দেশজুড়ে

সবই আছে, নেই শুধু চিকিৎসক

 

* চিকিৎসক সংকটে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা* সামান্য সার্জারির জন্যও বরিশাল যেতে হয় রোগীদের* ৫০ শয্যার হাসপাতাল চলছে ৩১ শয্যার জনবলে

Advertisement

বরিশালে বাবুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আলোর মুখ দেখেনি অপারেশন থিয়েটার। দীর্ঘদিন ধরে সার্জারি ও এনেস্থেশিয়া চিকিৎসক না থাকায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির অপারেশন থিয়েটারে তালা ঝুলছে। পাশাপাশি চরম চিকিৎসক সংকটে ব্যাহত হচ্ছে উপজেলার লাখো মানুষের স্বাস্থ্যসেবা। ফলে বাধ্য হয়ে রোগীদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হচ্ছে বরিশাল সদরে।

জানা যায়, উপজেলার প্রায় লাখো মানুষ এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া প্রতিদিন গড়ে ২৫০ জনের অধিক রোগী চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে। তবে বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন- নির্মাণকাজ শেষেও চালু হচ্ছে না নড়িয়ার আধুনিক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংকটেও শতভাগ সেবায় মোংলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স দেশসেরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অর্ধযুগ ধরে নেই চক্ষু চিকিৎসক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠার ৪৯ বছর পর হলো প্রথম সিজার

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগের ৩১ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। বর্তমানে সেখানে ৯ জন চিকিৎসকের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র ২ জন চিকিৎসক, একজন ডেন্টাল সার্জন ও মেডিকেল অফিসার। এছাড়া জুনিয়র কনসালটেন্ট মেডিসিন, জুনিয়র কনসালটেন্ট গাইনি, এনেস্থেশিয়া, সার্জারি, ইএনটি বিশেষজ্ঞ, শিশু বিশেষজ্ঞ, অর্থোপেডিকস, চক্ষু, চর্ম, রেডিওগ্রাফি, ফিজিওথেরাপিসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের চিকিৎসক নেই। ফলে চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না উপজেলাবাসী।

Advertisement

“অনেকে ঝামেলার কারণে বরিশাল গিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে সেখানেই পরীক্ষা নিরীক্ষা করায়। এতে আর্থিকভাবে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির সিনিয়র স্টাফ নার্স তামিমা জাগো নিউজকে জানান, অপারেশন থিয়েটারটিতে সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত যন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসকের অভাবে এটি চালু করা যাচ্ছে না। মাঝে মাঝে সার্জারি চিকিৎসক থাকলে এনেস্থেশিয়া চিকিৎসক থাকে না, আবার মাঝে মাঝে এনেস্থেশিয়া চিকিৎসক থাকলে সার্জারি চিকিৎসক থাকে না। ফলে সামান্য সার্জারির জন্যও রোগীদের বরিশাল যেতে হয়।

স্থানীয়রা জানান, যেখানে ৯ জন চিকিৎসক থাকার কথা, সেখানে ২ জন চিকিৎসক দিয়ে পুরো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি চালানো হচ্ছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেখে আসছি অপারেশন থিয়েটারটি বন্ধ। ডাক্তার না থাকার কারণে ওই রুমটির ভেতরের মালামাল নষ্ট হচ্ছে। এজন্য সরকারের সুদিৃষ্টি কামনা করে অচিরেই অপারেশন থিয়েটার চালু ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন তারা।

ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন দেহেরগতি ইউনিয়নের বাসিন্দা ছাইদুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির সব বিভাগে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া দরকার। অন্যথায় সবার পক্ষে খরচ দিয়ে বরিশালে গিয়ে চিকিৎসা করানো সম্ভব না।

Advertisement

আরেক রোগী ছালাম বলেন, এখানে সব রোগের চিকিৎসা হয় না। এমনকি পরীক্ষা নিরীক্ষাও হয় না। তবে যতটুকু সেবা দেওয়া হয় তা মানসম্মত। অনেকে ঝামেলার কারণে বরিশাল গিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে সেখানেই পরীক্ষা নিরীক্ষা করায়। এতে আর্থিকভাবে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

“একটি অপারেশন থিয়েটার চালু করতে হলে একজন সার্জারি চিকিৎসক ও একজন এনেস্থেশিয়া চিকিৎসক প্রয়োজন। কিন্তু এখানে দুইজনের একজনও নেই।”

বাবুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুবাস সরকার জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের এখানে ৯ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ২ জন। এখানে শুধু চিকিৎসক সংকট নয়, ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি সেই ৩১ শয্যার জনবল দিয়েই চলছে। ফলে আশানুরূপ চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তারা ব্যবস্থা নিলে এ সংকট দূর হবে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অপারেশন থিয়েটার বন্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, একটি অপারেশন থিয়েটার চালু করতে হলে একজন সার্জারি চিকিৎসক ও একজন এনেস্থেশিয়া চিকিৎসক প্রয়োজন। কিন্তু এখানে দুইজনের একজনও নেই। ফলে অপারেশন থিয়েটারটি বন্ধ রয়েছে। অপারেশন থিয়েটারটি চালুর বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।

এফএ/জেআইএম