সিলেটের এমসি কলেজে ধর্মভিত্তিক সংগঠন আনজুমানে আল ইসলাহ’র এক ছাত্রনেতার ওপর শিবির কর্মীদের হামলার দায় স্বীকার করে আপসের মাধ্যমে ঘটনাটি সমাধান করেছে জামায়াতে ইসলামী। একইসঙ্গে এ ঘটনার সঙ্গে ছাত্রশিবিরের কিছু কর্মী জড়িত রয়েছে বলেও জানিয়েছেন দলটির সিলেট মহানগরের আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম।
Advertisement
রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় আনজুমানে আল ইসলাহ’র সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর এক সমঝোতা বৈঠক শেষে তিনি একথা বলেন। তবে সিলেট মহানগরের আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলামের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে সিলেট মহানগর ছাত্রশিবির। অবিলম্বে এ বক্তব্য প্রত্যাহারের জন্য আহ্বান জানিয়েছে শিবির। রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টার দিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই প্রতিবাদ জানানো হয়।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত মধ্যরাতে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ তোলেন মিজানুর রহমান রিয়াদ নামে এক শিক্ষার্থী। রিয়াদ এমসি কলেজের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ও আনজুমানে আল ইসলাহ’র ছাত্র সংগঠন তালামীযে ইসলামিয়ার সহ তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক। এ ঘটনার পর থেকে বিষয়টি দেশজুড়ে আলোচনায় আসে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আপস বৈঠকে বসে জামায়াত ও আল ইসলাহ।
রোববার সন্ধ্যায় এমসি কলেজের ঘটনায় নগরীর একটি প্রতিষ্ঠানে বৈঠকে বসে জামায়াতে ইসলামী ও আল ইসলাহ। সভায় সংঘটিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার ব্যাপারে নিন্দা জানানো হয় ও দুঃখ প্রকাশ করা হয়। ভবিষ্যতে এই ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেন তারা।
Advertisement
বৈঠক শেষে সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, ফেসবুকে একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে সেখানে (এমসি কলেজে) যে বাড়াবাড়িটুকু হয়েছে, আমাদের দৃষ্টিতে সেখানে ছাত্রশিবিরের কিছুসংখ্যক কর্মী এটার সঙ্গে জড়িত এবং যেটা করেছে সেটা অন্যায়ভাবে করেছে। সেটা দুঃখজনক। আমরা এই ঘটনার নিন্দা জানাই। দুঃখপ্রকাশ করছি।
ফখরুল ইসলাম আরও বলেন, শিবির ও তালামিয দুটিই আমাদের ভালোবাসার সংগঠন। এই দুটি সংগঠনের মধ্যে এমসি কলেজে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে আমরা বসেছিলাম। আমরা পরস্পরই ইসলামী সংগঠন, আমরা দেশ ও জাতির ভালো চাই। নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হলে বিরোধীপক্ষ উপকৃত হবে। ভবিষ্যতে আর কোনো এ ধরনের ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হলে আমরা পরস্পর বসে এ ব্যাপারে মীমাংসার দিকে যাবো। কোনো কর্মীও যেন বাড়াবাড়ি না করে।
মতবিনিময় সভায় জামায়াত নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান এবং জেলা জামায়াত নেতা ও সাবেক দক্ষিণ সুরমা উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা লোকমান আহমদ।
অন্যদিকে আনজুমানে আল ইসলাহ নেতৃবৃন্দের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা রেদওয়ান আহমদ চৌধুরী ফুলতলী, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, অ্যাডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকীব, হাফিজ নাজমুল হুদা, মাওলানা জৈন উদ্দিন ও কাজী বুরহান উদ্দিন প্রমুখ।
Advertisement
ছাত্রশিবিরের প্রতিবাদ
এদিকে সিলেট এমসি কলেজের ঘটনায় আপস বৈঠক শেষে সিলেট মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমিরের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন সিলেট মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি শাহীন আহমদ ও সেক্রেটারি শহিদুল ইসলাম সাজু।
এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘সিলেটের এমসি কলেজে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক দ্বন্দ্বে হাতাহাতির ঘটনায় কয়েকজন আহত হন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু স্থানীয় রাজনৈতিক মহল ফায়দা হাসিল করতে ছাত্রশিবিরের ওপর দায় চাপিয়ে আসছে। রোববার সন্ধ্যায় সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির ফখরুল ইসলামের প্রদত্ত একটি বক্তব্য আমাদের নজরে আসে। আমরা তার এই বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক দ্বন্দ্বকে সংঘবদ্ধ অপপ্রচারের মাধ্যমে ছাত্রশিবিরে ওপর দায় দিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা ইতোমধ্যে দেশবাসীর দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সিলেট মহানগর জামায়াতের আমিরও এই অপপ্রচার দ্বারা বিভ্রান্ত হয়েছেন বলে আমরা মনে করছি। আমরা অবিলম্বে এ বক্তব্য প্রত্যাহারের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’
আহমেদ জামিল/এফএ/এএসএম