানাতে হবে।’

যাদের এমন সমস্যা আসছে তাদের করণীয় কী, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এখন পারিবারিক কারণে দুদিনের ছুটিতে আছি। খুব বেশি কিছু জানি না। আগামী রোববার অফিসে গিয়ে অন্য সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি স্পষ্ট করতে পারবো।’

ফল পুনর্মূল্যায়ন ‘গলাকাটা’ ফি

ফল প্রকাশের দিনেই প্রকাশিত ফলাফল পুনর্মূল্যায়নের জন্য শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন জানিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাতে বলা হয়েছে, নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে পরীক্ষার্থীরা তার উত্তরপত্র পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করতে পারবেন। প্রতিপত্রের জন্য ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার টাকা। আজ ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে অনলাইনে এ আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যা চলবে ৬ মার্চ পর্যন্ত।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, যেখানে ডিগ্রি পাস কোর্সে নিয়মিত ও অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য ফরম পূরণের ফি মোট ৮০০ টাকা, সেখানে উত্তরপত্র পুনর্মূল্যায়নে প্রতি পত্রের জন্য ১ হাজার টাকা ফি নির্ধারণ করাটা গলাকাটার মতো। অস্বাভাবিক হারে ফি আদায়ের মাধ্যমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় মূলত ব্যবসা করতে চায়। এ কারণে ইচ্ছাকৃতভাবে ত্রুটিপূর্ণ ফলাফল দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ পরীক্ষার্থীদের।

যশোরের এমএম কলেজের রিয়াজুল ইসলাম নামে একজন পরীক্ষার্থী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি নিয়মিত শিক্ষার্থী। সবগুলো সাবজেক্টে পরীক্ষা দিতে আমরা ফি দিয়েছি ৮০০ টাকা করে। অথচ এখন প্রত্যেকপত্রের উত্তরপত্র পুনর্মূল্যায়নে ১০০০ টাকা করে ফি গুনতে হবে। এটা হঠকারিতা ছাড়া কিছুই নয়।’

পুনর্মূল্যায়নে অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অতিরিক্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কেউই মন্তব্য করতে রাজি হননি। ‘বিষয়টি আগেও এমন ছিল’ বলে দাবি করেন তারা।

এএএইচ/এমআরএম/জিকেএস